৬৫ ঘণ্টা জেরা, পুকুরে ফোন, তৃণমূল বিধায়ক গ্রেপ্তার
১৭ এপ্রিল ২০২৩এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দুই সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য। এবার গ্রেপ্তার হলেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ। তাকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে রীতিমতো নাটক হয়েছে।
এর আগে হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেপ্তার করে জেরা করার সময় বেশ কিছু এজেন্টের নাম জানতে পারেন সিবিআই তদন্তকারীরা। তার মধ্যে একজন হলো বড়ঞার বাসিন্দা কৌশিক ঘোষ। সেই সূত্র ধরেই জীবনকৃষ্ণের নাম উঠে আসে।
গত শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ ছয়জন সিবিআই কর্মকর্তা জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে যান। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। চলে তল্লাশি। ৬৫ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চলে। তারপর সোমবার ভোর পাঁচটা নাগাদ বিধায়ককে গ্রেপ্তার করে সিবিআই।
তার আগে শুক্রবারই উদ্ধার হয় বেশ কিছু নথি, হার্ডডিস্ক ও প্রিন্টার। সিবিআই তার শ্বশুর সেন্টু সাহার বাড়িতেও তল্লাশি শুরু করে। নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডলের বাড়িতেও সিবিআই গিয়েছিল। কিন্তু তিনি বাড়ি ছিলেন না। তাই আধিকারিকেরা তল্লাশি করতে পারেননি।
মোবাইল পুকুরে
জীবনকৃষ্ণকে নিয়ে নাটক চরমে ওঠে শুক্রবার বেলা তিনটে নাগাদ। সেসময় শরীর খারাপের কথা বলে বিধায়ক বাথরুম যেতে চান। তারপর বাড়ির ছাদে উঠে তিনি তার দুইটি মোবাইল উত্তরদিকের পুকুরের জলে ফেলে দেন বলে অভিযোগ।
এরপর তার মোবাইলের খোঁজ শুরু হয়। মেটাল ডিটেক্টর আনা হয়। সেই তল্লাশি রাত পর্যন্ত চলতে থাকে। বিধায়ক কেন একাজ করলেন, তা জানতে চান তদন্তকারীরা। রাত সাড়ে এগারোটা থেকে শুরু হয়, পুকুরের জল তুলে ফেলার কাজ।
শনিবার সকালে সিবিআই আধিকারিকেরা জানতে পারেন, শুধু দুইটি মোবাইল নয়, একটি পেনড্রাইভ, একটি হার্ডডিস্কও পুকুরের জলে ফেলা হয়েছে। এরপর আরো দুইটি পাম্প দিয়ে জল পুরোপুরি তুলে ফেলার কাজ শুরু হয়। আরো কয়েকটি মেটাল ডিটেক্টর আনা হয়। শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ কী করে পুকুরে মোবাইল ফেললেন বিধায়ক, সেই ঘটনার পুনর্নিমাণ শুরু করে সিবিআই। এই সব যখন চলছে, তখন বিধায়কের স্ত্রীর সিঁদুরের কৌটো থেকে উদ্ধার হয় মেমরি কার্ড।
পুকুরের জল পুরোপুরি ছেঁচে ফেলে মোবাইলের খোঁজ চলতে থাকে। স্থানীয় মানুষ কাদায় নেমে মোবাইল খুঁজতে থাকেন। প্রথমে তা পাওয়া যাচ্ছিল না। ৩২ ঘণ্টা পরে কাদার মধ্যে থেকে একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। বিধায়ক তা চিহ্নিত করেন। তবে সিবিআই মনে করছে, ওই মোবাইলটি বিধায়কের স্ত্রীর। অন্য মোবাইলের খোঁজ চলছে।
এদিকে শনিবার দুপুরে জীবনকৃষ্ণের বাড়ির পিছন থেকে ছয়টি বস্তায় রাখা প্রচুর নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে তিন হাজার চারশ চাকরিপ্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড ও রোল নম্বর সংক্রান্ত তথ্য আছে। জীবনকৃষ্ণের কম্পিউটার ও নোটপ্যাড পরীক্ষা করে দেখা হয়।
রোববার বিকেলে মাটি কাটার যন্ত্র ও ট্র্যাক্টর নিয়ে খোঁজ শুরু হয়।
রোববার রাতে সিবিআইয়ের বিশেষ দল বিধায়কের বাড়িতে আসে। ভোর পাঁচটা নাগাদ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে তাকে নিয়ে সিবিআইয়ের পাঁচটি কনভয় চলে যায় দুর্গাপুরে।
স্পিকারকে না জানিয়ে
জীবনকৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করার আগে সিবিআই স্পিকারকে জানায়নি। এর আগেও স্পিকারকে না জানিয়ে পার্থ, মানিকদের গ্রেপ্তার করে সিবিআই। এনিয়ে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সিবিআই ও ইডির কর্মকর্তাদের বিধানসভায় ডেকেও পাঠিয়েছিলেন।
স্পিকার জানিয়েছেন, তাকে সিবিআই এখনো কিছু জানায়নি। তার আশা, রিসিভিং দপ্তরে সিবিআই গ্রেপ্তারির কথা জানিয়ে দেবে।
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, আনন্দবাজার)