1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৭১-এর গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে পারবে বাংলাদেশ?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ মার্চ ২০২২

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও ১৯৭১ সালের পুরো ৯ মাসে বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার এখনো সুযোগ আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷ এরজন্য দরকার যথাযথ উদ্যোগ৷

https://p.dw.com/p/4933X
রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের লাশ পড়ে আছে৷ ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ছবিটি তোলেন ফটোগ্রাফার এনামুল হক৷ ছবি: Journey/A. Hoque

সরকার বলছে, এই স্বীকৃতি পেতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷

২০১৭ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷ কিন্তু ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করায় ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ের এখন আর সম্ভব নয় বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির৷ তবে তিনি মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে বাংলাদেশে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার স্বীকৃতি আদায় সম্ভব৷ এজন্য প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক এবং ধারাবাহিক উদ্যোগ৷

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী৷ ওই এক রাতেই ৫০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়৷  ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙালি শহিদ হন৷ দুই লাখ নারী নিপীড়ন, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হন৷

কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরেও সেই গণহত্যার কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি৷ ফলে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা গেলেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ জনকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি৷ আর এখনো পাকিস্তান দাবি করে যে, তারা বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা চালায়নি৷ অন্যদিকে যাতে গণহত্যা বন্ধ হয় তার জন্যও এই স্বীকৃতি প্রয়োজন৷

বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ আমরা সেরকম দেখছি না: শাহরিয়ার কবির

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আমাদের এখন বিভিন্ন দেশের সংসদে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পাস করাতে হবে৷ এরপর জাতিসংঘে এটা নিয়ে এগোতে হবে৷ আর এজন্য সরকার, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিভিন্ন সংগঠনকে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে৷ এটা করতে গেলে পাকিস্তান তো আছেই, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসব দেশ বিরোধী অবস্থানে ছিল, তাদের বিরোধিতার মুখোমুখি হবে৷ সেটা কাটানোর জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন সুইডেনে কথা বলেছি, তখন সেখানকার পার্লামেন্টেরিয়ানরা বলেছেন, আমরা প্রস্তুত আছি আমাদের সংসদে পাস করতে৷ কিন্তুতোমাদের সরকার কি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? অ্যাপ্রোচ করেছে?’’

রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে অ্যামেরিকা৷ জাতিসংঘের কফি আনান কমিশন তো ওটাকে এথনিক ক্লিনজিং বলেছে৷ কিন্তু তার চেয়ে তো শতভাগ বেশি গণহত্যা হয়েছে বাংলাদেশে৷ মার্কিন পত্রপত্রিকায়ই তার প্রতিবেদন আছে৷ তখনকার সিনেটর, কংগ্রেসম্যানদের বক্তব্য আছে৷  কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এব্যাপারে উদ্যোগ কোথায়? প্রশ্ন করেন শাহরিয়ার কবির৷ তিনি বলেন, ‘‘গণহত্যা নিয়ে সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘জেনোসাইড ওয়াচ’তো বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে৷ তারা জাতিসংঘকে চিঠি দিয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ আমরা সেরকম দেখছি না৷ জাতীয়ভাবে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতেই আমাদের ২০১৭ সাল পর্যন্ত লেগেছে৷’’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী মনে করেন, ‘‘এই গণহত্যার স্বীকৃতি পেতে সরকারের উদ্যোগ এবং প্রস্তুতি জরুরি৷ আমরা সংখ্যার হিসাব করছি৷ কিন্তু গণহত্যার শিকার বাঙালিদের তথ্য প্রমাণ কম সংগ্রহ করছি৷ হয়ত আমরা সারাদেশে গণহত্যার ছবি বা ভিডিও তত পাবো না৷ কিন্তু তথ্য প্রমাণতো আছে৷ সেই তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে ডকুমেন্ট তৈরি করা প্রয়োজন৷ এরপর পর যে পদ্ধতিতে জাতিসংঘে আবেদন করতে হয় সেভাবে করতে হবে৷ এরকম উদ্যোগ আমি দেখিনি৷’’

আমার কাছে গণহত্যার শিকার কয়েক হাজার মানুষের ডকুমেন্টেশন আছে: আফসান চৌধুরী

তার কথা, ‘‘আমি তো বাংলাদেশে গণহত্যা নিয়ে কাজ করছি৷ আমার কাছে তো গণহত্যার শিকার কয়েক হাজার মানুষের ডকুমেন্টেশন আছে৷ এটা সারাদেশে এখনো করা সম্ভব৷ সেটা করা উচিত৷’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্ট্যাডিজ-এর পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘‘রুয়ান্ডার গণহত্যার ব্যাপারে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে৷ আমরা সেই প্রক্রিয়ায় এগোতে পারি৷ আবার ৯ ডিসেম্বরকে ২০১৫ সালে যে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সেটা ওইদিনে কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়৷ সার্বিকভাবে দেয়া হয়েছে৷ তাই ওই দিনটাকে ২৫ মার্চ দিয়ে রিপ্লেস করার আবেদনও আমরা করতে পারি৷ তবে আমাদের মাথায় রাখতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কয়েকটি বড় বড় দেশ আমাদের গণহত্যাকে গণহত্যা বলে মনে করেনা৷’’

তার কথা, ‘‘সরকার বলছে তারা নানা উদ্যোগ নিচ্ছে৷ সেটা যত জোরদার এবং দ্রুত হয় ততই ভালো৷’’

আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দাবি করেন, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশ সরকার অনেক কাজ করছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চিঠি দিচ্ছি৷ বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলো কাজ করছে৷ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা সভা সেমিনার করছি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য