জার্মানিতে আয়কর
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬বাংলাদেশ বা ভারতের মতো জার্মানিতেও প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্স সিস্টেম চালু৷ ক্রমবর্ধিষ্ণু কর ব্যবস্থায় আয় যত বেশি হবে, করের পরিমাণও বাড়বে সেই অনুপাতে৷ হালে জার্মানিতে শূন্য থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হতে পারে৷ ২০১৬ সালের কথাই ধরা যাক৷
বর্তমানে জার্মানিতে একক ব্যক্তিদের জন্য ৮,৬৫২ ইউরো, অথবা বিবাহিত দম্পতিদের জন্য ১৭,৩০৪ ইউরো অবধি আয় করমুক্ত৷ পরের স্ল্যাব, অর্থাৎ একক ৫৩,৬৬৫ ইউরো/দম্পতি ১০৭,৩৩০ ইউরো অবধি আয়কর বাড়ে ক্রমবর্ধিষ্ণু হারে ১৪ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত৷ পরের স্ল্যাবে একক ২৫৪,৪৪৬ ইউরো/দম্পতি ৫০৮,৮৯২ ইউরো অবধি আয়কর ধার্য হয় ৪২ শতাংশ৷ তার ওপরে করের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ শতাংশ, আয় যতই হোক না কেন৷ গোটা আয়ের ওপরে বসে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ‘সলিড্যারিটি সার্চার্জ' বা সংহতি অধিশুল্ক, সাবেক পূর্ব জার্মানিকে পশ্চিমাঞ্চলের পর্যায়ে উন্নীত করার উদ্দেশ্যে যা চালু করা হয়েছিল৷
‘ট্যাক্সেবল ইনকাম', অর্থাৎ আয়ের যে অংশের ওপর কর বসে, তা নিরূপণ করার জন্য মোট আয় থেকে কিছু কিছু আইটেম বাদ দেওয়া হয়, যেমন ১৮ বছরের নীচে সন্তানদের খোরপোশের দরুণ একটি থোক পরিমাণ; অথবা স্বাস্থ্য, পেনশন, বেকারত্ব ও বার্ধক্য বা অসুস্থতা জনিত দীর্ঘমেয়াদি বীমার প্রিমিয়ামের খরচ ইত্যাদি৷
কর আদায়
জার্মানিতে সরকারের পক্ষে কর আদায় করা সোজা, কেননা ‘লোনস্টয়ার' বা ‘ওয়েজ ট্যাক্স', অর্থাৎ বেতন বা পারিশ্রমিকের উপর কর মালিক বা নিয়োগকারী সংস্থাই বেতন দেবার সময় কেটে রাখে ও কর বিভাগে পাঠিয়ে দেয়৷ বাকি সমস্ত উৎস থেকে আয় বাৎসরিক ‘ট্যাক্স রিটার্ন' পেশ করার সময় দেখাতে হয়; একে বলা হয় ‘আইনকমেন্সশ্টয়ার' বা ‘ইনকাম ট্যাক্স', অর্থাৎ আয়কর৷ মনে রাখতে হবে, জার্মান সরকারের মোট রেভেনিউ-এর এক-তৃতীয়াংশ আসে এই আয়কর থেকে৷
আগের বছর নির্ধারিত করের পরিমাণ অনুযায়ী পরের বছরের প্রি-পেমেন্ট, মানে আগাম কর দিতে হয় প্রতি তিন মাস অন্তর চার থোকে, ১০ই মার্চ, ১০ই জুন, ১০ই সেপ্টেম্বর ও ১০ই ডিসেম্বর তারিখে৷ পরে ট্যাক্স রিটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে সেই আগাম দেওয়া করের একাংশ ফেরৎ দেওয়া হয় কিংবা বকেয়া পরিমাণ দাবি করা হয়৷
কর ফাঁকি
জার্মানিতে বাঁধা মাইনের চাকুরেদের কর ফাঁকি দেওয়া সুযোগ বিশেষ নেই৷ এখানকার অফিস-কাছারির অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট সমৃদ্ধ, উন্নত দেশসুলভ দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করে থাকে৷ সরকারি কর বিভাগের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য৷ জনসংখ্যা মোটামুটি স্থিতিশীল রেখে, একটানা উৎপাদন ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে, সাধারণ জীবনযাত্রার সংস্থান ও মানকে এরা সমৃদ্ধির এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যেখানে ব্যক্তি বা সরকার পর্যায়ে একক দুর্নীতি বিরল বলা চলে৷ আয়করের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷
সফল ও বিত্তশালীদের মধ্যে যারা মাঝে মধ্যে ‘কোনো কোনো বছরে' তাদের আয়ের ‘কোনো কোনো অংশ' ট্যাক্স রিটার্নের মাধ্যমে কর বিভাগকে জানাতে ‘ভুলে যান', তাদের জন্য রয়েছে ‘ভলান্টারি ডিসক্লোজার', অর্থাৎ নিজে থেকেই ত্রুটিস্বীকার৷ অবশ্য কর বিভাগের টনক নড়ার আগেই সেটা করতে হবে, তবেই বিচারবিভাগীয় সাজার বদলে শুধুমাত্র বকেয়া কর ও সুদ দিয়ে ছাড় পাওয়া যাবে৷
মজা হলো এই যে, বাংলাদেশ বা ভারতে সর্বোচ্চ স্ল্যাবের কর যেখানে ২৫ বা ৩০ শতাংশ ছাড়ায় না, জার্মানিতে কিন্তু সেই সর্বোচ্চ কর ৪৫ শতাংশ৷ কাজেই যাদের আয় বিপুল, তারাই কর ফাঁকি দেওয়ার প্রলোভনে পড়েন৷ বাড়তি আয় গোপন করার যতোরকম পন্থা আছে – যেমন বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখা, দ্বীপান্তরে লেটারবক্স সম্বল কোম্পানি খুলে টাকা পাচার করা – এক শ্রেণির জার্মানরা এ সবই করে থাকেন৷
আপাতত এতে বাদ সাধছে সিডি-তে স্টোর করা চোরাই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চোরাই তথ্য, যা মাঝেমধ্যেই জার্মানির প্রাদেশিক অর্থ বিভাগগুলিকে অফার করা হয়ে থাকে, অবশ্যই নগদ মূল্যে৷ তবে বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস, সাবেক টেনিস তারকা বরিস বেকার, কিংবা ডয়চে পোস্টে-র সাবেক সিইও সুমভিংকেল, এদের সকলেই আয়করের জাল থেকে কিছুদিন পালিয়ে থাকতে পেরেছেন বটে, কিন্তু শেষমেষ ধরা দিতে বাধ্য হয়েছেন৷
বন্ধু, অরুণ শঙ্কর চৌধুরীর এই ব্লগটি আপনার কেমন লাগলো? লিখুন আমাদের, নীচের ঘরে৷