অজানা পোকার জটিল বংশবৃদ্ধি প্রক্রিয়া
৮ ডিসেম্বর ২০১৪আট পায়ের পোকাটিকে দেখলে মাকড়সা মনে হবে৷ তবে শরীরটা আঁটুলি পোকার মতো৷ কিন্তু ‘হার্ভেস্টমেন' গোত্রের এই পোকাটিকে বেশি লোক চেনে না৷ নাম ফালানগিডে৷ মাকড়সার ভয় থাকলে এটিকে দেখেও ভয় হবে৷ তবে এই পোকার বিষ নেই৷
রাকেউ ভ্যার্নেক ছোট্ট সুন্দর এই প্রাণী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷ ব্রাজিলে বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনার সময়ই এদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল৷ বছর দুয়েক ধরে তিনি জার্মানিতে গবেষণা করছেন৷ ফালানগিডে পোকার বংশবৃদ্ধিই তাঁর বিষয়৷ এই পোকাদের মিলনের সময় ঠিক কী ঘটে, পিএইচডি থিসিসে তা তিনি তুলে ধরতে চান৷ রাকেউ বলেন, ‘‘এই পোকার জননাঙ্গ এই প্রজাতির অন্যান্য জীবের তুলনায় অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ও জটিল৷ এর সঙ্গে হয়ত ‘ন্যাচারেল সিলেকশন প্রসেস'-এর সম্পর্ক রয়েছে৷''
রাকেউ ভ্যার্নেক প্রমাণ করতে চান, দুটি পোকার যৌন মিলন মোটেই সহজ বিষয় নয়৷ একটি পুরুষ পোকা কী ভাবে একটি নারীর সঙ্গে মিলনের চেষ্টা করছিল, তার একটি ভিডিও করা গেছে৷ তাতে দেখা গেছে, কয়েক সেকেন্ড একসঙ্গে থাকার পর নারী পোকাটি চলে গেল৷ শেষ পর্যন্ত কিছুই হলো না৷ পোকার পুরুষাঙ্গের জটিলতাই হয়তো সমস্যা হতে পারে৷ রাকেউ ভ্যার্নেক মনে করেন, এই পোকার জননাঙ্গ মিলনের মতো সহজাত ক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত জটিল৷
বিষয়টি বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করতে তিনি এক থ্রিডি মডেল তৈরি করেছেন৷ রাকেউ বলেন, ‘‘আমরা জানতে চাই, শুধু বীর্য স্থাপন করাই যদি একমাত্র কাজ হয়, সে ক্ষেত্রে এই পোকার পুরুষাঙ্গ এত জটিল কেন৷ এর কারণ হয়ত এক ‘ন্যাচারাল সিলেকশন প্রসেস’৷ পুরুষ পোকাটি হয়ত নারী পোকাটিকে উত্তেজিত করতে পারে৷ তারপর নারী পোকা স্থির করবে কে তার সন্তানের বাবা হবে৷''
এই অনুমান প্রমাণ করে দেখাতে চান রাকেউ ভ্যার্নেক৷ এই লক্ষ্যে তিনি পোকা দুটিকে তাদের মিলনের সময় ‘ফ্রিজ' করেছেন৷ তারপর মাইক্রোস্কোপের নীচে তাদের পর্যবেক্ষণ করে তিনি ফটো তুলেছেন৷ এই ছবি দেখে কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন তিনি৷ রাকেউ বলেন, ‘‘আমরা নারী পোকার জননাঙ্গ খুঁজে পেয়েছি৷ এর সঙ্গে পুরুষ পোকার জননাঙ্গের মাপের হয়ত একটা সম্পর্ক থাকতে পারে৷ পুরুষ পোকা যেখানে তার বীর্য ঢালে, সেই গুরুত্বপূর্ণ অংশ পর্যন্ত অনুসন্ধান করা অত্যন্ত জরুরি৷''
ফালানগিডে পোকা প্রায় যে কোনো পরিবেশেই বেঁচে থাকতে পারে৷ প্রশ্ন হলো, সেই পরিবেশ কি তার বংশবৃদ্ধির উপর প্রভাব রাখে? রাকেউ বলেন, ‘‘জলবায়ু বা পরিবেশ সত্যি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আশেপাশে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং আলোর উপর তারা নির্ভর করে৷ এভাবে নারী পোকা বুঝতে পারে, পরিবেশ ডিম পাড়ার জন্য অনুকূল কিনা৷''
ফালানগিডে পোকা নিয়ে এতকাল তেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি৷ রাকেউ ভ্যার্নেক তাই জার্মানিতে এই গবেষণা চালিয়ে যাবার প্রেরণা পেয়েছিলেন৷ বন-এর প্রাণীবিজ্ঞান মিউজিয়ামে অবশ্য এই পোকার যে সব নমুনা রয়েছে, তাঁর পরীক্ষার নমুনাটি সে তুলনায় অনেক ছোট৷ তবে এই প্রজাতির পোকার বৈচিত্র্য কম নয়৷ ৬,০০০-এরও বেশি প্রকারের ফালানগিডে পোকা রয়েছে৷ রাকেউ ভ্যার্নেক তাদের মধ্যে একটির বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন৷