‘অদ্ভুত আঁধার এক...'
২৯ জানুয়ারি ২০১৭‘‘আমাদের পরিচিত বিংশ শতাব্দীর সেই জগতটা আর নেই'' – কথাগুলো জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ারের, যিনি খুব শিগগিরই জার্মানির প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন৷ তাই কথাগুলো যে তিনি কোনোরকম চিন্তা না করে মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন, সে কথা বোধ হয় বলা যায় না৷ তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, স্টাইনমায়ারের সঙ্গে একেবারে একমত ফ্রান্সের চরম দক্ষিণপন্থি নেত্রী, ন্যাশনাল ফ্রন্টের মারিন ল্য পেন৷
ভুলে গেলে চলবে না, তিনি কিন্তু সেই বিশ্বনেতাদের একজন, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বপ্রথম অভিনন্দন জানিয়েছিলেন৷ ল্য পেনের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে আমরা একটা চেনা পৃথিবীকে শেষ হয়ে যেতে দেখছি আর প্রত্যক্ষ করছি নতুন একটি বিশ্বের জন্মকে৷''
স্টাইনমায়ার এবং ল্য পেনের এই কথাগুলোয় কি আপনি চমকে গেলেন? কিন্তু আপনার পর্যবেক্ষণ কি ঠিক সেই কথাই বলছে না? ব্রেক্সিট আজ এক চরম সত্য৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একের পর এক দেশের চরমপন্থি সরকার এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, ইইউ-র মৌলিক মূল্যবোধের সঙ্গে যা খাপ খায় না৷ ইউরোপের রাজনীতি যেন পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে – ব্রিটেন, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ডে আজ ‘পপুলিজম'-এর জয়জয়কার৷ ফ্রান্সের পাশাপাশি আগামীতে জার্মানিতেও নির্বাচন৷ তাই অন্যান্য দেশের মতো এখানেও যে উগ্রপন্থা উঁকি দেবে না, তার কি কোনো ‘গ্যারান্টি' আছে? কারণ ইতিমধ্যেই যে রাজ্য সংসদে ঢুকেছে ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' দল এএফডি৷
‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা'
তাও যদি শুধু ব্রেক্সিট বা ইইউব্যাপী চরমপন্থার বিকাশ হতো, তা হলেও হয়ত হতো৷ কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির মোড়টাই ঘুড়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প উঠে আসায়৷ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এতদিন সচেষ্ট ছিল অ্যামেরিকা৷ অন্তত কথার কথা হিসেবে সেটা মেনে নেওয়া যাক৷ কিন্তু এবার? ভবিষ্যতে মার্কিনিদের ভূমিকা কী হতে চলেছে, সে কথা ভাবলে চিন্তা হয় বৈকি! যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়াকে পুটিনের রাশিয়ার হাতে এক রকম ছেড়েই দিয়েছে অ্যামেরিকা৷ বরং এখন তাদের দৃষ্টি ইসরায়েলের দিকে৷ আর তাই তো তেল আভিভ থেকে মার্কিন দূতাবাসটি উঠে গিয়ে বসতে চলেছে জেরুজালেমে৷
তার ওপর ইউরোপে ট্রাম্পের বন্ধুর অভাব নেই – ল্য পেন, এএফডি-র ফ্রাউকে পেট্রি অথবা নেদারল্যান্ডসে উগ্র-ডানপন্থি চিন্তার নায়ক গেয়ার্ট ভিল্ডার্স – সকলেই ট্রাম্পের ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' পলিসিকে সমর্থন করেছে৷ আর সেটা তারা করেছে ইউরোপে জাতীয়তাবাদের উত্থানের ইচ্ছা থেকেই৷
অথচ এই ইউরোপকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে অনেক কিছু শিখতে হয়েছিল৷ জোট বাঁধার গুরুত্ব, গণতন্ত্রের বিকাশ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা – এসব কি তাহলে আর এই নতুন পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য নয়? তা নাহলে কীভাবে সম্ভব হলো ব্রেক্সিট অথবা ট্রাম্পের বিজয়?
প্রতিবাদই একমাত্র পথ
তাহলে কি আর আশা নেই? বেঁচে নেই কোনো স্বপ্ন? আছে৷ ওয়াশিংটনকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী ‘ওমেন'স মার্চ'-ই তার উদাহরণ৷ অন্যায়-অবিচার-আঘাতের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ ও মুক্তির পথ এগিয়ে যাওয়াই যে এখন একমাত্র পথ৷ সেখানেই লুকিয়ে আছে আমাদের অস্তিত্ত্বের প্রশ্ন৷ গণতন্ত্রের মন্ত্রে, সমানাধিকারে এখনও যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের যে এছাড়া কোনো পথ নেই৷
ফল্কার ভাগনার/ডিজি
বন্ধু, আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷