অনার কিলিং
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩তুরস্কে অনার কিলিং-এর মত কুপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন নারী অধিকারবাদীরা৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অল্পবয়সী মেয়েরা এই ধরনের নির্মমতার শিকার হন৷ যে সব মেয়ে নিজস্ব সত্তাকে বিলিয়ে দিতে চান না, তাদেরকেই বরণ করতে হয় অনেক সময় এই করুণ পরিণতি৷ সাধারণত আপনজনের হাতেই খুন হন এই সব মেয়ে৷ ঘাতক: স্বামী, বাবা, ভাই৷ কোনো আচরণ পরিবারের সম্মান হানিকর মনে করলে নিজের মেয়ে, বোন বা স্ত্রীকেও খুন করতে দ্বিধা বোধ করেন না কেউ কেউ৷ বিধর্মী কারো প্রেমে পড়া, পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়া বা পরিবারের পছন্দমত বিয়েতে রাজি না হওয়া, এইসব তাদের চোখে মারাত্মক অপরাধ৷ হত্যাকারী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ৷ তবে নারীরাও মাঝে মাঝে সহায়তা করেন এই নিষ্ঠুরতায়৷
নির্যাতনে দায়ী মেয়েরাও
ত্যার দে ফাম-এর মোনিকা মিশেল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে নৃশংসতা শুধু পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, মেয়েরাও এগিয়ে আসেন অনেক সময়৷ অদ্ভুত শোনালেও সত্যি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বর্বরোচিত প্রথাকে টিকিয়ে রাখতে চান মেয়েরাও৷ পছন্দ না হলেও মেয়েকে কারো সাথে বিয়ে দেন মা৷ কিংবা পরিবারের মানহানির নামে অনার কিলিং-এ সায় দেন৷''
তুরস্কে ২০০৫ সাল থেকে অনার কিলিং গুরুতর অপরাধ বলে গণ্য৷ তুরস্কর আইনে অনার কিলিং কথাটা থাকলেও অপরাধীর শাস্তি লঘু করার কোনো সুযোগ নেই৷ এক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বা পারিবারিক কারণ দেখিয়ে পার পাওয়া যায় না৷ অন্তত কাগজে কলমে৷
তুরস্কের নারী অধিকারবাদীরা এই সব অনার কিলিংকে নারী হত্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ এক্ষেত্রে আইনকানুন ঠিকমতো প্রয়োগ করা হয় কিনা, সে ব্যাপারে সন্দিহান তারা৷ স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করলে তাকে হত্যা করাটা যেন গুরুতর কোনো অপরাধ নয়৷ অনেক সময় এই রকম একটা মনোভাব দেখা যায় তুরস্কের বিচার বিভাগের৷
শুধু গত বছরেই ২১৭টি নারী হত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ তিন ভাগের এ ভাগই স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন৷ বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করাটাই ছিল তাদের অপরাধ৷
এক প্ল্যাটফর্মে মিলিত
সম্প্রতি ‘আমরা নারী হত্যা রুখবো' এই নামে একটি প্ল্যাটফর্মে তুরস্কের বহু নারী সংগঠন একত্রিত হয়েছে৷ তাদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি নারী হত্যা রোধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে৷ ‘‘সংসদের অধিকাংশ সদস্যই পুরুষ৷ আর তারাই আইন প্রণয়ন করে থাকেন৷ এটা এমন এক বিষয়, যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধিদের মনঃপূত হওয়ার কথা নয়৷'' বলেন তুরস্কের নারী অধিকারবাদী ও আইনজীবী সিগদেম হাচিসফটাওলু৷
মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'-এর এক সমীক্ষার জানা গেছে, তুরস্কে তিন ভাগের এক ভাগ মেয়ে স্বামীর হাতে নির্যাতিত হন৷ এদের খুব সংখ্যকই কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করে থাকেন৷
সঠিক আইন
বছর খানেক আগে তুরস্কে একটি আইন পাশ হয়েছে, যার মাধ্যমে বিপদে পড়া মেয়েরা নতুন নাম ও পরিচিতি পেতে পারেন৷ নির্যাতক পুরুষদের ক্ষেত্রেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে আইনে৷ যেমন অত্যাচারী স্বামী যাতে স্ত্রীর কাছে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে আইনে৷ তুরস্কের পরিবার মন্ত্রী ফাতমা শাহিন নারী নিগ্রহের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চান৷ এই রাজনীতিবিদের মতে, নারী বৈষম্য বর্ণ বৈষম্যের চেয়েও খারাপ৷
তুরস্কের নারী অধিকারবাদী ও চিত্র পরিচালক মেলেক ওসমান মনে করেন, ‘‘রাজনীতিতে সদিচ্ছা, সঠিক পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত অর্থের বাজেট না থাকলে নারীদের সমানাধিকারের আইনটি তেমন কার্যকরী হবে না৷''
ত্যার দে ফাম-এর মোনিকা মিশেল বলেন, এছাড়া মেয়েদের তাদের অধিকার সম্পর্কে আরো সচেতন করতে হবে৷ নির্যাতিত মেয়েদের জন্য আরো আশ্রয় ও পরামর্শ কেন্দ্রও খোলা প্রয়োজন৷ বর্তমানে তুরস্কে মাত্র ৭৭ টি নারী আশ্রম রয়েছে৷
নারী অধিকার সংগঠনগুলির মতে দেশটিতে কমপক্ষে এই ধরনের ৪০০০ আশ্রয় কেন্দ্র প্রয়োজন৷