অনিশ্চিত পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ?
১০ জুন ২০২১করোনা অতিমারির ফলে দীর্ঘদিন স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ। শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি ভিড় এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। আশা ছিল, পরীক্ষাটা অন্তত হবে। কিন্তু তাতেও কোপ পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, বোর্ডের বড় দুটি পরীক্ষা এ বছর নেওয়া হবে না। দশম-একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা এ বছর পিছিয়ে জুন-জুলাইয়ে করার ভাবনাচিন্তা চলছিল। কিন্তু এরই মধ্যে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। সেক্ষেত্রে কীভাবে হবে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, শিক্ষা দপ্তর সেই পদ্ধতি চূড়ান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। দ্রুত মূল্যায়নের ফর্মুলা সামনে আনা হতে পারে। অর্থাৎ পরীক্ষা নিয়ে দোলাচল কেটে গেলেও জীবনের বড় দুটি পরীক্ষার মার্কশিট কী হবে, তা নিয়ে পড়ুয়া থেকে অভিভাবকরা দোদুল্যমান। ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরী বলেন, "মেধাবী ছাত্রীরা হতাশ হয়ে যাচ্ছে। এদের সংখ্যা ১০-২০ শতাংশ মাত্র। তবে উচ্চমাধ্যমিকের কিছু ছাত্রী জানিয়েছে, এভাবে আমাদের স্কুলজীবন শেষ হল, এটা চাইনি।”
এদিকে কোভিডের আরো ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে নভেম্বর মাস নাগাদ। সেই ঢেউয়ের স্থায়িত্ব বা তার পরবর্তী ঢেউয়ের আগমনের সময় নিশ্চিত নয়। তবে একাধিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, তৃতীয় ঢেউয়ের স্থায়িত্ব তিন মাসের বেশি সময় হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, অতিমারীর জেরে আগামী বছর পরীক্ষা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগে থেকেই মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করলে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শিক্ষক সকলের সুবিধা। তা হলে পরীক্ষা ও তার মূল্যায়ন ঘিরে অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে পড়ুয়ারা।
বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি হিসেবে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের উপর জোর দিচ্ছেন অনেক শিক্ষক। কী এই অ্যাক্টিভিটি টাস্ক? প্রাথমিক স্তরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এই মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু রয়েছে। শিক্ষকরা নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নাবলী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে দিয়ে দেন। বাড়িতে বসে সেই প্রশ্নের উত্তরগুলি অনুশীলন করে পড়ুয়ারা। পরবর্তীতে শিক্ষকেরা তাদের উত্তরপত্র পরীক্ষা করেন। অর্থাৎ হোমওয়ার্কের এক বিধিবদ্ধ রূপ অ্যাক্টিভিটি টাস্ক। শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, ছেলেমেয়েদের এই উত্তরপত্রগুলি পরীক্ষা করা হলেও তাতে নম্বর দেওয়া হয় না। যদি এই উত্তরপত্রের শিক্ষকেরা নিয়মিত নম্বর দেন, তা হলে তার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে বৃহত্তর মূল্যায়নের পরিসর পাওয়া যাবে। সেজন্য নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতেও একইভাবে অ্যাক্টিভিটি টাস্ক শুরু করতে হবে। তাতে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের চূড়ান্ত মূল্যায়ন করতে হবে। যদি কোনো কারণে আগামী বছরও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়, তাহলে অ্যাক্টিভিটি টাস্কে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীরা নম্বর পাবে। এতে কি সকল শিক্ষক-শিক্ষিকারা সহমত?
শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, "অষ্টম শ্রেণীতে প্রাপ্ত নম্বরের ওপর দশম শ্রেণীর নম্বর দেওয়া হাস্যকর। এভাবে কি মূল্যায়ন করা যায়? আসলে ঘুরিয়ে পাসফেল প্রথাই চালু করতে চাইছে সরকার।” দীপান্বিতা রায়চৌধুরী বলেন, "এর থেকে ওপেন বুক এক্সাম পদ্ধতিতে মূল্যায়ন অনেক ভালো। তাতে অন্তত নির্দিষ্ট সময়ে উত্তর খুঁজে লিখতে হবে। বই না পড়া থাকলে জানা সম্ভব হবে না।”
অতিমারীতে শিক্ষাব্যবস্থা না পাল্টে বরং শিক্ষার মাধ্যম পাল্টানো লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল। সেটা অতিমারীর পরে অনেক বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করলে অসুবিধা কোথায় হত? এমনটা মনে করছেন অনেক ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক, অভিভাবক। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছা্ত্র সংগঠনের দেবনীল পাল বলেন, "এতে সমস্যা হবে এই ছাত্রছাত্রীদের। ভবিষ্যতে এই রেজাল্টের কোনো দাম থাকবে না। শিক্ষার দিক থেকে এরা পিছিয়ে যেমন গেল, তেমনি অন্য বছরের প্রতিযোগীদের রেজাল্টের পাশে এদের কোনো গুরুত্বই থাকবে না।”
পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকারকে শিক্ষামহলের বাইরেও কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে। অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য ফেসবুকে লিখেছেন, "যাক, পরীক্ষা টরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে, এবার পুরভোটের দিনক্ষণ ঠিক করা যাক। জাতির অগ্রগতি যেন থেমে না থাকে।”