ভুয়া খবরের সমাধান কী?
১৫ ডিসেম্বর ২০১৬মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর ভুয়া খবরের বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছেন রাজনীতিবিদ, সংবাদগ্রহীতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া উদ্যোক্তারা৷ নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিন্টনের ক্যাম্পেইন চেয়ারম্যান পিৎসা ব্যবসার আড়ালে ‘চাইল্ড সেক্স রিং' চালাচ্ছেন কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন পোপ- এমন কিছু ভুয়া খবর বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷ ধারণা করা হচ্ছে, এসব মিথ্যা তথ্য নির্বাচনের সময় ভোটারদের উপর ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করেছে৷
মনস্তাত্বিকদের একটি দল অবশ্য আগেভাগেই ভুয়া খবরের এ রকম প্রভাবের ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন৷ ২০১২ সালে এক গবেষণায় তারা জানান, ভুয়া তথ্য গণতন্ত্রের উপর উদ্বেগজনক প্রভাব ফেলতে পারে৷ ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলীয় মনোবৈজ্ঞানিক স্টেফেন লেভেনডোভেস্কি এ বিষয়ে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভুল তথ্য ভ্যাক্সিনেশন সম্পর্কে অযথা ভীতি কিংবা বিকল্প ওষুধ সম্পর্কে অযথা বিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারে, যা ক্ষতিকর৷ আর সামাজিক পর্যায়ে রাজনৈতিক ইস্যুতে ধারাবাহিক ভুল তথ্য উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে৷''
ফেসবুক ইতোমধ্যে অবশ্য ভুয়া খবর শনাক্তের একটি ব্যবস্থা করেছে৷ ব্যবহারকারীদের ভুয়া খবর ‘রিপোর্ট' করার ব্যবস্থা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ সাইটটি৷ সেটাকে অবশ্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ মনে করছেন না অনেকেই৷
জার্মান আইনপ্রণেতা পেট্রিক সেন্সবুর্গ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভুয়া সংবাদ প্রকাশকারী এবং সেসব ওয়েবসাইট পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে৷ জার্মানির ডেপুটি চ্যান্সেলর সিগমার গার্বিয়েলও ভুয়া খবর এবং সোশ্যাল মিডিয়া বটের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াবার কথা বলেছেন৷ সেন্সবুর্গ অবশ্য এটাও বলেছেন, ভুয়া সংবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া মানে বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ নয়৷
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে ভুয়া খবর প্রকাশে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷ জার্মানিতে আসন্ন নির্বাচনের সময়ও মস্কো এ ধরনের চেষ্টা করতে পারে বলে জার্মান আইনপ্রণেতাদের সতর্ক করা হয়েছে৷ জার্মান রাজনীতিবিদ আন্সগার হেভেলিং এ বিষয়ে একটি জার্মান দৈনিককে বলেছেন, ‘‘জার্মানির নির্বাচনী ব্যবস্থায় এ ধরনের অনুপ্রবেশ বিপজ্জনক হবে৷ আর আমাদের সমাজে বিভক্তি এবং অস্থিরতা সৃষ্টির একটা আগ্রহ রাশিয়ার রয়েছে৷''
তবে, ভুয়া খবর বা মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে ঠিক কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে আইনপ্রণেতারা তা বিস্তারিত জানাননি৷ মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর উপর ভুয়া তথ্য মুছে ফেলতে আরো চাপ দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তবে ভুয়া সংবাদ প্রকাশের বিষয়টিকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি সম্ভবত সহজ হবে না, কেননা এ ধরনের উদ্যোগের সমালোচনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে৷
ওএসসিই'র গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক মুখপাত্র ডুঙ্গা মিজাটোভিক চলতি মাসের শুরুর দিকে এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে, কারো সোশ্যাল মিডিয়া কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যদি সহিংস কোনো পদক্ষেপের সরাসরি যোগাযোগ না থাকে বা কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া না যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া যাবে না৷ ভুয়া খবরের মতো বিষয়াদি তিনি বরং শিক্ষার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে, কঠোর বিধিনিষেধের মাধ্যমে নয়৷
মার্কিন ‘হুইসেল ব্লোয়ার' এডওয়ার্ড স্নোডেনও মনে করেন, ‘ফেক' বা ভুয়া নিউজ প্রতিরোধে সেন্সরশিপ কোনো সমাধান হতে পারে না৷ বরং মানুষের মধ্যে ‘ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং' বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি৷
লুইস স্যান্ডার্স ফোর/ এআই