কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩গত ৫ই ফেব্রুয়ারি মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন৷ কিন্তু এই রায়ে ক্ষুব্ধ হন দেশের তরুণ এবং সুশীল সমাজ৷ রায় প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির দাবিতে সেদিন রাত থেকেই শুরু হয় আন্দোলন৷ শাহবাগকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ৷ সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে৷ অবশেষে আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ করা হয়৷ কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে আসামি পক্ষের পাশাপাশি ৩রা মার্চ রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করে৷ গত ২৩শে জুলাই আপিলের শুনানি শেষ হয়৷ শুনানি শেষ হওয়ার ৫৪ দিনের মাথায় আপিল বিভাগ রায় দিল৷ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ জন বিচারপতি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে মঙ্গলবার কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ দেন৷ ৫ জন বিচারপতি হলেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. অব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট ৬টি অপরাধ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে৷ এগুলো হল পল্লবি এলাকার গণহত্যা,কবি মেহেরুননিসা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালিব হত্যা, কেরানিগঞ্জের ভাটার চর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকাণ্ড, আলুব্দি গণহত্যা এবং মিরপুরের হযরত আলি পরিবারে গণহত্যা৷ এর সঙ্গে লুটতরাজ, ধর্ষণ এবং ধ্বংসযজ্ঞের অভিযোগও আছে৷
এই মামলার আপিলে আদালত দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য ছাড়াও স্বপ্রনোদিত হয়ে দেশের ৬ জন বিশিষ্ট আইনজীবীর মতামত নিয়েছেন৷
রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এই রায় ঐতিহাসিক এবং এর মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ এই রায় একই সঙ্গে জনপ্রত্যাশা পূরণ করেছে৷ তিনি বলেন, কাদের মোল্লার যে অপরাধ তাতে মৃত্যুদণ্ডই তার প্রাপ্য শাস্তি৷
কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এই রায়কে ন্যায়বিচারের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, এই রায়ে তারা ক্ষুব্ধ এবং বিস্মিত৷ পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করা হবে বলে জানান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক৷ তবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এই রায়ের ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই৷ আইন অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে এই রায় কার্যকর হবে৷
রায় ঘোষণার পর আলুব্দি গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সেই ঘটনায় আহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমির হোসেন মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে৷ তিনি জানান, আগের রায়ে তিনি হতাশ হলেও এবার তিনি সন্তুষ্ট৷ আলুব্দি গণহত্যার সময় তিনি আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও তার ৬ জন আত্মীয় শহীদ হয়েছেন৷ এই মামলার আরেক সাক্ষী শহীদুল হক মামা বলেন, ৪২ বছর পর তার হতাশা কেটে গেছে৷ তিনি ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর প্রবাস জীবনের পাট চুকিয়ে দেশে ফিরে আসেন৷
এদিকে এই রায়ের শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ আবার সেখানে অবস্থান নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে৷ গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায়ই তাঁরা প্রত্যাশা করেছিলেন৷ তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে৷
এদিকে ক্ষমতাসীন ১৪ দল আনুষ্ঠানিকভাবে এই রায়ের সন্তোষ প্রকাশ করলেও বিরোধী দল বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷ আর জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা রায়ের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে৷