অভিজিৎ হত্যার একবছর
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬গত বছরের ২৬শে ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বের হন রাত ন'টার সময়৷ তাঁরা পায়ে হেঁটে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলেন৷ কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-র উল্টো পাশে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের মূল গেটের উত্তর দিকে পৌঁছালে দুর্বত্তরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়৷ দুবৃত্তদের ধারল অস্ত্রের আঘাতে অভিজিৎ নিহত হন আর তাঁর স্ত্রী বন্যা গুরুতর আহত হন৷ এরপর কিছুটা সুস্থ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান বন্যা৷
প্রথমে এই মামলাটির তদন্ত শুরু করে শাহবাগ থানা পুলিশ৷ তবে কয়েকদির পরই মামলার তদন্তভার এসে পড়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ওপর৷ মামলাটির তদন্তের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন ডিএমপি-র কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই মামলায় আটজনকে আটক করা হয়েছে৷ আর আলামত রয়েছে ১১ ধরনের৷ কিন্তু মামলায় নির্ভর করার মতো কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বা সাক্ষী পাওয়া যায়নি৷ এছাড়া এ মুহূর্তে মামলাটির তদন্ত প্রক্রিয়া বলতে গেলে থেমেই আছে৷ কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলামতের ফরেনসিক রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি৷ ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর আটক আটজনের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে তা মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, আসলেই তারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিনা৷''
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে আরো জানান, ‘‘আমরা যে আটজনকে আটক করেছি, তাদের নানা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই আটক করা হয়েছে৷ তাছাড়া আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যে, অভিজিৎ হত্যার সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত৷ আটক ব্যক্তিরা সেই টিমেরই সদস্য৷ আটককৃতরা এখনো হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি, এটা ঠিক৷ তবে তাদের আগের রেকর্ড থেকে আমরা ধারণা করেছি যে, তারা কোনো না কোনোভাবে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত৷ অবশ্য সরাসরি জড়িত কিনা, তা নিশ্চিত হতেই ফরেনসিক রিপোর্ট লাগবে৷''
তিনি জানান, ‘‘আমরা মোট ১১ ধরনের আলামত পেয়েছি৷ আর সমস্ত আলামতই যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই-এর ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছি আদালতের অনুমতি নিয়ে৷ এ সব আলামতের বেশ কিছু অবিকল অবস্থায় নেই, অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে মিশে গেছে৷ তবে আমরা একটা ‘ব্যাকপ্যাক' পেয়েছি, যেটা অবিকল আছে৷ আশা করছি ফরেনসিক পরীক্ষায় তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে৷''
তদন্তকারী সংস্থার এই কর্মকর্তা আরো জানান, ‘‘অভিজিৎ হত্যায় সাক্ষী হিসেবে কাজে লাগানোর মতো কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি৷ যে দু-একজনকে পাওয়া গেছে তারা অপরাধীদের চেহারার বর্ণনা দিতে পারেননি৷ খুব অল্প সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দুবৃত্তরা পালিয়ে যাওয়াতেই এ রকম হয়েছে৷''
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা দেশে থাকা অবস্থায় অভিজিতের আহত স্ত্রী বন্যার জবানবন্দি নিয়েছি৷ তবে তিনি ঐ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কারুর চেহারা মনে রাখার মতো অস্থায় ছিলেন না বলেই আমাদের জানিয়েছেন৷ তাছাড়া অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়ের সঙ্গে কথা বলে আমরা জেনেছি যে, তিনি মনে করেন লেখালেখির কারণেই অভিজিৎকে হত্যা করা হয়েছে৷ কিন্তু সুনির্দষ্টভাবে তিনিও কাউকে সন্দেহ করছেন না৷''
এই হত্যা মামলার তদন্তে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সহযোগিতা দিচ্ছে শুরু থেকেই৷ তাদের সহযোগিতা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে৷ তবে তাদের সহযোগিতা শুধুমাত্র মামলার আলামত পর্যবেক্ষণ, ফরেনসিক টেস্ট এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং-এর ক্ষেত্রে কাজে দিচ্ছে৷ এর ভিত্তিতে অপরাধীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিন্তিত করতে হবে বাংলাদেশের তদন্তকারীদেরই৷
মামলা তদন্তে ধীর গতি বা ব্যর্থতার প্রশ্নে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ব্লগার রাজিব হত্যার সঙ্গে জড়িদের চিহ্নিত করেছি৷ এরইমধ্যে আদালত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ডসহ নানা মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে৷ ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু ছাড়া বাকি সব ব্লগার হত্যা মামলারও তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ আশা করছি অভিজিৎ হত্যা মামলাও আমরা ‘ডিটেক্ট' করতে পারব৷ কারণ আমরা নিশ্চিত যে, এটা ঐ একই উগ্রপন্থি গ্রুপ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমেরই কাজ৷ এমনকি এফবিআই-ও মনে করে উগ্রপন্থিরাই অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত৷''
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের কোনো সুরাহা হচ্ছে না কেন? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷