অভিবাসনপ্রত্যাশীর চাপে সীমান্তে কড়াকড়ির ভাবনায় জার্মানি
জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেছেন, শরণার্থীর সংখ্যা ইতিমধ্যে জার্মানির সামর্থ্যের শেষসীমা ছুঁয়েছে৷ এক সাক্ষাৎকারে অভিবাসনপ্রত্যাশী রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের কথাও বলেন তিনি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
শরণার্থী ও আশ্রয় আবেদনের চাপ
ইউরোপীয় শরণার্থী সংস্থা বলছে, ইইউভুক্ত সব দেশ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত যত আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশই জার্মানিতে৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত শুধু ইউক্রেন থেকেই এসেছেন প্রায় ১১ লাখ আশ্রয়প্রার্থী৷ এছাড়া, আরো দু’লাখ আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি৷
আবাসন ও অন্যান্য সংকট
জার্মানিতে আসা বহু আশ্রয়প্রত্যাশী ও শরণার্থীকে থাকার জন্য বাসা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ৷ অস্থায়ী আবাসনগুলিতে থাকা কষ্টকর৷ ফুলদায় যেমন শরণার্থীদের থাকার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ৷ নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা শিশুদের দেখভাল করার পরিষেবাও৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫-১৬ সালে আসা আশ্রয়প্রত্যাশীদের অন্তত ২৫ শতাংশ এখনও প্রাথমিক আবাসনেই থাকেন৷ ফলে নতুনদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকছে না৷
কেন এত চাপ জার্মানিতে
ইটালি বা স্পেনে আসা আশ্রয়প্রত্যাশীদের একটা বড় অংশ ইইউ’র নিয়ম অনুযায়ী সেখানে আবেদন না করে চলে আসেন জার্মানিতে৷ জার্মানিতে শুরু হয় আশ্রয় লাভের প্রক্রিয়া৷
আবেদন-জট
জার্মানিতে যত আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়ে, তার অর্ধেকেরও কম আবেদন গৃহীত হয়৷ যাদের আবেদন খারিজ হয়ে যায়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি (ডুলডুং) পান৷ ফেরত পাঠানো উচিত, এমন প্রায় ৯৫ হাজার আবেদনকারীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না জার্মান কর্তৃপক্ষ৷ এ কারণে তাদের অন্য কোথাও পাঠাতেও পারছে না৷
অভিবাসনপ্রত্যাশী রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি
বুধবার ইটালির ‘কোরিয়েরে দেলা সেরা’ পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুখতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেছেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷ এর আগে জার্মানির ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও এ প্রস্তাব দেয়৷ ডানপন্থি ক্রিশ্চিয়ান সোশাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) মনে করে, শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ ভাতা কমানো উচিত, যাতে নিশ্চিত আয়ের কথা ভেবে আরো বেশি আশ্রয়প্রার্থীরা জার্মানিতে না আসেন৷
কেন বাড়ছে আশ্রয়ের আবেদন
ইউরোপের দেশগুলিতে শরণার্থী ব্যবস্থাপনার খামতির পাশাপাশি জার্মান কর্তৃপক্ষকে আরো চিন্তিত করছে আশ্রয়প্রার্থীদের উৎস৷ জার্মানিতে সাম্প্রতিক সময়ে আশ্রয় পাওয়াদের বড় একটা অংশই এসেছেন সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরানের মতো দেশ থেকে৷ এসব দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যত কঠিন হবে, তত বেশি বাড়বে দেশ ছেড়ে ইউরোপ পাড়ি দেবার ঝোঁক৷
আইন বদলের ভাবনা
জার্মান সংবিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয়ের অধিকার সবার আছে৷ কিন্তু আইনের মানবিক দিক মাথায় রাখলেও বর্তমান সংকটকে মোকাবিলা করতে বেগ পাচ্ছে জার্মানি৷ তাই ইইউ শরণার্থী নীতিতে বদল আনতে চায় তারা৷ যাদের আবেদন গৃহীত হবার সম্ভাবনা কম, তাদের সীমান্ত থেকেই ফেরত পাঠাতে চায় জার্মানি৷ বর্তমান আন্তর্জাতিক আইন বা ইইউ নীতিমালায় এর অনুমোদন নেই৷