অভিষেকের অস্ত্র বঞ্চনা, বিজেপি-র দুর্নীতি
২ অক্টোবর ২০২৩দিল্লি এসে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার মহত্মা গান্ধীর জন্মদিনে তৃণমূল সাংসদদের নিয়ে রাজঘাটে বসে ধরনা দিলেন অভিষেক। তার দাবি, একটাই, অবিলম্বে সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গকে প্রাপ্য অর্থ দিতে হবে। গরিবদের একশ দিনের কাজ, পাকা বাড়ি তৈরি-সহ নানান প্রকল্পে টাকা আটকে দিয়েছে মোদী সরকার।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি এসে এই অভিযোগ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তালিকা দিয়ে এসেছেন। অভিষেক সোমবার বলেছেন ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র।
তার জবাব দিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন, ইউপিএ আমলের থেকে পশ্চিমবঙ্গকে অনেক বেশি টাকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতির ফলে সেই টাকা মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না।
অভিষেকের আন্দোলন নিয়ে
মাস কয়েক আগেই অভিযেক ঘোষণা করেছিলেন, তিনি এবার দিল্লিতে গিয়ে মোদী-শাহকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। সেই বিক্ষোভ দেখানোর সময় যত কাছে এসেছে, ততই অভিষেক ও তৃণমূল বনাম বিজেপি ও মোদী সরকারের লড়াই তুঙ্গে উঠেছে।
দিল্লিতে তৃণমূলের কর্মী খুব কম। তাই পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার পাঁচেক কর্মী-সমর্থক এনে দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাতে চেয়েছিল তৃণমূল। তার জন্য তারা ট্রেন বুক করতে চেয়েছিল। কিন্তু রেলের তরফ থেকে জানানো হয়, তৃণমূলকে ট্রেন দেয়া যাবে না। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, তৃণমূল নিয়ম মেনে ট্রেন বুক করেনি। তাই তাদের আবেদন খারিজ হয়েছে।
এরপর তৃণমূল কর্মীরা বাসে করে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গ থেকে রওনা হন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে পৌঁছানোর পর তাদের বাস আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে সেই বাস দিল্লি এলে আবার তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন বলে তৃণমূলের অভিযোগ। তারা রামলীলা ময়দান চাইলেও তা দেয়া হয়নি। মঙ্গলবার যন্তর মন্তরে বিক্ষোভ দেখাবেন অভিষেকরা।
ইডি এরমধ্যে ৩ অক্টোবর অভিষেককে কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। তারপর তৃণমূল অভিযোগ করেছে, দিল্লিতে অভিষেকের বিক্ষোভ বানচাল করতেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে ইডি। আর অভিষেক জানিয়েছেন, তিনি দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাবেনই। ইডি যা করার করে নিতে পারে।
অভিষেকের ধরনা
এই পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লিতে এসে সোমবার রাজঘাটে ধরনা দেন অভিষেক। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ''দুই বছর ধরে বাংলার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লাঞ্ছনার প্রতি একাধিকবার দিল্লিতে এসে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গায়ের জোরে কেন্দ্র ১৫ হাজার দুইশ কোটি টাকা আটকে রেখেছে।''
অভিষেক বলেছেন, ''রাজঘাটে প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর পর সিআইএসএফ, সিআরপিএফ ও অন্যরা এসে বারবার ধরনা বন্ধ করতে বলেছে। ওরা বলেছে, অনুমতি নেই। কর্মীদের ধাক্কা দিয়েছে। জোর করেছে। আমরা দুই ঘণ্টা শান্তিপূর্ণভাবে বসেছি। একটাও রাজনৈতিক স্লোগান দিইনি। গান্ধীজি কারো কেনা নয়। সকলের অধিকার আছে এখানে বসার।''
অভিযেক জানিয়েছেন, ''মঙ্গলবার যন্তর মন্তরে বড় বিক্ষোভ আছে। রাজ্যের মানুষ এখানে এসেছেন। গত দুই বছরে দশ পয়সাও তারা পশ্চিমবঙ্গকে দেয়নি। আমরা চ্যালেঞ্জ করে দিয়ে যাচ্ছি, আগামী দিনে জোর লড়াই হবে। গণতন্ত্রে শেষ কথা বলবে মানুষ। এরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।''
অভিষেকের প্রশ্ন, ''সব ভোটে হারে বলে কি ওরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বিরুদ্ধে এভাবে কাজ করছে?''
মন্ত্রীর জবাব
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ কিশোর বলেছেন, ''ইউপিএ আমলে ৫৮ হাজার কোটি টাকা পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছিল। আর মোদী সরকার দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু ওরা তো একশ দিনের কাজের নামে লুঠ শুরু করেছিল।''
গিরিরাজের বক্তব্য, ''আমরা ২০২২-এর মার্চ পর্যন্ত ৫৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। যখন তদন্ত শুরু হয়, তখন বলা হয়, টাকা দিয়ে ক্ষেতে বাঁধ করা হয়েছে। তারপর বলে বন্যায় তা ভেসে গেছে। বড় পোস্ট হাতি ফেলে দিয়েছে। এরা গরিবের নামে পুরো টাকা হজম করে দিয়েছে।''
গিরিরাজের দাবি, ''প্রধানমন্ত্রীর আবাস প্রকল্পে আমরা ৪৫ লাখ বাড়ি দিয়েছি। আরো ১১ লাখ অনুমোদন করেছি। তদন্ত করে দেখা গেছে, যাদের দোতলা বাড়ি আছে, তাদের বাড়ির টাকা দিয়েছে। গৃহহীনকে দেয়নি। আমরা ৩০ হাজার কোটি দিয়েছে। আমরা কোনো স্কিমে পয়সা বন্ধ করিনি। বিভিন্ন খাতে প্রচুর অর্থ দেয়া হয়েছে। একশ দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে, ওরা তদন্তে সহযোগিতা করছে না, আধারের সঙ্গে লিংক করার পর ২৫ লাখ জব কার্ডে বেনিয়ম পাওয়া গেছে।
অভিষেকের বক্তব্য, ''বিজেপি নেতারা বলছেন, চার জেলায় দুর্নীতি হয়েছে। যদি তর্কের খাতিরে তা সত্যি বলে ধরে নিই, তাহলে চার জেলার জন্য বাকি ১৬ জেলার মানুষকে কেন টাকা দেয়া হচ্ছে না? তারা কোনো প্রমাণ না দিয়ে শুধু দুর্নীতির অভিযোগ করছে।''
'ভোটের লাইন'
সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''বোঝা যাচ্ছে, আগামি নির্বাচনে প্রচারের লাইন তৈরি হয়ে গেছে। একদিকে বাংলা ও বাঙালির প্রতি বঞ্চনা, অন্যদিকে দুর্নীতি। অভিষেকের দিল্লি সফর ও বিজেপি-র প্রতিক্রিয়া থেকে এটা একেবারে স্পষ্ট।''
শরদের মতে, ''নির্বাচন যত কাছে আসবে, ততই দুই পক্ষ এই দুইটি বিষয়কে সামনে রেখে উচ্চগ্রামে প্রচার করবে। আর অভিষেক দেখাতে চাইছেন, তৃণমূলে দলটা এখন কার্ষত তিনিই চালাচ্ছেন।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)