অমিত শাহ ব্যর্থ, কৃষকরা অনড়
৯ ডিসেম্বর ২০২০মোদী সরকারের সঙ্গে কৃষকদের পাঁচ দফা বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর মাঠে নামেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি কৃষক নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে বৈঠক করেন। কিন্তু অমিত শাহের প্রয়াসও ব্যর্থ। কৃষক নেতারা অনড় মনোভাব নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারকে তিনটি কৃষি আইন বাতিল করতে হবে। সরকারও আর দাবি মানতে চাইছে না। ফলে বুধবার যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে।
সরকারের প্রস্তাব ছিল, মান্ডি বা কৃষি বাজার এখন যেমন আছে ভবিষ্যতেও সেরকম থাকবে। এমএসপি নিয়ে সরকার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেবে। আর বিরোধ হলে আদালতে যেতে পারবে কৃষকরা। এই তিনটি পরিবর্তন আইনে করা হবে। কিন্তু কৃষক নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, ওই আইন তাঁদের সর্বনাশ করবে। তাই আইন বাতিল করতেই হবে। কৃষক নেতাদের মতে, এমএসপি চালু থাকবে বলে সরকার প্রতিশ্রুতি দিতে চায়। কিন্তু প্রশ্নটা এমএসপি চালু রাখা নিয়ে নয়। তা আইন করে বাধ্যতামূলক করা নিয়ে। না হলে বেসরকারি সংস্থা ও কর্পোরেটগুলি কোনোদিন এমএসপি মানবে না। সবসময় তারা এমএসপি-র থেকে অনেক কম দামে জিনিস কিনবে। এখন যেমন কিনছে। সরকার এমএসপি বাধ্যতামূলক করতে রাজি নয়। বাকি যে দুইটি পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে, সেটাও বড় কিছু নয় বলে তাঁদের মত।
ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেছেন, সরকার যদি অনড় থাকে তাহলে কৃষকরাও অনড় থাকবেন। সরকার আইন বাতিল করুক। তার কমে তাঁরা কিছুই মানবেন না। অর্থাৎ, কৃষকরা মোদী সরকারের উপর থেকে চাপ কমাতে নারাজ। বিরোধী দলগুলিও সরকারকে চাপ দিতে এ দিন কৃষি বিল নিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করবেন। সেখানে রাহুল গান্ধী, শরদ পাওয়ার, সীতারাম ইয়েচুরি, টি আর বালু, ডি রাজার মতো নেতারা থাকবেন। কংগ্রেস, অকালি, শিবসেনা, ডিএমকে, এসপি, বিএসপি, তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, বাম দলগুলি সকলেই কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে।
সরকারের উপর এই চাপ যে ভালোমতো কাজ করছে সেটাও স্পষ্ট। কারণ, এতদিন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর আলোচনা করছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আরো দুই মন্ত্রী। কিন্তু তাঁরা আলোচনায় ব্যর্থ হচ্ছেন বলে অমিত শাহকে মাঠে নামতে হয়েছে। তিনি নতুন করে তিনদফা প্রস্তাবও দিয়েছেন। কৃষক নেতারা বলছেন, তাঁরা জানেন, সরকার একবারে কিছুই মানবে না। কিন্তু তাঁরা যদি বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে পারেন, তা হলে সরকার তাঁদের দাবি মানতে বাধ্য হবে।
ইতিমধ্যে বিক্ষোভরত একজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হরিয়ানার কৃষক। ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে কৃষক নেতারা জানিয়েছেন।
বুধবার পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ থেকে আরো কয়েক হাজার কৃষক দিল্লির সীমানায় চলে এসেছেন। দিল্লিতে ঢোকার তিনটি সীমানা কার্যত বন্ধ। বাকিগুলোতেও প্রচুর কৃষক জড়ো হয়েছেন। কৃষক নেতা ও কৃষির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সরকারি পদক ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন। সরকারি সংস্থার কাছ থেকে সম্মানও নিচ্ছেন না। বুধবার কৃষি বিজ্ঞানী বারীন্দ্রপাল সিং জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের গোল্ডেন জুবিলি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)