অরুণাচল প্রদেশকে দাবি: চীন
১৬ অক্টোবর ২০১৩আগামী সপ্তাহে ড. মনমোহন সিং-এর বেজিং যাত্রার ঠিক আগে ভারতের বিতর্কিত অরুণাচল প্রদেশের অধিবাসীদের পাসপোর্টে সাধারণ ভিসার পরিবর্তে ‘স্টেপল' ভিসা দেয়া নিয়ে চীন-ভারত সম্পর্কে নতুন করে জটিলতা মাথা চাড়া দিয়েছে৷ ভারতের তরফে বলা হয়েছে, ‘স্টেপল' ভিসা মেনে নেবার প্রশ্নই ওঠে না৷ কারণ অরুণাচলের অধিবাসীরা ভারতীয়৷ অন্যদিকে চীনের বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত চীনের ভিসা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং তা বহাল থাকবে৷ কারণ অরুণাচলে বসবাসকারীদের ভারতীয় নাগরিক বলে মনেই করে না চীন৷
চীনের এই পদক্ষেপকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ ‘স্টেপল' ভিসার অর্থ অরুণাচল প্রদেশের ওপর ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে আবারো চ্যালেঞ্জ জানানো এবং অরুণাচল প্রদেশের ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার ওপর চীনের আঞ্চলিক দাবি কায়েম করার ইঙ্গিত৷ ভারতের পাল্টা দাবি, আকসাই চীনের ৩৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা দখল করে রেখেছে চীন৷ বিশ্লেষকদের মতে, চীনের ভিসা নীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ কারণ, গত পাঁচ বছর ধরে অরুণাচলবাসীদের সাধারণ, অর্থাৎ ‘স্ট্যাম্প' ভিসা দিয়ে এসেছে তারা৷ এই বৈপরিত্য দিল্লিকে শুধু বিস্মিত নয়, উদ্বিগ্নও করে তুলেছে৷
বেজিং-এ চলছে বিশ্ব যুব তীরন্দাজ চ্যাম্পিয়ানশিপ৷ ভারতীয় তীরন্দাজ দলে ছিলেন অরুণাচলের দু'জন অধিবাসী৷ তাঁদের দিল্লির চীনা দূতাবাস ‘স্টেপল' ভিসা দেয়ায় তাঁরা যেতে পারেননি৷ কারণ, ‘স্টেপল' ভিসা ভারত স্বীকার করে না৷
এই ভিসা ইস্যু নিয়ে চীনের অবস্থান গোড়ার দিকে ছিল, অরুণাচলের অধিবাসীদের জন্য চীন সফরে ভিসা লাগবে না, যেহেতু চীনের দাবি অনুযায়ী তাঁরা চীনের নাগরিক৷ দিল্লির কড়া প্রতিবাদের পর চীন কিছুটা নমনীয় হয়ে ২০১০ সালের বেজিং অলিম্পিকের সময় থেকে এই ‘স্টেপল' ভিসা দেয়া শুরু করে৷ ২০১১ সালে অরুণাচলের এক ক্যারাটে টিমকে এই কারণেই চীনগামী বিমানে উঠতে দেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ৷ গত বছর ১০০ জন ছাত্রের এক প্রতিনিধিদলের একজন অরুণাচলের একটি মেয়েকে এই কারণেই যেতে দেয়া হয়নি৷ দিলে চীনের দাবিকেই কার্যত মেনে নেয়া হতো৷
এছাড়া, ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধের মীমাংসা ১৬ দফা বৈঠকের পরও কোনো সমাধানসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ লাদাখ এলাকায় চীনের গতিবিধি এবং অনুপ্রবেশের কথিত অভিযোগ ভারতের ওপর এক ধরণের চাপ সৃষ্টির কৌশল বলে মনে করছে দিল্লির কূটনৈতিক মহল৷
শুধু অরুণাচল প্রদেশই নয়, ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের ভারতীয়দেরও চীন ভারতীয় বলে স্বীকার করে না৷ ২০০৯ সালে তাঁদের ক্ষেত্রেও ‘স্টেপল' ভিসা দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ভারত কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় চীনকে বোঝাতে সক্ষম হলে চীন নিঃশব্দে তা তুলে নেয়৷ তবে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলের ক্ষেত্রে তা হবে কিনা, সেটা বলা মুশকিল৷
বিরোধী দল বিজেপি প্রধানমন্ত্রী ড. সিংকে তাঁর বেজিং সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর মতো শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে এই ভিসা ইস্যুটি তোলার দাবি জানিয়েছে৷ ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী হবার অনুরোধ করেছে বিজেপি৷ অরুণাচলের ছাত্র ইউনিয়নের এক প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন দিল্লিতে তাঁর বাসভবনে দেখা করে অনুরূপ অনুরোধ করেছে৷ বলেছে, চীন যদি এই ধরণের ভিসা নীতি চালিয়ে যায়, তাহলে ভারতেরও উচিত চীনা নাগরিকদের ভারতে আসার জন্য সাধারণ ভিসার পরিবর্তে ‘স্টেপল' ভিসা দেয়া৷ দিল্লির অবস্থান অবশ্য ‘‘চোখের বদলে চোখ'' নীতি অবলম্বন না করে কূটনৈতিক পথে বিষয়টির সমাধান করা৷