অর্পিতার নামে প্রচুর দলিল উদ্ধার পার্থর বাড়ি থেকে
২৬ জুলাই ২০২২পার্থর বাড়িতে তল্লাশি করে বেশ কিছু নথিপত্র পেয়েছে ইডি। তাদের সেই সিজার লিস্টে দেখা যাচ্ছে, মোট ১৭টি নথি বা অন্য প্রমাণ পার্থর বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে তারা। সেই ১৭টির মধ্যে সাতটি নথিতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নাম আছে।
সূত্র জানাচ্ছে, সিজার লিস্টের চার নম্বরে ২০১১ সালের ৩০ অগাস্ট অর্পিতার নামে করা স্বত্বান্তর দলিলের কথা বলা হয়েছে। এরপর ছয় নম্বরে আছে ২০১২ সালের ২৮ অগাস্ট করা অর্পিতার নামেএকটি দলিল। তার পরেই সাত নম্বরে উল্লেখ করা আছে, সেন্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে করা ২০২২ সালের ২৮ মার্চের একটি দলিল। এই কোম্পানির ডিরেক্টর হলেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তালিকার নয় নম্বরে আরেকটি দলিলের উল্লেখ আছে, যেখানে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অর্পিতার নামে করা হয়েছে।
এর কিছুদিনের মধ্যেই ২০১৯-এর ২০ এপ্রিল অর্পিতার নামে আরেকটি দলিল ইডি সিজ করেছে। এছাড়া ২০১৫ ও ২০১৭ সালে করা অর্পিতার নামে করা দুইটি দলিলের কথাও সিজার লিস্টে আছে। এই দলিলগুলি জমি, বাড়ি, গাড়ি, সম্পত্তি না অন্য কিছু তা সিজার লিস্টে উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া স্যামসঙ্গের গ্যালাক্সি এস ২২ মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্টের সঙ্গে করা বেশ কয়েকটি দলিলও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
আইনজীবী মানলেন
রোববার ব্যাংকশাল কোর্টে ইডির আইনজীবী বলেন, অর্পিতা হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শুভাকাঙ্খি। টিভি৯ জানাচ্ছে, পার্থর আইনজীবী দেবাশিস রায় জানিয়েছেন, ''অর্পিতা ও পার্থর মধ্যে সম্পর্ক অস্বীকার করছি না। কিন্তু পরিচিত একজনের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের দায় কি পার্থর? তারা ঘনঘন কথা বলতেন বলে এই দায় চাপানো হবে? ওই টাকা যে পার্থর তা তো প্রমাণ হয়নি।''
দলের ভিতরে সমালোচনা
এসএসসি-কেলেঙ্কারির জালে আরো বেশি করে জড়িয়ে পড়ছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিরোধীরা তো বটেই, তার নিজের দলের নেতারাই পার্থর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। যেমন, উত্তরবঙ্গের সাবেক তৃণমূল বিধায়ক ও বর্তমানে পুরপ্রধান অনন্তদেব অধিকারী। তিনি তো কোনো রাখঢাক না করে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, ''তখন টাকা ছাড়া কোনো নিয়োগ হয়নি।''
এতটা নিশ্চিতভাবে কী করে বলছেন অনন্তদেব। বরাবরই সোজাসাপটা কথা বলায় বিশ্বাসী অনন্তদেব জানিয়েছেন, ''পার্থ চট্টোপাধ্যায় যখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি এসএসসি-র চাকরির জন্য নাম চেয়ে পাঠান।'' আনন্দবাজারকে অনন্তদেব জানিয়েছেন, তিনি তার বিধায়কের লেটারহেডে পাঁচটি নাম পাঠান। কারো চাকরি হয়নি।
অনন্তদেব বলেছেন, তার ছেলেমেয়ে স্নাতকোত্তর পাস এবং টেট পরীক্ষায় পাস করেছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কথায় ওদের নামও পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তিনি দিয়েছিলেন। কিন্তু যোগ্যতা সত্ত্বেও তাদের চাকরি হয়নি। এর থেকেই অনন্তদেবের সিদ্ধান্ত, বোঝাই যাচ্ছে, তখন টাকা ছাড়া নিয়োগ হয়নি।
সূত্র জানাচ্ছে, অনন্তদেবের লেটারহেটে সুপারিশ করা পাঁচ জনের নাম সম্বলিত চিঠি পার্থর বাড়ি থেকে পেয়েছে ইডি। অনন্তদেবও জানিয়েছেন, তার সুপারিশ পার্থ গ্রহণ করেননি। তাই সম্ভবত সেটা তার বাড়িতেই ছিল। সেসময় সব তৃণমূল বিধায়ককেই নাম সুপারিশ করতে বলা হয়েছিল। অন্য কোনো বিধায়কের সুপারিশ করা কোনো প্রার্থীর চাকরি হয়েছে কি না, তা এখনো জানেন না অনন্তদেব।
অধীরের চিঠি
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে শিল্পমন্ত্রীর পদ থেকে সরাবার দাবি জানিয়েছেন। অধীরের বক্তব্য, ‘‘ অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যের বর্তমান শিল্প-বাণিজ্য ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি ২০১৪-২১ পর্যন্ত রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। সেই সময়ই রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগে বেনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ। আদালতের নির্দেশে সেই দুর্নীতি মামলার তদন্ত হচ্ছে। আমি দাবি করছি, তাকে যেন অবিলম্বে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়।''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)