মানব শরীর
১৫ এপ্রিল ২০১২ধরুণ, আপনার প্রিয় কোনো মানুষ শুয়ে আছেন অপারশেন টেবিলে৷ সাইনাস'এর যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে একটু পরেই তাঁর একটি অপারেশন করা হবে৷ কিন্তু আপনি খুব ভয় পাচ্ছেন৷ ভয় পাচ্ছেন তিনিও৷ দু'জনেই ভাবছেন, অপারেশন করতে গিয়ে ডাক্তার আবার মুখমণ্ডলের কোনো নার্ভ কেটে ফেলবে না তো!
আপনার ভয়টা হয়তো অমূলক নয়৷ অপারেশনের সময় ছোট্ট একটা ভুলই হয়তো হয়ে উঠতে পারে অনেক বড় বিপদের কারণ৷ তবে আজ আপনার জন্যই সুসংবাদ এনেছে বিজ্ঞান৷
ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অপারেশনকে আরো নির্ভুল ও নিখুঁত করার জন্য অপারশেন থিয়েটার বা ওটি'তে ব্যাবহার করা হবে এক ধরণের ক্যামেরা৷ ঐ ক্যামেরায় ধারণ করা ছবিগুলো হবে থ্রিডি আকারের৷
ওটি'তে নতুন এই প্রযুক্তি যোগ করার ফলে, আপনার শরীরে মাংসের আড়ালে থাকা সূক্ষ্ম নার্ভ, হাড়ের পুরুত্ব, ব্লাড ভেসেল'এর আকার - সব কিছুই থ্রিডি ছবি হয়ে ভেসে উঠবে কম্পিউটারের মনিটরে৷ আর পর্দার থ্রিডি ইমেজ দেখে ডাক্তাররা আগেই বুঝে যাবেন, কোথায় আছে নার্ভ আর কোথায় বা ব্লাড ভেসেল৷ ফলে ভুলের সম্ভাবনা কমে যাবে অনেকটাই৷
অপারশন টেবিলের উপরে থাকবে দুটো ‘ইনফ্রারেড ক্যামেরা'৷ আর রোগীর শরীরে লাগানো থাকবে একটি বিশেষ রিসিভার৷ অপারেশনের প্রতিমুহূর্তের ছবি ধারণ করবে ক্যামেরাগুলো৷ ধারণকৃত ছবিগুলো দেখার জন্য অপারশেন টেবিলের চারপাশ ঘিরে থাকবে পাঁচটি মনিটর৷ এর মধ্যে মাঝখানের মনিটরটি হবে সবচেয়ে বড়৷
এসব মনিটরের একটিতে দেখা যাবে ন্যাভিগেশনের চিত্রগুলো৷ অর্থাৎ অপারেশনটা কোন দিক থেকে কোন দিকে যাবে, কতোটুকু কাটা হবে - এইসব তথ্য৷ আর আরেকটি মনিটরে দেখানো হবে অপারশেন চলতে থাকাকালীন ছবিগুলো৷ অর্থাৎ কোন দিক থেকে কোন দিকে কাটা হচ্ছে, কতোটুকু কাটা হচ্ছে ইত্যাদি দেখা যাবে সেই মনিটরে৷
এখানেই শেষ নয়, অপারশেন চলতে থাকার সময়, অপারেশনের জন্য নির্ধারিত জায়গা ছেড়ে কোনো সার্জন যদি ভুল করে অন্য কোনো দিকে চলে যেতে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই বেজে উঠবে একটি অ্যালার্ম৷ আর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বন্ধ হয়ে আসবে অপারেশন যন্ত্রটি৷
ক্যামেরা, মনিটর ও সেন্সর - এই তিনের সাহায্যে ভবিষ্যতের অপারশেন থিয়েটার হয়ে উঠবে আরো বেশি নিরাপদ ও নির্ভুল৷
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমস বা জিপিএস পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে একটি গাড়ি তার ন্যাভিগেশন বা দিক নির্দেশনার কাজ করে৷ মানচিত্র ও গাড়ির অবস্থানের হিসেব করে চালককে পথ চিনিয়ে দেয় ন্যাভিগেশনের সয়ংক্রিয় যন্ত্রটি৷ রাস্থা ভুল করলে বারবার দিয়ে থাকে সর্তকতা সংকেত৷
অধ্যাপক গেরো স্ট্রাউস বলেছেন, গাড়ির মতোই জিপিএস ন্যাভিগেশন সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে অপারশেন থিয়েটারে কাজ করবে ‘ইনফ্রারেড ক্যামেরা'৷
আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় করে নিজেদের অপারশেন থিয়েটারগুলোকে আরো বেশি নিখুঁত করে তোলার চেষ্টা করছে জার্মানির লাইপজিগ-এ অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল রেফারেন্স অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট সেন্টার ফর সার্জিকেল টেকনোলজি (আইআরডিসি)৷
ক্যামেরা এখন ডাক্তারকেও দেখিয়ে দিচ্ছে পথ৷ তাই ধরে নিতে পারেন, বিজ্ঞানের আশীর্বাদে ভয়ের সে দিন ফুরালো বলে৷ সুতরাং, সাইনাস থেকে মুক্তি পেতে আপনার নাকের অপারেশন হোক বা হোক অন্য কোনো বড় অপারেশন - এখন আর তাতে অমূলক ভয় কেন?
প্রতিবেদন: আনা-লিনা ডোরমান/গুদরুন হেইসে/আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ