দোষী অ্যাপোলো হাসপাতাল
১০ মার্চ ২০১৭পথ দুর্ঘটনায় আহত সঞ্জয় রায়ের চিকিৎসায় গাফিলতি এবং পরিণতিতে সঞ্জয় রায়ের অকালমৃত্যুর ঘটনায় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে৷ শুধু চিকিৎসায় গাফিলতিই নয়, রাজ্য সরকারের তৈরি করা তদন্ত কমিটি প্রমাণ পেয়েছে যে, ভুয়ো বিল তৈরি করে সঞ্জয় রায়ের চিকিৎসার খরচ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে৷ এই অভিযোগ শুরু থেকেই করছিলেন মৃত সঞ্জয় রায়ের স্ত্রী৷
প্রমাণিত হয়েছে যে, সঞ্জয় রায়ের মূল চোট-আঘাতের চিকিৎসা না করে, কেবল হাসপাতালের বিল বাড়াতেই তৎপর ছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মী৷ যে বিপুল অঙ্কের বিল না মেটাতে পারায় সরকারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে জায়গা পাওয়া সত্ত্বেও সঞ্জয় রায়কে নিয়ে যেতে পারেনি তাঁর পরিবার৷ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারটির হাতে যথেষ্ট নগদ টাকা না থাকায় তাদের কার্যত বাধ্য করা হয় সামান্য আর্থিক সঞ্চয়ের সার্টিফিকেট জমা রেখে, তবেই সঞ্জয় রায়কে অন্যত্র নিয়ে যেতে৷ অথচ অ্যাপোলো হাসপাতালে সঞ্জয়ের চিকিৎসার প্রয়োজনে একাধিক দামি পরীক্ষার উল্লেখ করে মোটা অঙ্কের খরচ লেখা হয়েছে, যেসব পরীক্ষা আদৌ হয়নি৷ এরকমই একটি পরীক্ষার খরচ ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা৷ এ সব জালিয়াতিই ধরা পড়েছে তদন্তে৷
রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তদন্ত কমিটি নির্দিষ্টভাবে অভিযুক্ত চিকিৎসক, সেবিকা, ও হাসপাতালের বিলিং সেকশনের কর্মীদের চিহ্নিত করেছে, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন এই জালিয়াতিতে৷ এর আগেই অবশ্য অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্তাদের স্থানীয় থানায় ডেকে একপ্রস্থ জেরা করা হয়েছিল৷ শুক্রবার রাজ্য সচিবালয় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর টেবিলে তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ফের অ্যাপোলোর কয়েকজন কর্তাব্যক্তিকে ডেকে পাঠানো হয়৷ ওদিকে মুখ্যমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতালের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই সিদ্ধান্ত নিতে৷ সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনারও৷
এদিকে এরই পাশাপাশি দু'টি নামি ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে মেয়াদ ফুরনো ওষুধ নতুন মোড়কে বিক্রি করার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গে৷ খোঁজ মিলেছে সেই মুদ্রণ সংস্থার, যারা পুরনো, বাতিলযোগ্য ওষুধের নতুন মোড়ক ছাপার কাজ করত৷ পুলিশ জানতে পেরেছে, বেলুড়ের একটি ছোট অফিসঘরে গত ৭-৮ বছর ধরে এই জালিয়াতি চলছিল৷ অভিযুক্ত ওই দুই ওষুধ কোম্পানি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের এবং ভিন রাজ্যের বেশ কিছু স্টকিস্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটরও এই জাল ওষুধের ব্যবসায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে রাজ্যজুড়ে৷ প্রত্যেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যে ওষুধ সংস্থা বহু মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করেছে, তাদের কেন গণহত্যার দায়ে শাস্তি হবে না?