আইএস কোবানিতে ঢুকেছে, কুর্দদের সঙ্গে যুদ্ধ চলেছে
৭ অক্টোবর ২০১৪আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও এখন এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে: কোবানির উপর আইএস বা আইসিস-এর অভিযান রোখায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিমান-হানা ইরাকের মতো কার্যকরি হচ্ছে না কেন? পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মাটিতে সৈন্য না রেখে আকাশ থেকে বিমান হানা চালানোর নীতির মূল যৌক্তিকতাই হলো: তার অব্যর্থ লক্ষ্য৷ বিমান থেকে ছোঁড়া রকেট যখন শত্রুর ট্যাংক ধ্বংস করে, তখন রাস্তার অ্যাসফাল্টে আঁচড় পড়ে না, এমনই নির্ভুল নাকি সেই আক্রমণ – টেলিভিশনে মন্তব্য করেছেন এক বিশেষজ্ঞ৷
কুর্দ পেশমার্গা ও ইরাকি স্পেশাল ফোর্সেস মাটিতে, আকাশে মার্কিন বিমানবাহিনী – এভাবেই তো উত্তর ইরাকের এরবিল-এর কাছ থেকে এবং মোসুল বাঁধ থেকে আইএস যোদ্ধাদের বিতাড়ন করা সম্ভব হয়েছিল – অতি সম্প্রতি৷ সেভাবেই উত্তরের রাবিয়া ও দাকুক জেলাগুলি পুনর্বিজয় করা সম্ভব হয়েছে৷ তাহলে কোবানিতে সেই ব্রহ্মাস্ত্র ব্যর্থ হচ্ছে কেন? এই পটভূমিতে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড যখন গত রবিবার ঘোষণা করেন যে, বাগদাদের পশ্চিমে আইএস অবস্থানের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করা হয়েছে, তখন বিশেষজ্ঞরা তার অর্থ করছেন: এ তো মাটিতে সৈন্য নামানোরই নামান্তর৷
কোবানিতে যা ঘটছে, তা-তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিমান হানা কুর্দ যোদ্ধাদের রক্ষাকবচ হবার কথা৷ অথচ সোমবার থেকেই টেলিভিশনের ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, কোবানির এক প্রান্তের বাড়িঘরের উপর আইএস-এর কালো পতাকা উড়ছে৷ সংবাদ সংস্থাগুলির সর্বাধুনিক খবর অনুযায়ী কোবানির পূর্ব, দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিক ঘিরে যুদ্ধ চলেছে – উত্তরে তুর্কি সীমান্ত৷ কোবানির এক কুর্দ অধিবাসী কোবানির দক্ষিণে একটি মালভূমিতে মার্কিন বিমান হানার কথা বললেও, যোগ করেছেন যে, আইএস যোদ্ধারা সেখানে নেই: ‘‘মার্কিনিদের অন্যত্র আঘাত হানা উচিত,'' মুস্তাফা এবদি বলেছেন এএফপি সংবাদ সংস্থাকে৷
তুরস্কের দ্বিধা
তৃতীয় এবং শেষ প্রশ্ন: তুরস্ক কী করতে চলেছে? সীমান্তে সারি সারি তুর্কি ট্যাংকের ছবি দেখছে সারা বিশ্ব, কিন্তু তারা কোবানির দিকে মুখ করে থাকলেও, নিষ্ক্রিয়ই রয়েছে৷ সীমান্তের সিরীয় তরফ থেকে উদ্বাস্তুদের স্রোত নিয়ন্ত্রণের জন্য কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া হচ্ছে৷ সীমান্তের তুর্কি তরফে গ্রামগঞ্জ থেকে মানুষজনকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে৷ কিন্তু সব মিলিয়ে তুরস্ক যে কোবানিকে বাঁচানোর জন্য স্থল অভিযান শুরু করতে চলেছে, তার আপাতত কোনো লক্ষণ নেই৷ বরং ইস্তানবুল – এবং দিয়ারবাকির-এর মতো কুর্দ-অধ্যুষিত শহর – অথবা সীমান্তের শহর সানলিউর্ফা – এই সব শহরে কুর্দরা আইএস-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে৷
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান এখনও মার্কিনিদের দক্ষিণ তুরস্কের বিমানঘাঁটিগুলি ব্যবহার করার অনুমতি দেননি৷ আর সীমান্তে কেন কুর্দদের তুরস্কে প্রবেশ থেকে বিরত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তার কারণটা হলো এই যে, কোবানিতে কুর্দদের গণতান্ত্রিক সংঘ দল বা পিওয়াইডি বস্তুত নিষিদ্ধকৃত কুর্দ শ্রমিক দল পিকেকে-র মিত্রসুলভ৷ এছাড়া তুর্কি সেনাবাহিনী যদি কোবানিতে বাড়ি থেকে বাড়ি যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তুর্কি তরফে হতাহত অবশ্যম্ভাবী – সেক্ষেত্রে তুর্কি রাজনীতিকদের স্বদেশের তুর্কি জনগণকে বোঝাতে হবে, সীমান্তের অপরপারে কুর্দদের রক্ষা করার জন্য তুর্কি সৈন্যরা প্রাণ দিচ্ছে কেন৷
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি)