1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির রাস্তায়ও আইএস ‘দুঃস্বপ্নের' তাড়া

২১ আগস্ট ২০১৮

আইএস-এর হাতে বন্দি হওয়ার পর যার ‘দাসীতে‘ পরিণত হয়েছিলেন, সেই নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচতে পরিবার নিয়ে জার্মানির আশ্রয় ছেড়ে গেছেন এক ইয়াজিদি তরুণী৷

https://p.dw.com/p/33S3E
Deutschland -  Ashway Haji Hamid - Jesidin aus dem Irak
ছবি: privat

ইরাকের মসুলে যে আইএস যোদ্ধার বন্দিত্ব থেকে পালিয়ে এসেছিলেন, সেই নিপীড়ক আবার জার্মানির রাস্তায় এসে পথ আগলে দাঁড়ানোর পর পরিবার নিয়ে আশ্রয়দাতা ইউরোপের এই দেশ ছেড়ে গেছেন এক ইয়াজিদি তরুণী৷

বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গের শ্ভাবিশ গ্মুন্ড শহরে দুই দফায় তার মুখে পড়েন ১৯ বছরের ওই তরুণী৷ প্রথমবার দেখা হওয়ার পরই পুলিশকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি, পরে পরিবারের সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত নিজের দেশে ফিরে যান তিনি৷

জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর সহিংসতার শিকার ইয়াজিদি নারীদের সহায়তার লক্ষ্যে পরিচালিত একটি কর্মসূচির আওতায় ২০১৫ সালে পরিবার নিয়ে জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে আসেন আশওয়াক হাজি হামিদ৷

২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখলে নেওয়ার পর উত্তর ইরাকে ইয়াজিদিদের ওপর ভয়াবহ নৃশংসতা চালায় আইএস৷ তাদের এই সহিংসতাকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ৷ সে সময় অনেক নারী ও শিশুকে ধরে নিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয় জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷ এই নিপীড়িত নারীদেরই একজন  হামিদ৷

কিন্তু জার্মানিতে এসে যখন তিনি ওই অতীত ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, সে সময় আবার সেই ‘দুঃস্বপ্ন' এসে তার সামনে দাঁড়ায়৷ এই নিপীড়কের ঘরে ১০ সপ্তাহ বন্দি ছিলেন হামিদ৷

‘‘আমি ইরাক থেকে চলে গিয়েছিলাম যাতে ওই কুৎসিত মুখ আর দেখতে না হয় এবং এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে এমন সব কিছু যাতে ভুলে যেতে পারি৷ কিন্তু জার্মানিতে তাকে দেখে আমি ভয়ানক কষ্ট পেয়েছি৷''

আইএস-এর দাসত্ব থেকে মুক্ত করার লড়াই

ডয়চে ভেলে, ফ্রান্সের মিডিয়াস ম্যঁদ ও ইটালির আনসা সংস্থা পরিচালিত অভিবাসী বিষয়ক সাইট ইনফোমাইগ্রান্টসকে এভাবে নিজের অবস্থার কথা তুলে ধরেন আশওয়াক হাজি হামিদ৷

এই নারী বলেন, ‘‘২০১৬ সালে প্রথমবার৷ সে আমাকে ধাওয়া করছিল৷ সেই একই ব্যক্তি, তবে দ্বিতীয় দফায়, সে আমার কাছে এলো এবং বলল, সে আমার সম্পর্কে সব কিছু জানে৷'' 

‘তদন্ত চলছে'

হামিদ বলেন, আইএসের বর্বরতার শিকার হওয়ার পর জার্মানিতে নতুন একটি জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন৷ তবে আমাকে বন্দিকারী সেই ব্যক্তি এখন সেখানে অবাধে চলাচল করছে, সে বিষয়টি জানার পর নিরাপদ বোধ করাটা অসম্ভব৷

গত ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় ঘটনাটি সম্পর্কে পুলিশ ও শরণার্থী শিবির পরিচালনাকারীদের জানানোর পর তাকে শুধু জরুরি পরিস্থিতিতে ফোন করার জন্য একটি নম্বর দেওয়া হয়েছিল বলে জানান হামিদ৷ তারপরই তিনি জার্মানি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন৷

‘‘তাকে না দেখলে আমি জার্মানিতে থেকে যেতাম৷ আমি লেখাপড়া শেষ করে একটি ডিগ্রি নিতে চেয়েছিলাম, যা আমকে একটি সুস্থ জীবন দিত৷''

হামিদের এই বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে কর্তৃপক্ষ ১৯ বছরের একটি মেয়ের কাছ থেকে এ ধরনের একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে৷ তবে বাডেন-ভু্র্টেমব্যার্গের পুলিশ বলছে, তারা গত মার্চে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে৷

স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা সংস্থাগুলো মিলে ওই নিপীড়েকর একটি মুখাবয়ব তৈরি করেছে৷ তবে তারা বলছে, হামিদ যে সব তথ্য দিয়েছেন তা পর্যাপ্ত ছিল না এবং তিনি যে নাম বলেছেন তা নিবন্ধিত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে মিলছে না৷

 

ফেডারেল প্রসিকিউটররা গত জুনে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করে৷ তবে ততোদিনে পরিবার নিয়ে ইরাকে চলে গেছেন হামিদ৷

বাডেন-ভুর্টেমব্যার্গ পুলিশ গত বুধবার এক টুইটে বলেছে, ‘প্রত্যক্ষদর্শীকে না পাওয়া যাওয়ায়' তদন্ত আর এগোতে পারেনি৷

আর ফেডারেল পাবলিক প্রসিকিউটরের দপ্তর জানিয়েছে, গত জুলাই থেকেই এই মামলার প্রাথমিক কার্যক্রম ঝুলে আছে৷

জার্মানিতে ‘অনেক মেয়েরই আমার মতো কাহিনি'

২০১৪ সালে আইএস জঙ্গিরা পাঁচ হাজারের বেশি ইয়াজিদিকে হত্যা এবং ১০ হাজারের বেশি মানুষকে তুলে নিয়ে যায়৷ হামিদের পাঁচ ভাই এবং এক বোন এখনো নিখোঁজ রয়েছে৷

উত্তর ইরাকে ইয়াজিদিদের মাতৃভূমিতে জাতিসংঘ ঘর-বাড়ি করে দিলেও অনেকে মনে করেন এখন আইএস-এর হামলার ঝুঁকিতে আছেন তারা৷

হামিদের বাবা বলেন, তার পরিবার এখনো ইরাকে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে৷ বিশেষ করে মেয়ের এই কথা জানানোর পর শঙ্কা আরো বেড়েছে৷

তিনি বলেন, তারা এমন একটি দেশে যাওয়ার আশা করেন, যেখানে অন্তত নিজেদের নিরাপদ মনে হবে৷

বর্তমানে ইরাকের কুর্দিস্তানে একটি ক্যাম্পে বাবা ও মায়ের সঙ্গে আছেন হামিদ৷ তার এই নিয়তি যেন আশ্রয় প্রার্থনাকারী অন্য ইয়াজিদিদেরও না হয় সেটা নিশ্চিত করতে জার্মান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷

‘‘ওই ব্যক্তির শাস্তি হোক-এটা ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে আমি আর কিছু চাই না৷ আমি চাই তারা এটা বুঝুক যে, আমার মতো ঘটনার ভুক্তভোগী অনেক নারী সেখানে রয়েছে এবং জার্মানিতে তাদের নিরাপত্তা দিক৷''

লুইস স্যান্ডার্স আইভি/এএইচ/ডিজি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য