আক্রান্ত সাংবাদিক, আক্রান্ত গণতন্ত্র
২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ভারতীয় গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে দেখা হয়। অথচ গত পাঁচ বছরে সেই সংবাদমাধ্যমের উপরেই একের পর এক আঘাত নেমে এসেছে। খুন হয়েছেন অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক। আহত অসংখ্য। সম্প্রতি এ বিষয়েই একটি গবেষণামূলক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ঠাকুর ফাউন্ডেশন।
উর্বশী সরকার এবং গীতা শেশু রিপোর্টটি তৈরি করেছেন গোটা দেশের আক্রান্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে। গিয়েছেন নিহত সাংবাদিকদের পরিবারের কাছেও। তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১৯৮ জন সাংবাদিকের উপর আক্রমণ হয়েছে। তার মধ্যে শুধু ২০১৯ সালেই আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬জন। উর্বশীর কথায়, ''রিপোর্ট যখন প্রকাশ করা হল তখনও একের পর এক ঘটনায় আক্রান্ত হয়ে চলেছেন সাংবাদিকরা। সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে, সেখানেও পুলিশের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন সাংবাদিকরা।''
রিপোর্টের তথ্য সত্যি সত্যিই আশঙ্কার। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০ জনের মধ্যে ৩৬ জন সাংবাদিকই নিহত হয়েছেন রাস্তায় নেমে কাজ করার সময়। বাকিরা বিভিন্ন তদন্তমূলক সংবাদের কাজ করছিলেন। সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এত খুন এত আক্রমণ সত্ত্বেও কার্যত কেউ বিচার পাননি। রিপোর্ট বলছে, ৬৩টি এ ধরনের ঘটনার মধ্যে পুলিশ এফআইআর নিতে রাজি হয়েছে মাত্র ২৫টি ক্ষেত্রে। যার মধ্যে তদন্ত সামান্য হলেও এগিয়েছে ৭টি মামলায়। ১৮টি মামলা ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে। যে মামলাগুলি এগিয়েছে, তাও চার্জশিট হওয়ার পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে। রিপোর্টের দাবি, এর থেকেই বোঝা যায়, প্রতিটা মামলাতেই অভিযুক্তরা প্রভাবশালী। আর যে সমস্ত ঘটনায় সাংবাদিকরা পুলিশ এবং প্রশাসনের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন, সে সব ক্ষেত্রে কোনও মামলাই হয়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরও ঘটনাগুলি নথিভুক্ত করেনি।
আরও একটি আশঙ্কাজনক বিষয় সামনে এসেছে এই রিপোর্টে। যে সমস্ত আক্রান্তের পরিবারের সঙ্গে উর্বশীরা কথা বলেছেন, তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, ঘটনার পর পাশে থাকলেও মামলার ক্ষেত্রে আক্রান্ত সাংবাদিকদের পাশে থাকতে চাইছে না সংবাদ সংস্থাগুলি।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যত দিন যাচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রবণতাও তত বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে পেশাদার সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ আরও বাড়বে।