আগুনের ঝুঁকিতে বেঁচে থাকা এবং আমাদের দায়
২৩ এপ্রিল ২০১৯আদি মানবেরা আগুন আবিষ্কার করেছিলো লক্ষ লক্ষ বছর আগে৷ ক্রমান্বয়ে মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণ করে খাবার ঝলসে খেতে, তাপ ও আলো পেতে এবং শিকারিদের দূরে রাখতে শিখলো৷ আগুন মানব জীবনে এত বড় আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, কিছু মানুষ আগুনের পূজা পর্যন্ত করতো৷
বৈদিক যুগের তিন প্রধান দেবতার একজন হলেন অগ্নি; তিনি মর্ত্যের দেবতা, অন্য দু'জন হলেন স্বর্গের ইন্দ্র এবং অন্তরীক্ষের বরুণ৷ অগ্নিকে বলা হয় দেবতাদের মুখ বা দূত৷ কারণ, যজ্ঞে যে আহুতি দেওয়া হয় তা অগ্নির মাধ্যমেই অন্য দেবতারা পেয়ে থাকেন৷ বৈদিক ঋষিরা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, আগুন, অর্থাৎ তাপ হচ্ছে জীবনের উৎস এবং জীবের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান এবং সে কারণেই অগ্নিকে দেবতা হিসেবে পূজার প্রচলন শুরু হয়৷ অগ্নি একাধারে যজ্ঞ, গৃহ ও অন্নের অধিপতি৷
উপনিষদের ব্রহ্মা-র মতো অগ্নি সর্বভূতে বিরাজমান৷ আধুনিক যুগেও খাবার তৈরি, তাপ ও আলো দেওয়ার পাশাপাশি আগুন কখনো মোমবাতি বা মশালে প্রতিবাদের প্রতীক, আবার কখনো ফানুস বা আতশবাজিতে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ৷ নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, বিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের আজকের মানুষে পরিণত হওয়ায় আগুনের ভূমিকা অপরিসীম৷
এক সময় আমাদের এই উপমহাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সতীদাহ বা সহমরণ প্রথা চালু ছিল৷ স্বামী মরে গেলে স্ত্রীকেও চিতায় উঠতে হতো৷ রামমোহন-বিদ্যাসাগর প্রমুখ মহামহিম ব্যক্তির কল্যাণে সমাজ থেকে সতীদাহ বা সহমরণ প্রথা উঠে গেছে৷
তবে যুগের পরিবর্তনে ‘পতিহারা সতী নারী' নয়, উচ্ছেদের নামে আগুন দেওয়া হয় গরিবের আবাস বস্তিতে৷ সতীদাহ হতো প্রকাশ্যে৷ আর বস্তি-দাহ করা হয় গোপনে৷ তবে শুধু বস্তিতেই আগুন দেওয়া হয় না, বিভিন্ন জনের বাড়িঘরে, এমনকি অফিসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ আগুন এখন স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার৷ ক্ষোভ প্রকাশ, ষড়যন্ত্র নথিপত্র গায়েব করার জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া একটি লাগসই প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে৷
তবে আগুন বড়ই মারাত্মক জিনিস৷ আগুন জ্বলে, জ্বালায়৷ আগুন লাগে, আবার লাগানোও হয়৷ কোনটা যে লাগে আর কোনটা যে লাগানো হয় এই রহস্যঘেরা দেশে এটা বেশিরভাগ সময়ই জানা যায় না৷ দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা রকম আগুনের দেখা পাই৷ চুলার আগুন, চিতার আগুন, বনের আগুন, মনের আগুন, ক্ষোভের আগুন, লোভের আগুন, দেহের আগুন, চোখের আগুন৷ জ্ঞাত আগুন, অজ্ঞাত আগুন৷ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুন৷ এই ‘শর্ট-সার্কিটের আগুন' খুবই অভিনব ও রহস্যময়৷ আগুন লাগার পর যদি তার উৎস সম্পর্কে কোনো রকম কূল-কিনারা করা না যায় তখনই বলা হয়, এটা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুন!
আমাদের দেশে অনেক সময় শ্বশুরবাড়িতে মেয়েদের মেরে-পিটিয়ে হত্যা করে যেমন ‘আত্মহত্যা' বলে চালানো হয়, আগুন লাগানোর বেশিরভাগ ঘটনার ক্ষেত্রে ‘শর্টসার্কিট' হিসেবে চালানো হয়! বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুন সত্যিই অনেক ধন্বন্তরী৷ বহু ষড়যন্ত্রকারীর পিঠের চামড়া বাঁচানোয় তা যুগে যুগে ভূমিকা পালন করেছে৷
যা হোক, আগুনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাই এখন আমাদের জীবনে বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে৷ দেশে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে৷ সেসব আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে মানুষ এবং সম্পদ৷ যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন বেশ হৈ-চৈ হচ্ছে৷ দেশজুড়ে আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে, সবাই নড়েচড়ে বসছেন, কর্তৃপক্ষ পরিত্রাণের উপায় খুঁজছেন, তদন্ত কমিটি হচ্ছে, তদন্ত কমিটি রির্পোট জমা দিচ্ছে, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারপর আবার সব চুপচাপ৷ আবার যখন কোনো জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে, তখন আগুন লাগার কারণের চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়৷ সেই নিমতলী থেকে মানুষ পুড়ছে, তারপর চকবাজার আর তারপর বনানীর এফআর টাওয়ার৷
শুধু রাজধানীই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই প্রায় ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে৷ সেসব আগুনে মানুষ না পুড়লে পুড়ছে মানুষের স্বপ্ন৷ অগ্নিকাণ্ড এখন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ কেন এত ঘনঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে সে প্রশ্নই এখন সবার মনে৷ কিন্তু আগুনের ধোঁয়ার মতোই এর উত্তরও ধোঁয়াশায় ভরা৷
ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএসএসএবি)-এর তথ্য মতে, দেশে প্রতি বছর আগুনে ২৩৩ জন মানুষ মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন৷ আহত হচ্ছেন প্রায় পাঁচ হাজার৷ এছাড়া আগুনে প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত হচ্ছে৷ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে৷ গত ৮ বছরে সারা দেশে ১ লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৯২৮ জন৷ আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮২৫ জন৷ ক্ষতির পরিমাণ সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি৷ সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে ঘটছে৷ এসব অগ্নিকাণ্ডের ভেতর ১ হাজার ৪১১টি অগ্নিকাণ্ডের কোনো কারণ জানা যায়নি৷ দেশে বিদ্যুৎ ও আগুনের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও বাড়ছে৷ কিন্তু আমরা সচেতন হচ্ছি না৷ এ কারণে আগুন লাগছে, ক্ষয়-ক্ষতি বাড়ছে, সেগুলো সমাধানের পথে হাঁটছি না৷
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর নিমতলী ও চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে৷ এই দুই এলাকার দুরুত্ব বেশি নয়৷ দুই জায়গাতেই আগুনের সূত্রপাত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে৷ আর আগুন দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করেছিল কেমিক্যালের কারণে৷ নিমতলীতেও ভয়াবহ আগুনের পেছনে এই কেমিক্যাল ছিল৷ নিমতলীর এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মারা যাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ তদন্ত কমিটি সেখান থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোসহ ১৭টি সুপারিশ করেছিল৷ তারপর বহু বছর পার হয়ে গেছে, সুপারিশ কাগজেই রয়ে গেছে৷ তারপর চকবাজার ট্রাজেডি এবং বনানী ট্র্যাজেডি৷ এবারও তদন্ত কমিটি হয়েছে৷ সেই সুপারিশ এবং তা বাস্তবায়নের কথা ঘুরেফিরেই আসছে৷ কারণ, সুপারিশ যদি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে সেই সুপারিশে মানুষের লাভ কোথায়? মানুষ শুধু তদন্ত কমিটি দেখতে চায় না৷ মানুষ চায়, তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা তা দেখতে৷
কোনো ঘটনা থেকে কেবল শিক্ষা নিয়ে বসে থাকলেই পরবর্তী ঘটনা আটকানো যায় না৷ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তার যথাযথ কারণ বের করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই যে কোনো সভ্য সমাজের রীতি৷ কিন্তু আমরা তা করি না৷ আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন আইন মেনে চলার অভ্যেস নেই, সাধারণ মানুষকে আইন মানানোর বাধ্যকতা সৃষ্টির জন্য যে সব কর্তৃপক্ষ আছেন, তারাও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেন৷ অনেক ক্ষেত্রে টাকা খেয়ে সব অনিয়মকে জায়েজ করে দেন৷ ফলে একের পর এক ট্রাজিক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে৷
আসলে আইন বা নিয়ম না-মানার কারণেই আমাদের দেশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে৷ একের পর এক বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে একটার সঙ্গে আরেকটার গা ঘেঁষে৷ কোনো নিয়মের তোয়াক্কা ছাড়াই গড়ে উঠেছে ভবন৷ উপর মহলকে ‘ম্যানেজ' করে দশ তলা বিল্ডিংয়ের অনুমতি এনে গড়ে তুলছে পনেরো তলা ভবন৷ যে এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৫ জন মানুষ পুড়ে ছাই হলো, সেই ভবনের ২২ তলা পর্যন্ত অনুমতিই ছিল না৷ তাহলে কোন ক্ষমতারবলে তারা ভবন ২২ তলা পর্যন্ত করেছিল? আমাদের দেশে ক্ষমতাশালীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যায় আর দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হয় সাধারণ মানুষকে৷ হাতেগোনা দু-একটা ছাড়া ঢাকার বহুতল ভবনগুলোয় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই৷ নেই ঠিকঠাক জরুরি নির্গমন ব্যবস্থাও৷ আর আইন অমান্য এবং বিল্ডিং কোড যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় বিল্ডিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে৷
আমাদের দেশে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলিতেও নিয়মিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু এসব কারখানায় সব সময়ই দেখা যায়, আগুন লাগলে ভবন থেকে বের হবার পর্যাপ্ত সিঁড়ি, দরজা এবং ঝুলন্ত সিঁড়ি (ফায়ার এক্সিট) থাকে না৷ ফলে বের হতে না পেরে আগুনে পুড়ে, পদদলিত হয়ে অথবা উঁচু ভবন থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লাফ দিয়ে, অকালে প্রাণ হারান শ্রমিকরা৷
দেশে আইন আছে প্রতিটি কারখানায় পর্যাপ্ত দরজা থাকতে হবে, প্রশস্ত সিঁড়ি থাকতে হবে৷ বিল্ডিংয়ের উপরের তলাগুলো থেকে দ্রুত বের হওয়ার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ঝুলন্ত সিঁড়ি (ফায়ার এক্সিট) থাকতে হবে৷ শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি অগ্নি নির্বাপণের যন্ত্রপাতিসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ কিন্তু অনেক গার্মেন্টস মালিক এসব আইন-কানুন মানছেন না৷ যাঁরা মানছেন, তাঁরা পুরোপুরি মানছেন না৷ এক্ষেত্রে অবহেলাজনিত কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দায়-দায়িত্বও তাঁদের ওপর বর্তায়৷ এমনকি যেসব কর্তৃপক্ষের এইসব আইন কার্যকর করার কথা, তারাও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না৷ আমাদের দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল৷ বিশেষ করে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে৷ যে ক্ষেত্রে আগুন নেভানো, মানুষকে সরিয়ে নেওয়া এবং জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা দরকার, সেসব ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো প্রস্তুতি নিতে হবে৷
সমালোচনা হচ্ছে অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়েও৷ এ মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থার আধুনিকায়ন৷ অগ্নিনির্বাপণে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পানির পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা৷ কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পানি সরবরাহের সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা গেছে৷ তাই অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন হতে পারে একটি কার্যকর উদ্যোগ৷
অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় দ্রুত পানি সরবরাহের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পাম্পযুক্ত পানিকল) স্থাপন করা খুবই জরুরি৷ কারণ, ফায়ার হাইড্রেন্ট হচ্ছে পানির একটি সংযোগ উৎস, যা পানির প্রধান উৎসের সঙ্গে যুক্ত থাকে৷ যে-কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এই উৎস থেকে পানি ব্যবহার করা যায়৷ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, লম্বা পাইপের সাহায্যে ইচ্ছেমতো যে-কোনো দূরত্বে পানি সরবরাহ করা যায়৷
তাছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকার যেসব রাস্তায় অগ্নিনির্বাপক গাড়ি সহজেই প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে এই ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ বেশ কার্যকর৷ এটি রাস্তার ধারে স্থাপিত এক ধরনের পানির কল বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প, যেখান থেকে প্রয়োজনের সময় পানি ব্যবহার করা যায়৷
আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আরেকটি ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ প্রতিটি রেজিস্ট্রার্ড কোম্পানির দপ্তরকে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বাঙ্গীন ভবন বিমা (কমপ্রিহেন্সিভ বিল্ডিং ইন্স্যুরেন্স) নিতে বাধ্য করা৷ বড় ব্যাংক-ঋণের জন্যও এই বিমা বাধ্যতামূলক করা যায়৷ এই বিমার পলিসির শর্ত হিসাবে প্রয়োজনীয় ইমারত সুযোগ-সুবিধা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিধি সংযুক্ত করা যায়৷ বিমা কোম্পানিগুলো নিজ স্বার্থেই এসব ভবন পুঙ্খণুপুঙ্খভাবে পরিদর্শন ও সংরক্ষণের জন্য চাপ দেবে৷ ভবনের সামনেই ভবনটি কোনো বিমা কোম্পানি কর্তৃক বিমাকৃত ও ভবনের নিরাপত্তা পরিদর্শন-সংক্রান্ত তথ্য প্রদর্শন করতে হবে৷ বিমা কোম্পানিগুলো নিয়মিত তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদন জয়েন্ট-স্টক রেজিস্ট্রার ও সিকিউরিটিজ-এক্সচেঞ্জ কমিশনে দেবে৷ এই সংক্রান্ত ‘জোচ্চুরি' ঠেকাবার জন্য অবশ্যই বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷
মূল কথা হলো, যেহেতু আগুন লাগলে বিমা কোম্পানির ক্ষতি হবে, কাজেই তারা তৎপর থাকবে যাতে ভবন মালিকরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন৷ আবার অগ্নিনির্বাপণ ঝুঁকির উপর যেহেতু বিমার চাঁদার পরিমাণ নির্ভর করবে, সেহেতু ভবন মালিকরাও চাইবেন ঝুঁকি কমাতে৷ এই পদ্ধতি প্রথম-প্রথম বড় কোম্পানির বেলায় চালু করা গেলে পরে হয়তো সব ভবনের জন্যই করা যাবে৷
আগুনের ব্যাপারে আমাদের আসলে আরো সাবধান হওয়া উচিত৷ আগুন কেবল জ্বালাতেই জানে৷ এই অগ্নিক্ষুধা এতটাই একপাক্ষিক ঘটনা যে, জান-মালসহ কিছুই আর অবশিষ্ট রাখে না৷ আগুন আর লোভ বাড়তে দিলে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে৷ কাজেই আগুন যেন না লাগে, তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব কিছুই করতে হবে৷ আগুন নিয়ে ‘প্রতিশ্রতির খেলা' বন্ধ করতে হবে এখনই, তা না হলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই একদিন পুড়ে-ছারখার হয়ে যাবে৷
পুনশ্চ: ইন্টারভিউ বোর্ডে একজন চাকরিপ্রত্যাশীকে এক প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন করলেন, ‘‘কল্পনা করো তো, তুমি একটা ২০ তলা বাড়ির ১৫ তলায় আছো৷ এমন সময় ভীষণ আগুন লেগে গেল, সবাই ছোটাছুটি শুরু করল, তুমি কী করবে?''
চাকরিপ্রার্থী: আমি কল্পনা করা বন্ধ করব!
ঢাকা শহরে বিল্ডিং-কোড না মানা হাজার হাজার বহুতল ভবনে যদি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চলতেই থাকে, তাহলে কী হবে? আপাতত ‘কল্পনা বন্ধ' করা ছাড়া অন্য কোনো কিছু চিন্তা করা যাচ্ছে না!