আঙ্কারা, ইস্তানবুলে এরদোয়ান-বিরোধীদের জয়
১ এপ্রিল ২০১৯সোমবার প্রকাশিত ফলে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ শহরে এরদোয়ানের জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন৷ কিন্তু আঙ্কারায় বড় জয় নিশ্চিত করেছে এবং ইস্তানবুলে জয়ের পথে প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থী৷
শুরুতে দুই দলই তুরস্কের সবচেয়ে বড় ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহরটিতে জয়ের দাবি করেছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে দেশটির নির্বাচন কমিশন জানায় বিরোধী দল এখানে এগিয়ে আছে৷
৩০টি বড় শহর, ৫১টি প্রাদেশিক রাজধানী এবং ৯২২টি জেলায় প্রায় ৬ কোটি ভোটার ভোট দেন৷ নির্বাচনটিকে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তার একটি পরীক্ষা হিসেবেই দেখা হচ্ছিলো৷
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এরদোয়ানের ইসলামপন্থি দল দেশজুড়ে ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে, অন্যদিকে বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি- সিএইচপি পেয়েছে ৩১ শতাংশ ভোট৷
ইস্তানবুলে এগিয়ে বিরোধীরা
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনাদোলু জানিয়েছে, এরই মধ্যে আঙ্কারায় ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষ৷ বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত মেয়র প্রার্থী মানসুর ইয়াভাস ৫০ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন৷ অন্যদিকে, একেপি পার্টির প্রার্থী পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ০৬ শতাংশ ভোট৷
ইস্তানবুলে লড়াইটা বেশ হাড্ডাহাড্ডি ছিল৷ সোমবার সকালে তুরস্কের সুপ্রিম ইলেকশন বোর্ড জানায় বিরোধী প্রার্থী একরেম ইমামোগলু একেপির বিনালি ইলদিরিমের চেয়ে ২৮ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন৷
তবে শহরটিতে কত শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে, তা জানাননি নির্বাচন কর্মকর্তারা৷
এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ‘গণভোট'
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের অতীত নির্বাচনি সাফল্যের মূলে ছিল শক্তিশালী অর্থনীতি৷ কিন্তু তুর্কি লিরার ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া, মূল্যস্ফীতি, এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন এরদোয়ানের দলকে ফেলছে চ্যালেঞ্জের মুখে৷
রোববার রাতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এরদোয়ান এখনও তাঁর দলকে দেশের ‘এক নম্বর দল' হিসেবে তুলে ধরেন৷ কিন্তু একই সঙ্গে মেয়র নির্বাচনে কিছুটা পিছিয়ে থাকার কথাও স্বীকার করে নেন তিনি৷
কিছু শহরে হারের আশঙ্কা প্রকাশ করেন এরদোয়ান৷ এর কারণ হিসেবে কিছু ভোটারের কাছে দলের অবস্থান তুলে ধরতে না পারার কথাও বলেন তিনি৷ আঙ্কারায় এরদোয়ান বলেন, ‘‘যদি আমাদের কোনো ব্যর্থতা থেকে থাকে, আমাদের দায়িত্ব হলো তা সমাধান করা৷''
অভিযোগ, সহিংসতা
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত হয়েছেন দুই জন, আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত৷ মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করলেও এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি যাতে না হয়, সে আশাও প্রকাশ করেছেন তিনি৷
নির্বাচনি প্রচারণায় বিরোধী দলকে দেশের শত্রু বলে উল্লেখ করেছেন এরদোয়ান৷ দেশটির অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্যও দেশের ভেতরে ও বাইরে শত্রুদের দায়ী করেন তিনি৷
কুর্দিপন্থি বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি- এইচডিপি বিভিন্ন শহরে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কট করেছে৷ দলটির বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ এনে নির্বাচনের আগেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷ এর ফলে নির্বাচনের মাঠ ‘সবার জন্য সমান' ছিল না বলে দাবি করেন দলটির নেতারা৷
নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রচারণার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পায়নি বিরোধী দলগুলো৷ বেশিরভাগ গণমাধ্যমই সরকারপন্থি অথবা এরদোয়ানের সমর্থক৷ ফলে গণমাধ্যমে বরাবরই বেশি সময় পেয়েছে এরদোয়ানের প্রচার-প্রচারণার সংবাদ৷
২০১৫ সালে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর নিজের হাতে ক্ষমতা আরো কেন্দ্রীভূত করেন এরদোয়ান৷ মানবাধিকার সংস্থা, সুশীল সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেশ কঠোর ব্যবস্থাও নেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট৷
এডিকে/জেডএইচ (এপি, রয়টার্স, এএফপি)