আঞ্চলিক সহযোগিতা
৫ জানুয়ারি ২০১৩
ভবিষ্যতের স্বপ্ন এক, আর বাস্তব বর্তমান এক৷ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এশিয়া বাস্তবিক কতটা প্রগতি করতে পেরেছে, এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমিনা মোহসিন বলেন:
‘‘এখানে সংহতির কথা যদি আমরা দেখি, আমরা দু’টো পরস্পরবিরোধী ধারা লক্ষ্য করছি৷ একদিকে আমরা দেখছি যে, বিশ্বায়নের কারণে এবং প্রাইভেটাইজেশন’’ (অর্থাৎ বি-রাষ্ট্রীকরণ, বা শিল্পসংস্থা ও পরিষেবা সরকারি মালিকানার পরিবর্তে ব্যক্তিগত মালিকানায় দেবার প্রবণতা) ‘‘এই দুই কারণে একটা বেশ চাপ পড়ছে, যার ফলে অর্থনৈতিক সংহতির কথা বলা হচ্ছে৷ সার্কের বিভিন্ন ফোরামে আমরা দেখছি যে, এরা চাচ্ছে একটা আঞ্চলিক সহযোগিতা৷ এবং সেটার কিন্তু প্রচণ্ড সম্ভাবনা আছে৷’’
বিশ্বায়নের যে বেশ কিছু সমস্যা উপলব্ধি করা যাচ্ছে, দাঁড়িপাল্লায় তার বিকল্প ওজন হিসেবেই যেন আঞ্চলিক সহযোগিতা থেকে প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে৷ কিন্তু সার্ক থেকে আমরা এ যাবৎ কি এবং কতটুকু পেয়েছি? প্রফেসর আমিনা মোহসিন বললেন, বৈঠক ও বিভিন্ন ফোরামের পর্যায়ে সার্ক অনেকটা এগিয়ে গেলেও আমলাতন্ত্র এবং বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সরকাররা চাপে থাকেন এবং সদিচ্ছা থাকলেও যতটা চাইছেন, ততটা এগিয়ে যেতে পারেন না৷ রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান না হলেও, সেগুলো নিয়ে যদি অন্তত খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা হতো, তাহলে অনেক বেশি অর্থনৈতিক অগ্রগতি হতে পারতো৷
তবে প্রফেসর মোহসিন যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী, সেটি হল এই যে, গোটা প্রক্রিয়াটির ফলে একটি ‘‘দক্ষিণ এশীয় চেতনা’’ জন্ম নিতে শুরু করেছে, একটি দক্ষিণ এশীয় ‘‘সত্তা’’ গড়ে উঠতে শুরু করেছে৷
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন সম্প্রতি বলেছেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷ জলবায়ু পরিবর্তন, মানুষ কি মাদক পাচার এবং সন্ত্রাসবাদের মতো সমস্যার মোকাবিলা করা কোনো দেশের পক্ষে একা সম্ভব নয়৷ এটাই কি সার্কের মতো গোষ্ঠীর ভিতরে সংহতির সূত্র হতে পারে না?
সার্কের সার্থকতা ঠিক সেখানেই, বলে আমিনা মোহসিন মনে করেন৷ ঐ ধরণের বিষয়গুলি নিয়ে সার্কের বিভিন্ন সম্মেলনে আলোচনা হওয়ার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের মনে একটা সচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে৷ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম এবং সাংসদদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি হচ্ছে৷ ‘‘আঞ্চলিকতার ক্ষেত্রে সার্কের এটা একটা বড় অবদান৷’’
সাক্ষাৎকার: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ