1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদালতে অবমাননার মামলায় জড়ালেন মমতা, অভিষেক

৩০ এপ্রিল ২০২৪

মমতার পর অভিষেক। ফের আদালত অবমাননার মামলা তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। সোমবার পর্যন্ত গ্রেপ্তারির আশঙ্কা না থাকলেও নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অস্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গের শাসক নেতৃত্ব।

https://p.dw.com/p/4fMcS
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রায়কে 'বেআইনি' বলেছেন। শাসকদলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সঙ্গে আদালতের যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেনছবি: Satyajit Shaw/DW

স্কুলের নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি। এই মামলায় প্রায় ২৬ হাজার নিয়োগপ্রাপ্তের চাকরি বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্ট। অযোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগ্যদেরও চাকরি চলে গিয়েছে। নিজেদের দায় এড়িয়ে এই রায়ের তুমুল সমালোচনা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তা করতে গিয়ে আদালতের বিরুদ্ধেও কথা বলছেন তারা৷

আদালত অবমাননার মামলা

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সমালোচনা শুধু রায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সরাসরি বিচারপতি, আদালত ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রায়কে 'বেআইনি' বলেছেন। শাসকদলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সঙ্গে আদালতের যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন।

সাবেক বিচারপতি, এখন বিজেপির প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিশানা করে অভিষেক বলেন, ‘‘একজন বিচারপতি থাকাকালীন বলেছেন, ‘বিজেপি অ্যাপ্রোচ মি, আই অ্যাপ্রোচ বিজেপি'। তার মানে বিজেপির সঙ্গে তিনি যোগাযোগে ছিলেন। আর সেই বিচারপতি যদি বিজেপিতে যান, তাহলে কলকাতা হাইকোর্টকে তুলে দেওয়া উচিত।''

শীর্ষ নেতারা বিচারপতিদের সম্পর্কে যা খুশি বলছেন: রাজাগোপাল

দুজনের বিরুদ্ধেই কলকাতা হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করেছেন একাধিক আইনজীবী। মামলাকারীদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী।

বিকাশরঞ্জনের বক্তব্য, "দুর্নীতি করলে আদালত ব্যবস্থা নেবে, এটাই স্বাভাবিক। সেজন্য আদালতের দিকে আঙুল তোলা সমীচীন নয়। এভাবে চললে গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে পড়বে।"

আদালত বলেছে, অভিষেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আলাদা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের হয়েছে, তার সঙ্গে অভিষেকের মামলাটিও যোগ করা হবে।

আইনজীবীরা বলছেন, যেভাবে তৃণমূলের নেতারা আক্রমণ শানাচ্ছেন, তাতে আদালতের স্বতপ্রণোদিত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে আদালত কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার। যদিও তৃণমূলের দাবি, আদালতের সমালোচনা করা হয়নি, তারা রায়ের সমালোচনা করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "ভারতের গণতন্ত্র আজকে যে পরিণত অবস্থায় আছে, তার কারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের বিচার ব্যবস্থার প্রতি অসামান্য শ্রদ্ধা। এখন দেখা যাচ্ছে, শাসক দলের শীর্ষ নেতারা বিচারপতিদের সম্পর্কে লাগাতার যা খুশি বলছেন। এখন ছোটখাটো নেতারাও বলছেন। এরপর সাধারণ মানুষও পছন্দমতো রায় না পেলে, বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করবে। এতে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়বে।"

সুপ্রিম কোর্টে শুনানি

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার, পর্ষদ ও স্কুল সার্ভিস কমিশন। তার প্রথম শুনানি হয়েছে গতকাল।

প্রাথমিক শুনানির ভিত্তিতে আদালত হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়নি। বিশেষত চাকরি খারিজের বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। শীর্ষ আদালতে রায়ের একটি অংশের উপর তারা স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

বেআইনিভাবে যারা চাকরি পেয়েছেন, তাদের বহাল রাখার জন্য রাজ্য সরকার অতিরিক্ত বা 'সুপার নিউমেরারি পোস্ট' তৈরি করেছিল। এই পদ সৃষ্টি বেআইনি বলে আদালতে সওয়াল ওঠে। হাইকোর্ট রায়ে বলেছে, অতিরিক্ত পদ তৈরির নেপথ্যে যারা ছিলেন, তাদের প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করে তদন্ত চালাতে পারবে সিবিআই।

এই অংশটি নিয়ে রাজ্যের কৌঁসুলি গতকাল শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন চলাকালীন গোটা মন্ত্রিসভা কি জেলে চলে যাবে!

তৃণমূল কংগ্রেসকে স্বস্তি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এর বেঞ্চ বলেছে, এ বিষয়ে আচমকা কোনো পদক্ষেপ আপাতত নিতে পারবে না কেন্দ্রীয় সংস্থা।

এই মামলার পরের শুনানি আগামী সোমবার। ততদিন পর্যন্ত তৃণমূল মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না সিবিআই।

এতে শাসক দল সাময়িক স্বস্তি পেলেও চাকরিহারা শিক্ষকদের উদ্বেগ কাটেনি। চাকরি বাতিলের মূল প্রশ্নটি নিয়ে ইতিবাচক কোনো ইঙ্গিত মেলেনি প্রথম দিনের শুনানিতে। বরং প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ গতকালের শুনানিতে এমন কিছু পর্যবেক্ষণ করেছেন, যা চাকরিহারা যোগ্য প্রার্থীদের চিন্তা বাড়িয়েছে।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, "চাকরি যাওয়া ২৫ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর মধ্যে যারা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাদের কি আলাদা করা সম্ভব?" এর সঙ্গে তার মন্তব্য, "পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। যারা প্যানেলে ছিলেন না, তাদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি প্রতারণা।"

প্রশ্নে ওএমআর

অযোগ্যদের সঙ্গে যোগ্যদেরও চাকরি চলে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। হাইকোর্ট বলেছে, যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ২০১৬ সালের গোটা প্যানেল বাতিল করতে হয়েছে।

যে ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে প্যানেল তৈরি হয়েছিল, সেগুলি থাকলে যোগ্য ও অযোগ্যদের সহজে আলাদা করা যেত। কিন্তু কমিশন সেসব নষ্ট করে ফেলায় সেই পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে অযোগ্যদের চিহ্নিত করা যাবে?

আইনজীবী ফিরদৌস শামীম বলেন, "স্কুল সার্ভিস কমিশন হাইকোর্টে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি। সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ওএমআর শিটের ভিত্তিতে কমিশন তথ্য দিয়েছে। যাতে দুর্নীতি ধরা না পড়ে, সেজন্য ওএমআর নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও প্যানেল বহির্ভূত ভাবে চাকরি দেয়া হয়েছে। অনেকের সাদা খাতা জমা দিয়ে কিংবা ক্রম তালিকায় আগে থাকা প্রার্থীকে টপকে চাকরি পেয়েছেন।"

তৃণমূল সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "ওএমআর শিট একটা সময়ের পর নষ্ট করে ফেলা যায়। এটা কমিশনের নিয়মেই আছে। এই সংক্রান্ত সওয়াল এখনো সুপ্রিম কোর্টের সামনে আসেনি।" কিন্তু কতদিন এই শিট সংরক্ষিত রাখা হয়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহবায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, "সিবিআই তদন্ত শুরু করার পর একজন চাকরিপ্রার্থী আরটিআইয়ের মাধ্যমে নিজের ওএমআর হাতে পেয়েছেন। একটি শিট যখন বার করা গিয়েছে, তখন বাকিগুলো সম্ভব। কমিশন সেটাই করুক। এ রাজ্যে যেভাবে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি হয়েছে, তা দূর করার জন্য সম্পূর্ণ তথ্য সামনে আনা দরকার।"

এমন অনিশ্চয়তা নিয়ে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুলে নিয়োগপ্রার্থীরা। চাকরিহারা অনামিকা রায়ের প্রশ্ন, "কমিশন আগেই তথ্য হাইকোর্টে দিয়ে দিলে বিষয়টা সুপ্রিম কোর্টে যেত না। আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে কেন রাখা হল? অযোগ্যদের জন্য কেন আমরা বঞ্চিত হব?"

এই প্রশ্নের সমাধান মেলেনি হাইকোর্টে। ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, চাল থেকে কাঁকর আলাদা করা যাচ্ছে না। সুপ্রিম কোর্টের প্রাথমিক শুনানিতে প্রধান বিচারপতির কন্ঠে কার্যত এরই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে। এখন নজর আগামী সোমবারের শুনানিতে।

......

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য