আদালতে আর্জি বেপাত্তা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শাহজাহানের
১৬ জানুয়ারি ২০২৪সন্দেশখালিতে অশান্তির ১০ দিন পরেও অধরা তৃণমূল নেতা। গত ৫ জানুয়ারি সুন্দরবন লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে রেশন দুর্নীতির তদন্তে যায় ইডি। কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিক থেকে সাংবাদিক ও আধাসেনা জওয়ানরাও আক্রান্ত হন। তারপর থেকে মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আজ, মঙ্গলবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় ধরা পড়েছেন সাতজন।
আদালতে প্রশ্ন
সন্দেশখালিতে গন্ডগোলের পরিপ্রেক্ষিতে ইডি স্থানীয় থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করে। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য লঘু ধারা দেয় পুলিশ। যদিও একটি পাল্টা অভিযোগের ভিত্তিতে ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়। এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় সংস্থা।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা আগে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ইডির বিরুদ্ধে আপাতত কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা।
বিচারপতি সেনগুপ্তের এজলাসে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সোমবার জানান, মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত প্রশ্ন করে, এখন কে তদন্ত করছে? তিন হাজার অভিযুক্ত, চারজন গ্রেপ্তার কেন?
বিচারপতি পুলিশের দিকে আঙুল তোলেন। বলেন, ৩০৭ ধারা কেন যোগ করা হয়নি? এখনও কেন ন্যাজাট থানার পুলিশকে তদন্তে রাখা হয়েছে? এতদিনেও মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়নি! এই ঘটনার কেস ডায়েরি তলব করেছে হাইকোর্ট।
উল্টে সোমবার আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে নিজের বক্তব্য রাখার আর্জি জানান শেখ শাহজাহান। এ কথা শুনে আইনজীবীকে বিচারপতি সেনগুপ্তের প্রশ্ন, আপনার মক্কেল আত্মসমর্পণ করছেন না কেন? শাহজাহানের আইনজীবী এজলাসের মধ্যে এজি-কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি।
শাহজাহানের বাহিনী
শাহজাহান শেখ দেশের বাইরে পালিয়ে গিয়েছেন বলে অনেকদিন ধরেই জল্পনা শোনা যাচ্ছে। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কড়া কথা শোনা গিয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের মুখে। কিন্তু শাহজাহান এখনো নাগালের বাইরে। তার অনুগামীদেরও ধরা হয়নি বলে অভিযোগ।
সন্দেশখালির ঘটনায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা আদৌ জড়িত নন বলে তাদের আইনজীবী দাবি করেছেন। তার বক্তব্য, আসল অপরাধীদের আড়াল করার জন্য পুলিশ নিরপরাধদের গ্রেপ্তার করছে। সেই কারণে পুলিশ ধৃতদের হেফাজতে চায়নি।
আইনজীবীর বক্তব্য, যাদের সেদিনের হামলায় ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, তাদের এখনো পুলিশ ধরেনি। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যারা প্রকৃত অপরাধী, তারা আর এলাকায় নেই। নিরীহদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ দেখাতে চাইছে যে তদন্ত চলছে। এনআইএ তদন্ত এড়াতে এই চেষ্টা।’’
ঘটনার দিন আক্রান্ত ইডি আধিকারিকদের হেফাজত থেকে ল্যাপটপ, নথি খোয়া যায়। এর পিছনে ষড়যন্ত্র দেখছে ইডি। তারা এই ঘটনার তদন্ত সিবিআইকে দিয়ে করানোর আর্জি জানিয়েছে। তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেই পরপর গ্রেপ্তারি হচ্ছে, তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অন্য সংস্থাকে ডেকে তদন্ত ভেস্তে দিতে চাইছে বিজেপি।’’
শঙ্করের ডেরায়
রেশন দুর্নীতি মামলার সূত্রে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করে ইডি। ৫ জানুয়ারি রাতে তাদের হাতে গ্রেপ্তার হন বনগাঁ পুরসভার সাবেক পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। তার মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হতো বলে অভিযোগ।
সোমবার তার একাধিক ডেরায় অভিযান চালায় ইডি। তাদের দাবি, আটটি ফরেক্স সংস্থা যারা বিদেশি মুদ্রা বিনিময় করে, তারা রেশন দুর্নীতির টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে চারটি সংস্থায় তল্লাশি চালিয়েছেন তদন্তকারীরা।
শঙ্কর শুধু নিজের নামে নয়, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, মা, ভাই ও অন্যান্য পরিজনদের নামেও এই সংস্থা চালাচ্ছিলেন। ইডির দাবি, শঙ্করের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।
এসব অভিযোগের পিছনে রাজনীতি দেখছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূলপন্থী বিশ্লেষক ভাস্কর সিংহরায় বলেন, ''যারা বিজেপি বিরোধী, দেশজুড়ে সেই নেতাদের বাড়িতে ইডি-সিবিআইকে পাঠানো হচ্ছে। বিজেপির পক্ষে থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে না। এটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এই তদন্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।''
বাম ও কংগ্রেসের মতে, এটা তদন্তের নামে আইওয়াশ। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ''মাথাদের ধরা হচ্ছে না। পার্থ, জ্যোতিপ্রিয়, অনুব্রত থেকে শঙ্কর পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু এদের যারা নেতা, তাদের কেন রেহাই দিচ্ছে ইডি-সিবিআই?''
বিজেপি মুখপাত্র বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, ''পর্যাপ্ত প্রমাণ হাতে এলে ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্থা নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করবে। দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাকে আদালত জামিনও দেয়নি। সুতরাং, এ রাজ্যে আজ হয়নি বলে কাল হবে না, এ কথা ঠিক নয়।''