চাপের মুখেও সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড় আনিসের পরিবার
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, টেলিফোনে হত্যার হুমকিও দেয়া হয়েছে আনিসের পরিবারকে৷
ক্রমাগত হুমকি
আনিস হত্যার পর কেটে গেছে প্রায় পাঁচ দিন৷ অথচ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ৷ এরই মাঝে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে আনিসের একটি ভিডিও৷ সেখানে আনিসকে বলতে দেখা যায়, পাড়ার তৃণমূলের বুথ সভাপতি মালেক খাঁ হুমকি দিয়েছেন৷
পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি এক টেলিভিশনে চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওতে আনিসকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেবো, তা-ও দালালের কাছে আত্মসমর্পণ করবো না৷’’
সংযুক্ত মোর্চাকে সমর্থন করায় টার্গেট করা হয় বলে অভিযোগ করেন এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনের পরিচত মুখ আনিস৷ হুমকির মুখেও লাইভে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি কোন দল করবো, কাকে ভোট দেবো, তা আমার ব্যক্তিগত অধিকার৷ সেই জায়গা থেকে প্রতিহিংসার রাজনীতি করা হচ্ছে৷’’
লাইভে হামলা চালিয়ে ঘরদোর ভাঙচুরের অভিযোগও করেছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা৷ স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে৷ বুথ সভাপতির ছেলের দাবি, আনিস খান যে রক্তদান কর্মসূচি করতে চেয়েছিলেন সেখানে শুধু পাড়ার ক্লাবের নামটুকু দিতে বলা হয়েছিল, আর কিছুই বলা হয়নি আনিসকে৷
গত বছরের ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এই ফেসবুক লাইভে করেছিলেন আনিস৷ তারপর হামলা হয় বাড়িতে৷ হুমকি আসতে থাকে ক্রমাগত৷ ২৪ মে লিখিত অভিযোগ করে আমতা থানার কাছে নিরাপত্তাও দাবি করেছিলেন আনিস খান৷
ফল ঘোষণার পর স্থানীয় স্কুলে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে গিয়েই শাসক দলের নেতা-কর্মীদের রোষানলে পড়েন বলে দাবি ছিল আনিসের ৷ সেই স্কুলের অনুমতি নিয়েও অবশ্য রক্তদান শিবির করা হয়নি৷
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকে আনিস পোস্ট করেছিলেন ছাত্র ফন্টের পথসভা পুলিশের বাধায় বন্ধ হওয়ার খবর৷
সিভিক পুলিশের অত্যাচারের অভিযোগ এনেও ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন আনিস৷
আনিস নেই৷ কিন্তু তার পরিবার জানিয়েছে, হুমকি এখনো চলছে৷ এবার খুনের হুমকি দিয়ে ফোন করার অভিযোগ আনলেন আনিসের বড় ভাই সাবির খান৷ সিবিআই তদন্তের দাবি থেকে পিছু না হঠলে পুরো পরিবার-কে ‘পৃথিবী থেকে সরিয়ে' দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি৷ তিনি জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে এই হুমকি ফোনটি আসে৷ তবে তারপরও সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব রয়েছে তার পরিবার৷ আনিসের বাবা সালেম খান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পুলিশের প্রতি বিন্দুমাত্র আস্থাও তার নেই৷
ফের আনিসের বাড়িতে সিট
বুধবার সকালে আনিসের বাড়িতে আবার গিয়েছিলেন বিশেষ তদন্তরকারী দল (সিট)-এর সদস্যরা৷ নতুন করে আনিসের দেহের ময়নাতদন্ত করতে চান তারা৷ কিন্তু আনিসের বাবা সোজাসুজি তা প্রত্যাখ্যান করেন৷ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য দেহ কবর থেকে তোলার কথা বলেন পুলিশ আধিকারিকরা৷ আমতা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে নিহত ছাত্রনেতার বাবার সঙ্গে কথা বলেন৷ আনিসের দেহ কবর থেকে তুলে নতুন করে ময়নাতদন্ত করার অনুমতি দেবেন না- এ কথা তাকেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সালেম খান৷
এর আগে আনিসের ফোনটিও তিনি পুলিশের হাতে তুলে দিতে অসম্মতি জানান৷ সিবিআই কিংবা আদালত ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি না থাকায় এরাই ময়নাতদন্ত করেছিল৷ সিটকে আমি কিছুতেই মামলা করতে দেবো না৷’’
‘এসপির স্ত্রী তৃণমূল নেত্রী’ লেখায় ছাত্রনেতা আটক
আনিস খানের মৃত্যু নিয়ে ফেসবুক পোস্ট করায় আটক করা হয়েছিল অভিজিৎ ঘোষ নামে সোনারপুরের এক যুবককে৷ জানা যায়, ওই যুবক বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের কর্মী৷ সংগঠনের তরফে পোস্ট করায় পরোয়ানা ছাড়াই তাকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আনিস হত্যা সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্টে অভিজিৎ হাওড়া গ্রামীণ এসপি সৌম্য রায়ের স্ত্রী যে অভিনেত্রী এবং সোনারপুরের তৃণমূল বিধায়ক লাভলি মৈত্র তা উল্লেখ করেছিলেন৷
প্রশাসনিক তৎপরতা, তবু সিবিআই ভরসা আনিসের পরিবারের
আনিস কাণ্ডে হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ১৫ দিনের মধ্যে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে- এমন দাবিও করেছেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য৷ সিটের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনেছেন তিনি৷ পাশাপাশি আনিসের পরিবারের কাছে সহযোগিতার আবেদনও জানান মালব্য৷
এদিকে সাসপেন্ড হওয়া কর্মীদের পাশাপাশি আরো কয়েকজন পুলিশকে কলকাতার ভবানী ভবনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ সূত্র৷
বিক্ষোভ চলছে
বুধবার বিকেলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা৷ কালোদিবস পালনের ডাক দিয়েছেন তারা৷ কলেজ স্ট্রিট, যাদবপুর-সহ অনেক জায়গায় বুধবারও প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হয়েছে৷
আরকেসি/এসিবি (এবিপি আনন্দ, আনন্দবাজার, প্রতিদিন, হিন্দুস্তান টাইমস, নিউজ ১৮ বাংলা)