‘‘আন্তধর্ম শান্তি ছাড়া বিশ্বশান্তি অসম্ভব’’
৯ নভেম্বর ২০২০আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ও সংগঠনগুলোর গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ ভবিষ্যতের মহাসংকটগুলোর সমাধান বৈশ্বিক নয় বরং জাতীয়ভাবেই সমাধান সম্ভব, এমন চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করছে এসব সংগঠন৷ বর্তমান মহামারি আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে যখন সবাই আক্রান্ত, তখন সবাইকেই একে অপরের ওপর নির্ভর করতে হয়৷
একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক শান্তির জন্যও জাতীয় সীমান্ত ও স্বার্থের উর্ধ্বে উঠেই কাজ করতে হবে৷
গত প্রায় ৫০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক সংগঠন রিলিজিওন ফর পিস বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে আস্থা স্থাপনের চেষ্টায় কাজ করে চলেছে৷ তাদের লক্ষ্য একটি সবার জন্য একটি সাধারণ শান্তির বার্তা ও নৈতিক অবস্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা৷
আন্তধর্ম শান্তি ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়
একই ধরনের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে ওয়ার্ল্ড পার্লামেন্ট অফ রিলিজিওনস এর বৈঠকে একটি বৈশ্বিক নীতি ঘোষণা দেয়া হয়৷ তখনকার মূল বক্তব্যটি এখনকার জন্যও কার্যকর- ‘‘আন্তধর্ম শান্তি ছাড়া আন্তজাতি শান্তি সম্ভব নয়৷ আন্তধর্ম আলোচনা ছাড়া আন্তধর্ম শান্তি সম্ভব নয়৷ সাধারণ নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ছাড়া আন্তধর্ম আলোচনা সম্ভব নয়৷’’
জার্মানির ট্যুবিঙ্গেনে ধর্মতত্ত্ববিদ হান্স ক্যুং অনেক বছর ধরে বৈশ্বিক নৈতিকতা নিয়ে কাজ করে চলেছেন৷ এ লক্ষ্যে তিনি একটি ফাউন্ডেশনও গড়ে তুলেছেন৷ কিন্তু তার এসব কাজ গির্জার নজরে এলেও কখনও এ নিয়ে তারা বেশিদূর আগায়নি৷
২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যাসেম্বলি অফ রিলিজিওনস ফর পিস এর দশম বৈঠক বসে জার্মানির লিন্ডাউয়ে৷ এ মাসে নারী, বিশ্বাস ও কূটনীতি নিয়ে সেখানে আরেকটি আন্তর্জাতিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মহামারির কারণে এবার সেখানে সবাই অনলাইনে যুক্ত হবেন৷
ধর্মের প্রতি নতুন আগ্রহ
এই দুই আয়োজন দিয়েই ইউরোপে বিভিন্ন ধর্মের সম্ভাবনা নিয়ে আগ্রহের বিষয়টি বোঝা যায়৷ গত কয়েক দশক ধরে ইউরোপের বড় অংশে ধর্মকে উপেক্ষা করে আসা হয়েছে৷ সেক্যুলার সমাজে পাবলিক লাইফে ধর্মের গুরুত্ব নেই বলে শোনা যেত৷
কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম প্রমাণিত হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ধর্ম এখনও উপস্থিত৷ এটা উপেক্ষা করা মানে ইউরোপকে দুর্বল করা৷ ফলে ইউরোপে রিলিজিওন ফর পিস এর কর্মকাণ্ডে গতি পাওয়াটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা উচিত৷ ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ধর্মের গুরুত্ব নিয়েও ইউরোপীয়রা চিন্তা ভাবনা করছে, এটিও ইতিবাচক৷
নারীর বোঝাপড়ায় কূটনীতি
বিশ্বাসী নারী এবং শান্তি স্থাপনে তাদের কাজ লিন্ডাউয়ের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে৷ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নেয়া, নেতৃত্বের সংস্কৃতি বদলে দেয়া এবং কূটনীতির এক নতুন ধারা তৈরি করা নিয়ে আলোচনা চলছে৷ নতুন জ্ঞান, নতুন যোগাযোগ এবং সম্পর্ক কিভাবে নতুন ধরনের কূটনীতি ও শান্তি প্রক্রিয়ায় কাজে লাগতে পারে, তা নিয়ে হবে বিশেষ আলোচনা৷
মহামারির সময় আমরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করছি, অনেকেই আশা করছেন আমরা যেন তা দ্রুত ভুলে না যাই৷ আমরা যেন এই সংকট থেকে শিক্ষা নেই, ফলে এ থেকে সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে৷ সকল মানুষের প্রতি সম্মান ও সংহতি ছাড়া মানবজাতির বড় সংকটগুলোর কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান সম্ভব নয়৷
(আনেটে শাফান ২৫ বছর ধরে রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিবিদ হিসেবে কাজ করেছেন৷ ২০০৫-২০১৩ সাল পর্যন্ত জার্মানির ফেডারেল শিক্ষামন্ত্রী, ২০১৪-২০১৮ ভ্যাটিকানে জার্মান রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি৷ বর্তমানে রিং ফর পিস ফাউন্ডেশন কাউন্সিলের চেয়ারওম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷)