‘আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে জলবায়ু চুক্তি হচ্ছে না’
১৭ জুন ২০১১জার্মানির সাবেক রাজধানী বনে এখন চলছে জলবায়ু আলোচনা৷ বছর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে যে জলবায়ু সম্মেলন হতে যাচ্ছে তার পূর্ব প্রস্তুতি বলা যায় একে৷ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের কয়েকজন প্রতিনিধি৷ এঁদেরই একজন ‘অ্যাকশন এইড' সংস্থার বাংলাদেশ প্রধান ফারাহ কবীর৷ এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সম্মেলনে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর৷ তিনি বললেন, ‘‘কিয়োটো প্রটোকল শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০১২ সালে৷ ফলে এরপর থেকে উন্নত আর অনুন্নত দেশের মধ্যে জবাবদিহিতার কোনো বিষয় থাকবে না৷ তাই একটা চুক্তি খুবই প্রয়োজন৷ কিন্তু সেটা হবে কিনা, এখনো বলা কঠিন৷''
ফারাহ কবীর বলছেন দু'একটা দেশ বাদে সবাই বুঝতে পারছে যে একটা চুক্তি হতেই হবে৷ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রাজিল, ভারত৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে চুক্তিটা এখনো হচ্ছে না৷
চুক্তি না হোক, কোপেনহেগেন সম্মেলনে উন্নত বিশ্ব ২০১২ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোকে দুই হাজার আটশো কোটি ডলার দিতে চেয়েছিল৷ এরপর কেটে গেছে দেড় বছর৷ ২০১২ সাল আসতে বাকী আছে আর মাত্র ছয়মাস৷ কিন্তু বাংলাদেশ এখনো ঐ অর্থের একটিও পায়নি বলে জানালেন ফারাহ কবীর৷
বাংলাদেশ কী করছে?
বাংলাদেশের একজন জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ হলেন ড. সালিমুল হক৷ তিনি কাজ করেন লন্ডনের একটি প্রতিষ্ঠানে৷ সঙ্গে অধ্যাপনাও করছেন৷ এখন তিনি বন শহরে৷ অংশ নিচ্ছেন জলবায়ু আলোচনায়৷ তিনি বললেন, বাংলাদেশ নিজস্ব উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি এন্ড অ্যাকশন প্ল্যান' করেছে৷ সেখানে কীভাবে এই পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা যাবে তা রয়েছে৷ এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিও পেয়েছে বলে জানালেন ড. সালিম৷ তিনি বলছেন, সরকার ইতিমধ্যে নিজের তহবিল থেকে কয়েকশো কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে৷ আর উন্নত বিশ্বের কাছে অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন করেছে৷ ফলে এখন পর্যন্ত কয়েকশো মিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার পাওয়া গেছে৷
কিন্তু অঙ্গীকার পাওয়া মানেই যে টাকা পাওয়া তা তো নয়৷ তবে ড. সালিম শোনালেন আশার বাণী৷ ‘‘এই অর্থ ব্যবহারের জন্য এখন একটা অবকাঠামো দাঁড় করানোর কাজ চলছে৷ তাই টাকা আসবে সেটা বলা যায়৷''
কিন্তু যে পরিমাণ টাকা আসবে সেটা কী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যথেষ্ট? ড. সালিম বলেন, ‘‘যথেষ্ট অবশ্যই না, তবে এটা একটা শুরু৷ তবে এই তহবিলটা যেন সৎভাবে ব্যবহার করা হয়, গরীব মানুষের কাজে লাগানো যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷''
তরুণ প্রজন্মের ভাবনা
বন সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের এক তরুণ তানজির হোসেইন৷ তিনি বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে যদি একটা চুক্তি হয় তাহলেও বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে একটা ফল ভোগ করতে হবে৷ উপকূলীয় অঞ্চলের অনেককে তাদের ঘর ছেড়ে যেতে হবে৷ আর যদি চুক্তি না হয় তাহলে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে৷''
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ