‘‘আপনি কি জার্মান বলেন?’’
৮ ডিসেম্বর ২০১৪গত ২৫ বছরে জার্মান সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ দেশটিতে দিন দিন বহুসংস্কৃতির লোকের সমাগম বাড়ছে৷ সাবেক ঔপনিবেশিক দেশ ফ্রান্স, ব্রিটেন ও হল্যান্ডের মতো এতদিন জার্মানিতে অভিবাসীদের দেখা পাওয়া যেত না৷ শুরুতে দক্ষিণ ইউরোপ ও তুরস্ক থেকে ‘অতিথি শ্রমিক' হিসেবে জার্মানিতে বিদেশিরা আসতো৷ তখন ধরে নেয়া হয়েছিল যে, কাজ শেষে একটা সময় তাঁরা (অতিথি শ্রমিকরা) আবার নিজের দেশে ফিরে যাবে৷ কিন্তু সেটা তো হয়নি, বরং অন্য দেশ থেকে আরও বিদেশিরা এখানে এসে থেকে যাচ্ছেন৷ জার্মানির ব্যবসা জগতের নেতারাও দেশটির অস্বাভাবিক কম জন্মহার দেখে বেশি করে অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর আহ্বান জানাচ্ছে৷ তাঁরা স্পষ্ট করেই বলছেন, অভিবাসীদের ছাড়া জার্মানির অর্থনীতি হোঁচট খাবে৷ কারণ জন্মহার কম হওয়ায় কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা দিনদিন কমবে৷ ওইসিডি মাত্র গত সপ্তাহেই জানিয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ থেকে নাগরিকরা চাকরির সন্ধানে সবচেয়ে বেশি জার্মানিতেই পাড়ি জমাচ্ছে৷ এছাড়া রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনও এখন সবচেয়ে বেশি পড়ছে জার্মানিতে৷
এ সব কারণে অভিবাসন নিয়ে জার্মানিতে এখন ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে৷ একেবারে শুরু থেকেই চরম ডানপন্থীরা এর বিপক্ষে ছিলেন৷ একটু বয়স্ক প্রজন্মের লোকেরা এখনও ৯০ দশকের শুরুতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্মরণ করতে পারেন৷ এছাড়া পূর্ব জার্মানিতে নিও-নাৎসিদের মনে বিদেশি বিরোধী মনোভাব এখনও প্রবল৷
যদিও কয়েক বছর ধরে অভিবাসীদের দ্বারা জার্মান সমাজ ও সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে, তবুও এমন একটা উদ্বেগ সবসময়ই ছিল যে, অভিবাসীরা যতটা সম্ভব জার্মান সমাজে ঠিক ততটা একাত্ম হচ্ছে না৷ এর একটা কারণ হতে পারে যে, তাঁরা জার্মানদের সঙ্গে একাত্ম হওয়াটা একটু কঠিন, কিংবা অন্য কোনো ধর্মীয় কারণও হতে পারে৷ মাত্র কয়েক বছর আগে তৎকালীন জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রকাশ্য বলেছিলেন, ইসলাম ধর্ম জার্মান সমাজের একটা অংশ৷
তথাপি, কয়েকটি গোষ্ঠী মূলধারার সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে অভিবাসীরা কিছু সমান্তরাল সমাজ তৈরি করেছে৷ এই সমাজের লক্ষ্য, সমাজের মূল অংশের সঙ্গে যতটা সম্ভব কম যোগাযোগ করা৷ এটা চিন্তার বিষয়, কারণ কোনো অভিবাসী যদি, যে দেশে বাস করছেন সে দেশের ভাষা না শেখেন, তাহলে ঐ দেশের সমাজে তিনি খুব কমই অবদান রাখতে পারেন৷ তাছাড়া তরুণ অভিবাসী যারা এমন একটা সমাজে বড় হয়েছে, যে সমাজ কেবলমাত্র তাদের গ্রহণ করতে শুরু করেছে, তারা তাদের বাবা-মা'র গ্রহণ করা মূল্যবোধ (জার্মান সমাজের) নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷ ফলে জার্মানির প্রায় ৫০০ মুসলিম অভিবাসী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর হয়ে যুদ্ধ করতে সিরিয়া ও ইরাকে পাড়ি জমিয়েছে৷
অভিবাসীদেরকে কী ভাবে জার্মান সমাজে আরও বেশি করে একীভূত করা যায় সে বিষয় নিয়ে জার্মানির নীতি নির্ধাকরা কয়েক বছর ধরেই চিন্তাভাবনা করছেন৷ এ জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে, যেমন জার্মানি নতুন আসাদের জার্মান সংবিধান সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া এবং অভিবাসন তরান্বিত করতে তাদের ভাষা শিক্ষা দেয়া৷
অনেকের মতো সিএসইউ-ও যে অভিবাসীদের জার্মান সমাজে একাত্ম করার বিষয়ে চিন্তা করবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷ কিন্তু তাই বলে অভিবাসীদের প্রকাশ্যে, এমনকি বাড়িতেও জার্মান ভাষা চর্চার কথা বলাটা হাস্যকর৷ কেউ কি অভিবাসীদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদেরকে জার্মান ভাষায় কথা বলতে বাধ্য করবে? পুলিশ কি অভিবাসীদের বাসায় গিয়ে তাঁদের জার্মান ভাষার দক্ষতা পরিমাপ করবে? কারও ব্যক্তিগত জীবনে এভাবে ঢুকে পড়ার ক্ষমতা কোনো কর্তৃপক্ষের নেই, এটা নিশ্চিত৷ ফলে সমালোচকরা যে সিএসইউ-র দাবিকে হাস্যকর বলছে সেটা ঠিক আছে৷
প্রশ্ন হলো, অভিবাসীদের জার্মান সমাজে পরিপূর্ণভাবে একাত্ম করতে কীভাবে উৎসাহিত করা যায়? এক্ষেত্রে তরুণ অভিবাসীদের শিক্ষিত করে তোলা ও তাদেরকে সমাজে সমান সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দেয়া উচিত৷