আফগান তরুণ ‘যথেষ্ট সমকামী নন'
১৭ আগস্ট ২০১৮১৮ বছরের ওই তরুণ নিজেকে সমকামী দাবি করে নিরাপত্তার খাতিরে তাঁকে অস্ট্রিয়ায় আশ্রয় দেওয়ার আবেদন করেছিলেন৷
তবে তাঁর চাপা স্বভাব, কর্মকাণ্ড ও পোশাক সমকামীদের সঙ্গে মানানসই মনে না হওয়াকে কথা আবেদন নাকচের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে অস্ট্রিয়ান সাময়িকী ফলটার বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে৷
অভিবাসন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়, ‘‘আপনার হাঁটা-চলা, কাজকর্ম ও পোশাক ন্যূনতম প্রমাণ দেয় না যে, আপনি সমকামী হতে পারেন৷''
এই কারণে আফগানিস্তানে ওই তরুণের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয়নি অস্ট্রিয়ান কর্মকর্তার৷
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ওই তরুণ আপিল করবেন বলে জানিয়েছে ফলটার৷
মুসলিম প্রধান আফগানিস্তানে সমকামিতা নিষিদ্ধ৷ একে দেখা হয় অনৈতিক ও অপরাধ হিসেব৷ দেশটির শরিয়া আইন অনুযায়ী, এর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে৷
সামাজিকভাবেও সমকামিতাকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়৷
এই আফগান তরুণ ২০১৬ সালে একাই অস্ট্রিয়ায় আসেন৷ তখন তাঁর ঠাঁই হয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসওএস চিলড্রেন'স ভিলেজের শরণার্থী শিবিরে৷ আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনে কারণ হিসেবে নিজেকে আফগানিস্তানে নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেন৷ পরে সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের বিষয়টি তুলে ধরে পুনরায় আবেদন করেন তিনি৷ তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, প্রথমে বিষয়টি প্রকাশে ভয় পাচ্ছিলেন তিনি৷
অভিবাসন কর্মকর্তা ওই আফগান তরুণের ‘আচরণগত সমস্যার' বিষয়টিও আমলে নিয়েছেন৷ শরণার্থী শিবিরে মারামারি করেছিলেন ওই তরুণ৷ এ বিষয়ে অস্ট্রিয়ান কর্মকর্তা লিখেছেন, তাঁর আক্রমণাত্মক স্বভাব রয়েছে যা একজন সমকামীর কাছ থেকে আশা করা হয়নি৷
আপত্তির অন্য একটি কারণের কথা বলা হয়েছে: এই তরুণের বেশি বন্ধু ছিল না এবং তিনি একা বা অল্প কয়েকজনের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন৷
‘‘সমকামীরা কি আরো বেশি সামাজিক নন?''
আফগান তরুণ বলেছেন, আগে সমকামীদের চুমু খেয়েছেন তিনি৷
তার এই বক্তব্যেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অভিবাসন কর্মকর্তা৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এটা সত্য হলে তাকে পেটানো হত৷
সমকামিতার বিষয়টি কখন বুঝতে পেরেছেন, প্রশ্ন করা হলে ওই তরুণ বলেন, ১২ বছর বয়সেই বিষয়টি তাঁর উপলব্ধিতে আসে৷
এটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অস্ট্রিয়ান কর্মকর্তা৷ যুক্তি দিয়েছেন, এই বয়সে তাঁর এটা বুঝতে পারার কথা নয়, আফগানিস্তান এমন একটি দেশ যেখানে ফ্যাশন ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনগণের যৌন উদ্দীপনা জাগানো হয় না৷
সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন নিয়ে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নাকচ হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়৷ এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সমকামিতা প্রমাণের জন্য পরীক্ষা করানোও আইনসিদ্ধ নয়৷
হাঙ্গেরিতে আশ্রয় পেতে একজন নাইজেরিয়ানকে নিজেকে ‘গে' প্রমাণের জন্য মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা দিতে হওয়ায় সম্প্রতি দেশটির বিরুদ্ধে রুল জারি করে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস (ইসিজে৷
এ ধরনের পরীক্ষাকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর ব্যক্তিগত জীবনে ‘অযাচিত' হস্তক্ষেপের শামিল বলেছে ইসিজে৷
এএইচ/এসিবি (এএফপি, ইএফই)