আফগানিস্তান দাতা সম্মেলনে নতুন ধারণার অভাব
৫ ডিসেম্বর ২০১৪যখন আর কোনো পন্থা থাকে না, শুধু তখনই একটি ওয়ার্কিং কমিটি সৃষ্টি করা হয় – কিংবা আরো উচ্চ পর্যায়ে – একটি সম্মেলন আহ্বান করা হয়৷ বিভিন্ন আফগান এনজিও, আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠন এবং উচ্চপদস্থ রাজনীতিকরা দু'দিন ধরে শলা-পরামর্শ করলেন, বেসামরিক উপায়ে আফগানিস্তানের সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সে বিষয়ে৷ এক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল নতুন ধ্যানধারণার – যা বিশেষ দেখা যায়নি৷
১৩ বছর ধরে আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সাহায্য পাচ্ছে৷ আজও সে দেশ শতকরা ৯০ ভাগ বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল৷ আফগানিস্তানের নাম করলেই আজও মানুষ সর্বাগ্রে দুর্নীতি, অপরাধবৃত্তি ও রাজনৈতিক সহিংসতার কথা ভাবে৷ এই আফগানিস্তানই ছিল ন্যাটোর সবচেয়ে ব্যয়বহুল অভিযান, যা আর তিন সপ্তাহে পরে শেষ হচ্ছে – অথচ আফগানিস্তান আবার একটি নতুন হিংসার তাণ্ডবে ভেসে যাচ্ছে৷ ১৩ বছর ধরে সামরিক অভিযান এবং কোটি কোটি ডলার বেসামরিক সাহায্য কি তবে ব্যর্থ হয়েছে?
পুরোপুরি নয়: বিভিন্ন স্কুল গড়ে উঠেছে, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য৷ সজীব মিডিয়া, সেই সঙ্গে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে আফগানরা আজ বহির্বিশ্বের সঙ্গে অনেক বেশি সংযুক্ত৷ এবং আফগানরা দেখিয়েছেন যে, তারা গণতন্ত্র কামনা করেন এবং গণতন্ত্রে বাস করতে প্রস্তুত ও সক্ষম৷ সর্বাধুনিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চলে সুদীর্ঘ ছয় মাস ধরে; দু-দু'বার ভোট হয়; দলে দলে সেই ভোটে অংশগ্রহণ করে আফগানরা তাদের মনোবল ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন৷ ভোটে যদি ব্যাপক কারচুপি ঘটে থাকে, তবে সেটা সাধারণ ভোটারদের দোষে নয়; সেজন্য দায়ী কাবুলের ক্ষমতাসীনরা এবং ভোটকেন্দ্রে তাদের দালালরা৷
তবুও দেখা যাচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক দাতাদেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলি যেন কিছুটা বিমুখ হয়ে পড়েছে: লন্ডন সম্মেলনে কোনো নতুন আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি৷ ওদিকে আফগান এনজিও এবং বিদেশি ত্রাণ সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই অনুভব করছে যে, আর্থিক সম্বল ফুরিয়ে আসছে৷ পশ্চিমি সরকারবর্গ আগের মতোই বিপুল অর্থ প্রদান করছে বটে, কিন্তু যুগপৎ সুশীল সমাজ ও গণতন্ত্রের প্রগতির জন্য প্রদেয় অর্থের পরিমাণ সীমিত করেছে৷ তার পরিবর্তে তারা এমন সব প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে, যা স্বদেশের করদাতা ও ভোটারদেরও স্বচ্ছন্দে প্রদর্শন করা চলে৷ জার্মানি যে নতুন অর্থসাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা-ও রাস্তাঘাট তৈরি, বৈদ্যুতিকরণ, হাসপাতাল তৈরি – এবং স্বভাবতই নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য৷
এবং আফগান এনজিও-রা যতদিন শুধু তাদের সংকীর্ণ জগৎ ও স্বার্থের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকবে; যত কম অর্থেই হোক, তাদের অর্থবহ বা নিরর্থক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবে – ততদিন পর্যন্ত এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটবে না৷ এখানে কোনো নারীকল্যাণ কর্মসূচি, ওখানে কোনো শান্তি আন্দোলন, এভাবে দাতাদেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রতীত করা যাবে না৷ তার পরিবর্তে চাই একটি সামগ্রিক স্ট্র্যাটেজি, যা হয়ত বারংবার নতুন অর্থসংস্থানের চেয়েও বেশি প্রয়োজন৷ সেক্ষেত্রে লন্ডন কোনো প্রগতি আনতে পারেনি৷
অথচ একটি জীবনমুখী, উদ্যম ও ক্ষমতাশীল সুশীল সমাজ গড়ে তোলার উপর নির্ভর করবে, উদারপন্থী শিক্ষক, প্রযুক্তিবিদ অথবা সাংবাদিকরা দেশে থাকবেন, না দেশ ছেড়ে চলে যাবেন৷ আফগানিস্তানে প্রতিদিন যে পরিমাণ হিংসা চলেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এটা অসম্ভব মনে হতে পারে: কিন্তু সেই সুশীল সমাজ গড়ে তোলার প্রেরণা আজও রয়েছে৷ আমি সম্প্রতি কাবুল থেকে আগত এক তরুণ সহকর্মীকে প্রশ্ন করেছিলাম: অক্সফোর্ড থেকে ডিগ্রি নিয়েও তিনি আফগানিস্তানে ফিরছেন কেন? সরাসরি উত্তর এলো: ‘‘ওটা আমার দেশ বলে!''