২০১৪: আফগানিস্তানের জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তার বছর
২১ নভেম্বর ২০১৪গত ১৮ই নভেম্বর ‘দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন'-এ প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, আফগানিস্তানের ৫৪ দশমিক ৭ ভাগ মানুষ মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি এখন ঠিক পথেই এগোচ্ছে৷ তবে নিজের দেশ সম্পর্কে আশাবাদী লোকের সংখ্যা কমেছে৷ এক বছর আগে দেশব্যাপী চালানো জরিপে যেখানে ৫৭ দশমিক ২ ভাগ মানুষ আশার ইঙ্গিত দেখেছিল, এবার তা কমে হয়েছে ৫৪ দশমিক ৭ ভাগ৷ অন্যদিকে জনমনে হতাশা, নৈরাশ্য বেড়েছে৷ আগের বছর এর হার ছিল ৩৭ দশমিক ৯ ভাগ, এবার তা বেড়ে হয়েছে ৪০ দশমিক ৪৷
ডয়চে ভেলে: আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আফগানদের মাঝে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নৈরাশ্য বাড়ছে৷ কেন এমন হচ্ছে?
স্কট স্মিথ: আফগানদের জন্য ২০১৪ সালটা খুবই দুশ্চিন্তার বছর৷ এ বছর বড় দুটো ঘটনা ঘটেছে৷ প্রথমটি আফগানিস্তান থেকে আন্তর্জাতিক বাহিনী প্রত্যাহার৷ সমালোচনা থাকলেও এ বাহিনী এতদিন আফগানিস্তানের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে৷ দ্বিতীয়টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ সেখানে ২০০১ সাল থেকে যিনি ছিলেন ‘আফগানিস্তানের মুখ' সেই হামিদ কারজাইকে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে৷ আফগানরা জানে, তাদের দেশে শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পালাবদল কখনো সম্ভব হয়নি৷ হামিদ কারজাই কোনো-না-কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থেকে যেতে পারেন – এ আশঙ্কা ছিল৷ এছাড়া ব্যাপক সহিংসতার কারণে নির্বাচন বানচাল হতে পারে এমন আশঙ্কা তো ছিলই৷ আপনি যে জরিপটির কথা বলছেন, সেটা হয়েছিল গত জুনে৷ তখনো আশরাফ গনি আর আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ-র মধ্যে নির্বাচনি লড়াই চলছে৷ জনমনে শঙ্কা এবং হতাশা জন্ম দেয়ার পেছনে এ সবের বড় ভূমিকা ছিল৷ জরিপে তারই প্রভাব পড়েছে৷
জরিপে কিছু মজার বিষয়ও বেরিয়ে এসেছে৷ আফগানিস্তানের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের মানুষরা বলেছেন, তাঁরা মনে করেন, আগের বছরগুলোর চেয়ে এখন ঠিক পথে যাচ্ছে দেশ৷ সত্যি বলতে কি, আশাবাদী এবং নৈরাশ্যবাদী মনোভাব অঞ্চলভেদে বেড়েছে, কমেছে৷ শহর এবং গ্রাম, নারী এবং পুরুষের মাঝেও দৃষ্টিভঙ্গির তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে৷
আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী (এএনএসএফ)-এর এখন কী অবস্থা? তালেবানকে মোকাবেলা করার সামর্থ্যই বা কেমন তাদের?
আফগানিস্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব গত বছরের জুনেই (এএনএসএফ)-এর ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল৷ সুতরাং দু'মৌসুম ধরে (তালেবান বিরোধী) যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা৷ তাদের জন্য ২০১৪ সালের গ্রীষ্মকালটা ছিল কঠিন এক চ্যালেঞ্জের, কেননা, তখন সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলার পাশাপাশি তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানকেও সম্ভব করতে হয়েছে৷ বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আফগান বাহিনী খুব ভালো কাজ করেছে৷ তবে সফল হতে গিয়ে চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে৷ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে অনেক৷ ক্ষতির হার এক রেখে তারা আগামী বছর আরেকটি যুদ্ধের মৌসুম পার করতে পারবে কিনা তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না৷
যুক্তরাষ্ট্র যে আফগানিস্তানে তাদের সৈন্য সংখ্যা এক লাখ থেকে কমিয়ে এ বছরের মধ্যে ৯ হাজার ৮০০-তে নিয়ে আসা এবং ২০১৬ সালের মধ্যে সব সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এ বিষয়টি আফগান বাহিনীতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে৷ এর ফলে তাদের মনোবল কমতে পারে৷
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আশরাফ গনির শুরুটা কেমন হয়েছে?
তাঁর পারফরম্যান্সকে ভালো মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে৷ প্রথম দু'মাস তো তিনি সংস্কারের দিকেই মন দিয়েছেন৷ তাঁর প্রথম বড় কাজ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি (বিএসএ) সাক্ষর করা৷ হামিদ কারজাই নিজেই এ চুক্তি সাক্ষরে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন৷ এই চুক্তির ফলে শুধু যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো বাহিনী প্রয়োজনে আফগানিস্তানে থাকতে পারবে – তা-ই নয়, এর ফলে আফগান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মাঝ থেকে বড় একটা কাঁটাও দূর হলো৷ এছাড়া গনি ২০১০ সালের কাবুল ব্যাংক কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করেছেন৷ সেই ঘটনায় ১ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল৷ দাতা দেশগুলোর আফগানিস্তানের ওপর আস্থা কমে গিয়েছিল৷ তদন্ত শুরু করে গনি সেই আস্থা পুনরুদ্দারের চেষ্টা করছেন৷
স্কট স্মিথ, ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ পিস (ইউএসআইপি)-এর পরিচালক৷