আফগানিস্তানে সূর্যের আলো কাজে লাগিয়ে রান্নার উদ্যোগ
১৮ মার্চ ২০২১একটি সোলার ওভেনের সাহায্যে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় পানি ফোটানো যায়৷ আফগানিস্তানে অনেক মানুষের মতো গজনির একটি পরিবারও রান্নার জন্য এই চুলা ব্যবহার করে৷ তবে সেটি সব ঋতুর জন্য উপযুক্ত নয়৷ পরিবারের এক সদস্য নিজেদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘‘এই চুলাগুলি সব অর্থেই আমাদের জন্য ভালো, কারণ কাঠ, গ্যাস বা তেল ছাড়াই রান্নাবান্না ও পানি গরম করা যায়৷ তবে শীতকালে রোদ কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়৷’’
আফগানিস্তানের বেশিরভাগ বড় শহরে এখনো অনেক মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ ও গ্যাস পান না৷ পরিবারের কর্ত্রী বলেন, ‘‘প্রায় নয় বছর ধরে আমরা এই স্টোভ কিনে আসছি৷ আমরা কাঠ, গ্যাস বা অন্য কোনো জ্বালানি কিনি না৷ আমি এতেই রান্না করি, পানি ফোটাই৷ শুধু পরিস্কার রাখতে হয়, প্রতিদিন সকালে ধুতে হয়৷’’
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নাগাল না পাওয়ায় মানুষের কাছে এই স্টোভ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ খুবই সাধারণ উপকরণ দিয়ে স্থানীয় ওয়ার্কশপে সেগুলি তৈরি করা যায়৷ দুই কমবয়সি শ্রমিক চুলার ধাতব কাঠামো তৈরির দায়িত্বে রয়েছে৷ খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়৷ ওয়ার্কশপের প্রধান মিস্ত্রী লিয়াকত আলি বলেন, ‘‘আমার তিন শিক্ষানবিস রয়েছে এবং আমরা দিনে দুটি করে স্টোভ তৈরি করি৷ এর বেশি সম্ভব হয় না৷ শুধু গজনি নয়, হেরাট, কান্দাহার ও ওয়ারদাক জেলা থেকেও মানুষ কিনতে আসে৷’’
কাঠামোর উপর পাতলা ধাতুর স্তর লাগিয়ে ডিশ বা চাকতির আকার দিতে হয়৷ হাতেই সেই কাজ করতে হয়৷ উৎপাদনের খরচ যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করা হয়, যাতে দরিদ্র মানুষ সেগুলি কিনতে পারেন৷ চুলা প্রস্তুতকারক হিসেবে মোরতেজা মনে করেন, ‘‘মানুষ এখন এই স্টোভ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ অতি সহজে ব্যবার করা যায় বলে তাদের আগ্রহও বাড়ছে৷ তার উপর গ্যাসের দাম অত্যন্ত বেশি৷ এই স্টোভে জ্বালানি লাগে না, তাই দাম নিজে থেকেই উঠে আসে৷’’
ডিশের পুরো সারফেসই আয়না হতে হবে৷ ধৈর্য্য ধরে নিখুঁতভাবে যত্ন নিয়ে সেই কাজ করতে হয়৷ আঠা লাগিয়ে আয়নাগুলিকে যতটা সম্ভব নিবিড় রাখতে হবে৷ সামান্য ব্যবধান রাখলেও চলবে না৷
তারপর প্রত্যেকটি আয়না পরীক্ষা করতে হয়৷ প্রত্যেকটি টুকরোতে নির্দিষ্ট প্রতিফলন হতে হবে৷ তা না হলে সূর্যের আলো ঠিকমতো একত্র করা যাবে না এবং স্টোভে যথেষ্ট উত্তাপও সৃষ্টি করা যাবে না৷
সবশেষে হাতেনাতে পরীক্ষার পালা৷ এই চুলায় পিচবোর্ডের একটি টুকরো পোড়ানো এবং এক ব্যারেল পানি ফোটানো সম্ভব হওয়া উচিত৷ তাছাড়া আয়নার মাধ্যমে সূর্যের আলো সরাসরি ডিশের একেবারে মাঝে রিংয়ের উপর ফেলতে হবে৷ সস্তা, বর্জ্যবিহীন ও পরিবেশবান্ধব এই চুলা সত্যি মানুষের উপকারে আসছে৷
এব্রাহিম মাহদাভি/এসবি