1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগ্নেয়গিরির পাথর দিয়ে পরিবেশবান্ধব চুলা

২৭ নভেম্বর ২০১৯

পরিবেশ দূষণ তথা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনেক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷ কিন্তু বাণিজ্যিক স্বার্থ ও জটিল প্রযুক্তি প্রায়ই অন্তরায় হয়ে ওঠে৷ উগান্ডায় এক উদ্যোগের আওতায় সহজে ও সুলভে কার্যকরী পরিবর্তন সম্ভব হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3Topr
ছবি: DW

সারা জীবন ধরে রেবেকা কিওয়ানুকা কাঠকয়লা পুড়িয়ে রান্না করেছেন৷ কিন্তু এই জ্বালানি তাঁর স্বাস্থ্য ও পরিবেশ – কোনোটির জন্য ভালো নয়৷ এখন তাঁর কাছে বিশেষভাবে তৈরি এক চুলা এসেছে৷ দাম বেশি হলেও আখেরে টাকা বাঁচছে৷ রেবেকা বলেন, ‘‘আগে অনেক ব্যবহার করতাম৷ হিসেব করে দেখলাম যে, বছরে আমি এই বাসার জন্য প্রায় ১২ লাখ শিলিং খরচ করেছি৷ এখন যে কাঠকয়লার গুঁড়া ব্যবহার করছি, তাতে এক লাখও খরচ হচ্ছে না৷’’

আগ্নেয়গিরির পাথরই এই ইকো-স্টোভের চাবিকাঠি৷ সেই পাথর গরম করলে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে উত্তাপ থেকে যায়৷ অবশ্য তার জন্য সৌরশক্তিচালিত একটি ফ্যানকে সারাক্ষণ পাথরের উপর বাতাস নিক্ষেপ করতে হয়৷

রোজ টোইন এই ইকো স্টোভ উদ্ভাবন করেছেন৷ তিনিই উৎপাদনকারী কোম্পানির প্রধান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এমন প্রযুক্তি রয়েছে, যার সাহায্যে উগান্ডায় ৯০ শতাংশেরও বেশি গাছ কাটা বন্ধ করা সম্ভব৷ কারণ, ইকো স্টোভের মাধ্যমে আমরা আগ্নেয়গিরির পাথর ব্যবহার করছি৷ এগুলি কাঠকয়লা বা লাকড়ির চেয়ে বেশি জ্বলে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও কার্যকরীও বটে৷’’

আগ্নেয়গিরির পাথর কি কাঠকয়লার বিকল্প হতে পারে?

আগ্নেয়গিরির পাথর গড়ে প্রায় দুই বছর কাজে লাগানো যায়৷ এই ইকো স্টোভের একাধিক সংস্করণ রয়েছে৷ যেমন রাজধানী কাম্পালায় এক বাজারে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষের জন্য রান্না করতে বিশাল আকারের চুলা তৈরি করা হয়েছে৷

এই চুলা রাঁধুনীদের জন্যও ভালো, কারণ রান্নার সময় প্রায় কোনো ধোঁয়া বের হয় না৷ উগান্ডায় প্রতি বছর প্রচলিত চুলার ধোঁয়ার কারণে আনুমানিক প্রায় ২০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়৷ প্রচলিত চুলার তুলনায় উন্নত ডিজাইনের কারণে ইকো স্টোভ অনেক বেশি কার্যকর৷ আইশা নাকাতো মনে করেন, ‘‘এই স্টোভে আপনি যা খুশি রান্না করতে পারেন, এতে বেশ সাশ্রয়ও হয়৷ এই স্টোভ সত্যি আমাদের খুব সাহায্য করেছে৷ কারণ, এখানে এটি তৈরি করার পর কোম্পানিই আগ্নেয়গিরির পাথর সরবরাহ করে৷ তারপর থেকে আমরা কাঠকয়লার ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে শুধু কাঠকয়লার গুঁড়া ব্যবহার করছি৷ সেটা দিয়ে শুধু পাথরে আগুন ধরানো হয়৷ কাঠকয়লার তুলনায় আমার এক চতুর্থাংশ খরচ হচ্ছে৷’’

উগান্ডার দক্ষিণ-পশ্চিমে মুহাবুরা পর্বতের পাদদেশে ইকো স্টোভ চাষিদের পরিবারের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিচ্ছে৷ অনেক মানুষকে পাহাড় থেকে পাথর বার করার প্রশিক্ষণ ও চাকুরি দেওয়া হয়েছে৷ সেই পাথর সংগ্রহ করে কোম্পানির কাছে সরবরাহ করতে হয়৷ জুডিথ নিয়াবাসিসিতা বলেন, ‘‘একটি ট্রাক এলে আমি ১০০ ডলার পর্যন্ত হাতে পাই৷ সেই টাকা দিয়ে আমি সন্তানদের স্কুলের খরচ দিতে পারি, তাদের জন্য খাবার ও জামাকাপড় কিনতে পারি৷ মানুষ এই পাথর কিনছে বলে আমাদের জীবনযাত্রার অনেক উন্নতি হয়েছে৷ আগে আমরা চাষবাস করতাম৷ পাথর সেই কাজে বিঘ্ন ঘটাতো৷ এখন আমাদের সৌভাগ্য এই যে কেউ সেগুলির জন্য টাকা দিচ্ছে৷’’

ইকো স্টোভ কারখানায় আগ্নেয়গিরির অনেক পাথর মজুত রয়েছে৷ এই কোম্পানি দিনে ৪০টি পর্যন্ত স্টোভ উৎপাদন করে৷ এখনো পর্যন্ত প্রায় ১৭,০০০ স্টোভ বিক্রি হয়েছে৷ প্রত্যেকটির সঙ্গে ছোট এক ব্যাগভর্তি পাথর বিনামূল্যে পাওয়া যায়৷

রোজ টোয়াইন বলেন, এই স্টোভ বিশ্বের অনেক অঞ্চল ও দেশে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ তাঁর মতে, ‘‘আমরা যত বেশি সম্ভব মানুষকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রস্তুত করে তুলতে চাই, যাতে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের ভূমিকা পালন করতে পারে৷ আমরা এই প্রযুক্তি আঁকড়ে ধরে একচেটিয়া ব্যবসা করতে চাই না৷’’

উগান্ডার জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি৷ প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখনো কাঠকয়লা ব্যবহার করে রান্না করে৷ তাই বাজারে ইকো স্টোভের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে৷ এর ফলে অনেক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে৷ এই উদ্যোগ আফ্রিকা মহাদেশে অরণ্যনিধনের গতি কমাতেও সাহায্য করতে পারে৷

জুলিয়াস মুগাম্বওয়ে/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান