আফগানিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা চায় তালেবান
২৮ নভেম্বর ২০২১গত আগস্টে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে ভাষণ দেন তালেবান সরকারের নিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী মোল্লাহ মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ৷ কোন দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে তার সরকার হস্তক্ষেপ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব আমরা জনগণের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছি৷ প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা অতিরিক্ত সময় কাজ করছি৷''
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের অর্থনীতি দিনকে দিন নাজুক হচ্ছে৷ দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট, বেড়েছে পণ্যের দাম, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা পাচ্ছেন না বেতন৷ এই পরিস্থিতির দায় আগের সরকারের উপর চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জাতিকে সতর্ক থাকতে হবে৷ আগের সরকারের যারা পালিয়ে আছে... তারা উদ্বেগের কারণ তৈরি করছে, সরকারের প্রতি অবিশ্বাস তৈরিতে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে৷’’
তিনি দাবি করেন, তার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে৷ সরকারি কর্মকর্তাদের গত কয়েকমাস বকেয়া বেতন দেয়ার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন৷
আধাঘণ্টার এই অডিও বার্তায় তিনি দাতা সংস্থাগুলোকে সহায়তা বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোকে বলব তারা যেন তাদের অনুদান আটকে না রাখে এবং আমাদের বিধ্বস্ত দেশকে সহায়তা করে... যাতে জনগণের সমস্যা দূর করা যায়৷’’
আগের সরকারের পতন ঘটিয়ে গত আগস্টে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের ১০ বিলিয়ন ডলারের গচ্ছিত তহবিল জব্দ করে৷ বক্তৃতায় আখুন্দ এই অর্থ ফেরত দেয়ারও আহ্বান জানান৷
সংকট কতটা প্রকট?
জাতিসংঘের বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এখন খাদ্যাভাবে রয়েছেন৷ দেশটি গত কয়েক যুগের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ দুর্ভিক্ষের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে৷ অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ায় খাদ্যের অভাবে মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছেন৷ ঘরে খাবার যোগাড় করতে গিয়ে সম্পত্তি এমনকি শিশুদেরও বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা৷
ইউনিসেফ এর যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সামান্থা মর্ট গত সপ্তাহে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, দেশটির দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের এখন সহায়তা প্রয়োজন৷ এই বিরাট জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো অনেকটাই ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকা সংকটে' পরিণত হচ্ছে৷
আখুন্দ এই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিকে ‘ইশ্বরের বিপক্ষে বিদ্রোহের পর মানুষকে দেয়া তার পরীক্ষা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন৷
উল্লেখ্য, এখনও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে বৈধতা দেয়নি৷ দেশটির অর্থনীতির ৭৫ শতাংশই চলে বৈদিশিক সহায়তার উপরে, যা কার্যত বন্ধ৷ নেই বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে ঋণ নেয়ার সুযোগ৷
সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার ও নারী অধিকারের স্বীকৃতি দেয়ার আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ চালিয়ে যেতে একমত হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো৷ তবে আখুন্দ দাবি করেন, তার নতুন ইসলামিক এমিরেটের সদস্যরা গোটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ ‘নারীদের সম্মান রক্ষার' জন্যই তাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কাজ থেকে বিরত রাখা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন৷
এফএস/এআই (এএফপি, ডিপিএ, এপি)