বাড়ছে আয়ু, চাই অবসর ভাতা
১৩ জুলাই ২০১৩বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে অবসর ভাতা বা সামগ্রিকভাবে সামাজিক সুরক্ষার কাঠামো বেশ দুর্বল৷ কিন্তু সেখানে জনসংখ্যার মধ্যে বয়স্ক মানুষের অনুপাত বেড়েই চলেছে৷ ফলে কোনো না কোনো সময়ে সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতেই হবে৷ আন্তর্জাতিক জনসংখ্যাতত্ব প্রতিষ্ঠান আইএনইডি-র বিশেষজ্ঞরা এই প্রশ্ন খতিয়ে দেখছেন৷
সংখ্যায় হাতে গোনা হলেও আফ্রিকার সামান্য কিছু মানুষ অবসর ভাতা পেয়ে থাকেন৷ তাদের অধিকাংশই কিছু সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন৷ তবে এ সব ক্ষেত্রে সব কর্মী এমন সুযোগ পান না৷ অবসর-ভাতার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্যও কম নয়৷ যেমন টিউনিশিয়ায় ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ অবসর ভাতা পান৷ অথচ একই বয়সের মাত্র তিন শতাংশ নারী সেই সুযোগ পান৷
আফ্রিকায় সামাজিক সুরক্ষার কাঠামো তৈরি করার চেষ্টা যে একেবারেই হয় নি, তা নয়৷ গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অবসর ভাতা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন আইএলও-র মতো প্রতিষ্ঠান তাতে সহায়তাও করছে৷ ইউরোপে যেমন কর্মদাতা এবং শ্রমিক-কর্মী – উভয় পক্ষই মাসে-মাসে অবসর ভাতা তহবিলে অর্থ দেয়, আফ্রিকায়ও সে রকম কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, আফ্রিকার শ্রম বাজার মোটেই তেমন সংগঠিত নয়৷ শ্রমিক বা কর্মীদের স্বার্থ দেখাশোনার জন্য শক্তিশালী কোনো কর্তৃপক্ষও নেই৷ যে সব দেশে পরিস্থিতি বাকিদের তুলনায় ভালো, তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, লেসোথো, নামিবিয়া ও মরিশাস৷ তবে সেখানেও অবসর ভাতার অঙ্ক খুবই কম৷
এই অবস্থায় বঞ্চিত মানুষের সামনে দুটি পথ খোলা থাকে৷ হয় যতদিন সম্ভব কাজ করে যাওয়া, অথবা পরিবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া৷ দিনকাল কঠিন হয়ে পড়েছে৷ পরিবারের কাঠামো ভেঙে যাচ্ছে৷ ফলে তাদের পক্ষেও আর আগের মতো পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছে না৷ বয়স্কদের হাত পাততে হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের কাছে৷
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রিয় মডেল হলো ‘শর্তহীন আয়'৷ গরিব মানুষের সুরক্ষায় ল্যাটিন অ্যামেরিকার অনেক দেশে এই মডেল বেশ সফল হয়েছে৷ উগান্ডায় পরীক্ষামূলকভাবে তা প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ ব্রিটেনের সহায়তায় এক ‘ক্যাশ ট্রান্সফার' কর্মসূচি চালানো হচ্ছে৷ মাসে মাত্র ১০ ডলার বেশি নয়৷ তবে সরকারের পক্ষে এর বেশি অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়৷ ব্রাজিল বা ইকুয়েডর-এর মতো দেশের কোষাগারে যে অর্থ রয়েছে, আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশের সামর্থ্য সে তুলনায় অনেক কম৷ তারা অনেকেই বিদেশি সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷