আফ্রিকায় বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্বের সংকট ঘটাচ্ছে ‘বুশ মিট’
১২ জুন ২০১১কঙ্গো নদীর সুবিশাল অববাহিকা তার প্রমাণ৷ স্থানীয় মানুষজন তাদের খাদ্যের জন্য পাখি, সাপ-গিরগিটি এবং বানর গোত্রীয় সব কিছু ধরে খায়, এবং চিরকালই খেতো৷ কিন্তু খনির কাজের জন্য জঙ্গল কেটে ট্রাক যাবার রাস্তা তৈরী হবার পর বুশ মিট বা জংলা মাংস নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা শুরু হয়ে গেছে৷ জঙ্গলের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শিকার করা হচ্ছে এবং শিকারের পরিমাণ বাড়ছে৷ যার ফলে শুরু হয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা যাকে বলছেন ‘এম্পটি ফরেস্ট সিনড্রোম' বা ‘শূন্যারণ্য' সিনড্রোম৷
বুশ মিট নিয়ে ব্যবসা একদিকে যেমন বেআইনি, অন্যদিকে তেমন ‘আনসাসটেইনেবল', অর্থাৎ এই পরিস্থিতি নিজের ক্ষতি নিজেই পুরিয়ে নিতে এবং সামগ্রিক সম্পদ বজায় রাখতে অক্ষম৷ কাজেই ‘সাইটস' বা ‘বিপন্ন প্রজাতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসা' সংক্রান্ত চুক্তি, সিবিডি বা জীববৈচিত্র্য চুক্তির বিশেষজ্ঞরা অন্য কোনো সমাধানের ডাক দিয়েছেন৷
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হল, জংলা মাংসের পরিবর্তে যদি পালিত পশুর মাংস দিয়ে জনসাধারণের ক্ষুধা মেটাতে হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ৮০ শতাংশ জমি চারণভূমিতে পরিণত করতে হবে, যা সম্ভব নয়৷ কঙ্গোর আয়তন প্রায় পশ্চিম ইউরোপের সমান৷ তার যে ১৫০ মিলিয়ন হেক্টরের বেশী বনভূমি আছে, তা আফ্রিকা মহাদেশে একটানা জঙ্গল হিসেবে অদ্বিতীয়৷
অথচ মাত্রাতিরিক্ত বুশ মিট শিকারের ফলে সেই জঙ্গলই বিপন্ন হয়ে পড়ছে৷ তার কারণ, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছগুলির ৭৫ শতাংশ তাদের বীজ ছড়ানোর জন্য জীবজন্তুর উপরে নির্ভর করে৷ কাজেই বিশেষজ্ঞদের সমাধান হল, স্থানীয় লোকেদের আরো বেশি করে মৌমাছি এবং কেইন ব়্যাট নামধারী একধরনের ধেড়ে ইঁদুর পালতে হবে৷ মধু যেমন খাওয়া চলে, তেমন বেচাও যায়৷ আর ঐ এলাকায় ‘ঘাসকাটিয়ে' বলে পরিচিত গিনিপিগের সাইজের ইঁদুরগুলোর মাংস লোকজনের অতি প্রিয় - এ'পর্যন্ত বুশ মিট বা জংলা মাংস হিসেবেই৷ কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝি বেনিনে জার্মানির সাহায্যে একটি কেইন ব়্যাট পালনকেন্দ্র স্থাপিত হয়৷ তার পর থেকে পদ্ধতিটি ক্যামেরুন, আইভরি কোস্ট, গ্যাবন, ঘানা, নাইজিরিয়া, সেনেগাল এবং জায়ারে ছড়িয়েছে৷
কে জানে, আফ্রিকার বনজঙ্গলের ভবিষ্যৎ হয়তো এই ধরনের খুদে, বন্য অথচ গৃহপালিত পশুদেরই হাতে৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম