আবার মাঠে র্যাব
৪ জুলাই ২০১৪গত এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র্যাব-১১-এর তিন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর চরম সমালোচনার মুখে পড়ে এলিট ফোর্স৷ তিন কর্মকর্তা এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন৷ নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে৷ অনেকে র্যাব বিলুপ্তির দাবি তোলেন৷ কেউ কেউ র্যাব সংস্কারের কথাও বলেছেন৷
এ অবস্থায় র্যাব গত ২৬শে মে থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে নিয়মিত সড়ক টহল-তল্লাশি বন্ধ করে দেয়৷ তখন র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান জানিয়েছিলেন, র্যাব তার নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে কোনো কাজ করবে না৷ টহল-তল্লাশি তাদের দায়িত্বের আওতায় পরে না৷'
কিন্তু বুধবার র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান জানান, সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে র্যাবকে আবারও মাঠে নামতে হয়েছে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে র্যাব আগের মতো নিয়মিত টহল-তল্লাশিতে অংশ নেবে ৷
র্যাব মহাপরিচালক মোখলেসুর বৃহস্পতিবার রহমান বলেন, ‘‘রমজানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাবকে নিয়মিত টহল-তল্লাশিতে অংশ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ নির্দেশের পর থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে র্যাবের সদস্যরা টহল ও তল্লাশিতে মাঠে নেমেছেন৷''
তবে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘র্যাবের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন৷ প্রয়োজন জবাবদিহিতার আওতায় আনা৷ শুধু নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নয়, র্যাবের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আছে তার স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন৷ তদন্তের পর দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি৷'' তিনি আরও বলেন, এ সব করা না হলে র্যাবের বিরুদ্ধে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা কমবে না৷ সাধারণ মানুষ এই বাহিনীকে গ্রহণ করবে না৷ তিনি মনে করেন, ‘‘এসব না করে র্যাবকে যে আবার পুরো মাত্রায় সক্রিয় করার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাতে র্যাবের দুষ্কর্ম আরো বাড়বে৷'' তিনি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের ঘটনা ছাড়া অন্য যে সব ঘটনায় র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তার আর তদন্ত হবে না৷''
এদিকে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার'-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গত ছয় মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে ১০৮ জন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গড়ে প্রতি মাসে ১৮ জন এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন৷
তাদের মধ্যে ৩৯ জন পুলিশের হাতে, ১৪ জন র্যাবের হাতে এবং যৌথ বাহিনীর হাতে ৮ জন নিহত হন৷ অধিকার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সব কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা এবং দায়মুক্তি রোধে সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷