যত ‘বড়' হই, ততই নিষ্ঠুর হই?
১৮ জানুয়ারি ২০১৬শিশু-অত্যাচার বা নির্যাতনের সামাজিক নাম ‘শাসন'৷ সমাজে প্রায় সবাই শিশুর ‘শাসক'৷ মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়ার পান-বিড়ির দোকানদার, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা সবাই শাসক৷ এই শাসকদের প্রায় সবাই-ই মনে করেন, সবচেয়ে মোক্ষম এবং কার্যকর শাসন হলো ‘প্রহার'৷ সেই প্রহারের ‘স্বাদ' পেতে জন্মের পর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয় না শিশুদের৷ বেশির ভাগ শিশু কথা বলা বা হাঁটা শেখার আগেই চড়-থাপ্পর খেতে শুরু করে নিজের ঘরে৷
খেতে না চাইলে মা-এর থাপ্পর, বাড়িতে নালিশ এলে বাবার পিটুনি – এ সব একসময় গায়ে সয়ে যায়৷ স্কুলে লেখাপড়া শুরু মানেই শিক্ষকদের ‘শাসন' শুরু৷ শাসনের জন্য সেখানে আবার নানা ধরনের ‘হাতিয়ার' চাই৷ বেত, স্কেল, ডাস্টার, পেন্সিল – যাঁর যা পছন্দ৷ পড়া না পারলে মার, ক্লাসে দুষ্টুমি করলে মার, স্কুল ফাঁকি দিলে মার....শুধু মার...৷
‘কর্পোরাল পানিশমেন্ট', অর্থাৎ শিশুদের এই মেরে ‘শাস্তি' দেয়ার বিষয়টি নিয়ে যখন কথা বলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা শুধু স্কুলের বিষয়গুলোই তুলে আনি৷ কিন্তু শিশুদের ‘শায়েস্তা' করার সুযোগ পেলে কে ছাড়ে?
বাড়িতে নিজের সন্তানের বয়সি শিশু গৃহকর্মীকে শাস্তি দিতে চিরুনি, বটি, খুন্তি যা হাতের কাছে পান, তা দিয়েই পেটান গৃহকর্ত্রী৷ কর্তাও এগিয়ে এলে শুধু দারিদ্র্যের কারণে মায়ের কোল ছেড়ে আসা শিশুটির হাসপাতালে ঠাঁই নিতে দেরি হয় না৷
বাবা-মায়ের আর্থিক অক্ষমতার কারণে ওই বয়সেই যাঁদের ঘর ছাড়তে হয়, কল-কারখানায়, রাস্তাঘাটে অস্তিত্ব রক্ষার কী অসম্ভব লড়াইটা তাদের করতে হয়, রাজন, রাকিবরা জীবন দিয়ে কিছুটা হয়ত বুঝিয়ে গেছে৷
আসলে কি আমরা বুঝতে পেরেছি? বুঝতে চাই আসলে? কতটা বুঝতে চাই? কার বেলায় বুঝতে চাই? কার বেলায় চোখ-মুখ বন্ধ রেখে, বিবেকে তালা মেরে রাখি? কেউ নিজের সন্তানকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি, কিন্তু সন্তানের চোখের সামনেই আরেক শিশুকে পেটাই৷ ঘরে শিশু সন্তান রেখে বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র রাসেল থেকে সিলেটের অতি সাধারণ পরিবারের শিশু সন্তান রাজন, কিংবা খুলনার রাকিবকে হত্যা করে ধরা না পর্যন্ত তো এ সমাজেরই কিছু মানুষ আস্ফালনই করে! অথচ সব অত্যাচারীর, সব শিশু হত্যাকারীরই একটা শৈশব ছিল৷ কবি গোলাম মোস্তফা তো তাদের জন্যও লিখেছিলেন, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে৷' শৈশব ধীরে ধীরে দূরে সরে আর মানুষ কি তবে নিষ্ঠুর হতে থাকে?
লেখকের সঙ্গে কি আপনি একমত? জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে...