আরাফাতের মৃত্যু রহস্য
৭ নভেম্বর ২০১৩পিএলও প্রধান ইয়াসির আরাফাত ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে প্যারিসের উপকণ্ঠে একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷ তাঁর মৃত্যুর কারণ কোনোদিনই নিশ্চিত করে নির্ধারিত হয়নি, লাশের কোনো ময়নাতদন্তও হয়নি৷ পরে আরাফাতকে রামাল্লায় কবর দেওয়া হয়৷
ফ্রান্স, রাশিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা গতবছর আরাফাতের লাশ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষাগারে পাঠান৷ ২০০৪ সালেই আরাফাতের জামাকাপড়ে পোলোনিয়াম-২১০ তেজস্ক্রিয় বিষের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল এবং আরাফাতের বিধবা স্ত্রী সুহা আরাফাত বিষয়টির তদন্ত দাবি করেছিলেন৷ এবার সুহা আরাফাত বলেছেন: ‘‘যারা এই অপরাধ করেছে, তাদের সাজা দেওয়ার জন্য আমি ও আমার মেয়ে বিশ্বের প্রতিটি আদালতে যেতে তৈরি৷''
সুইশ বিজ্ঞানীরা কয়েকদিন আগে তাঁদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল রামাল্লায় ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ এবং সুহা আরাফাতকে প্রদান করেছেন৷ আল-জাজিরার বিবরণ অনুযায়ী বিজ্ঞানীদের রিপোর্টে পোলোনিয়াম-২১০'এর বিষক্রিয়ায় আরাফাতের মৃত্যুর স্পষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে – যদিও রিপোর্টের বয়ানে ‘মডারেট' বা মাঝারি গোছের সাক্ষ্যপ্রমাণের কথা বলা হয়েছে৷
অতিমাত্রায় তেজস্ক্রিয় পদার্থটি একমাত্র কোনো আণবিক চুল্লিতে প্রস্তুত করা সম্ভব, বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন৷ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরাফাতের কাছে আসতে পারে, এমন কোনো ব্যক্তির পক্ষেই এই বিষ প্রয়োগ করা সম্ভব ছিল৷ সেই বিচারে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে এখন হাসপাতাল থেকেই নতুন করে তদন্ত শুরু করতে হবে৷
পশ্চিম তীরে থাকাকালীন আরাফাত যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তিনি বাস করছিলেন তাঁর ‘মুকাতা' বা রাষ্ট্রপ্রধানের প্রাসাদে৷ ইসরায়েলি সৈন্যরা সে প্রাসাদ ঘিরে রেখেছিল৷ স্বভাবতই বহু ফিলিস্তিনির তখন ধারণা হয়েছিল যে, ইসরায়েলই এই মৃত্যুর পিছনে৷ এবং তাঁর মৃত্যুর নয় বছর পরেও ফিলিস্তিনিদের কাছে আরাফাতের গুরুত্ব অথবা জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না৷
রামাল্লার স্বশাসন কর্তৃপক্ষের কাছে নাকি রুশ বিজ্ঞানীদের রিপোর্টও ইতিমধ্যে জমা পড়েছে৷ কিন্তু এ যাবৎ কেউ তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন৷ শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনের কথা বলা হচ্ছে৷ অবশ্য রুশ বিজ্ঞানীরা অক্টোবরের মাঝামাঝি মন্তব্য করেছিলেন যে, তারা পোলোনিয়াম বিষ প্রয়োগের কোনো হদিশ পাননি৷ অপরদিকে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগাল পালমোর পুরো ব্যাপারটাকে ‘‘একটি অনন্ত সোপ অপেরায় আরো একটি এপিসোড'' বলে অভিহিত করেছেন৷
আরাফাতের মৃত্যু পোলোনিয়াম বিষ প্রয়োগের কারণে ঘটে থাকতে পারে, এ সন্দেহ গোড়া থেকেই ছিল৷ ২০০৬ সালে লন্ডনে সাবেক রুশ গুপ্তচর আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকোর পোলোনিয়ামের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু আরাফাতের মৃত্যুর কারণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনায় আরো ইন্ধন যোগায়৷ লিটভিনেনকোর চায়ে পোলোনিয়াম মিশিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল৷ আরাফাতের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন সুহা আরাফাত – এবং আরাফাতের নিকট সহচরদের মধ্যে কেউ এই কাজ করেছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷
পোলোনিয়াম-২১০ এমন একটি বিষ যে, তার এক গ্রামের দশ লাখ ভাগের এক ভাগই মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ)