আশ্রয়শিবিরে থেকে নতুন জীবনের লড়াই
১২ মার্চ ২০২০মহল্লায় পোড়া বাড়ি, দোকান, ঝলসে যাওয়া গাড়ির কঙ্কাল এখনও হিংসার ভয়াবহতার সাক্ষী হয়ে পড়ে আছে। আর তার মাঝখানে মুস্তাফাবাদে হিংসায় সর্বহারা মানুষরা আবার নতুন করে বাঁচার লড়াই করছেন। আর তাঁরা যাতে জিততে পারেন তার জন্য অক্লান্তভাবে যুদ্ধে সামিল হয়েছেন ধর্ম, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে একদল মানুষ, কয়েকটি সংগঠন এবং দিল্লি সরকার। একটু দূরের ধ্বংসের ছবির মতো এই লড়াইয়ের দৃশ্যও বাস্তব এবং তা আশা জিইয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট।
সারি সারি তাঁবুর ভিতর লোহার ফোল্ডিং খাট। তার ওপর গদি বিছানো। তার ওপরই বসে বা শুয়ে আছেন গৃহহীন মানুষজন। সামনের ছবিটা অস্পষ্ট। শুধু লড়াই জারি। জীবন বাঁচাতে হঠাৎই নিজেদের ঘর-গেরস্থালি ফেলে আসা মানুষেরা এখন প্রকৃত অর্থেই সর্বহারা। আধার সহ যাবতীয় পরিচয়পত্র হারিয়েছেন। নিজেদের থাকার জায়গা পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। জ্বলে গিয়েছে ব্যাঙ্কের কাগজ, যাবতীয় দলিল। তার সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে আরও অনেক কিছু। তারপরেও এই মানুষগুলির সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছে দিল্লি সরকারের বিভিন্ন সংগঠন, বেশ কয়েকটি এনজিও, চিকিৎসক, আইনজীবী এবং স্বেচ্ছাসেবীর দল।
একটা বেশ বড় তাঁবুর মধ্যে থেকে ভেসে আসছিল কচিকাচার গলায় হা হা, হো হো হাসি। চমক লাগল। এমন পরিবেশে কারা হাসছে? প্রশ্নের জবাব দিলেন বর্তিকা। দিল্লি কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটসের কর্মী। হিংসা থামতেই ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁরা বাচ্চাদের স্বাভাবিক করার কাজ করছেন। মন থেকে যন্ত্রণা, ভয়, আশঙ্কা দূর করার চেষ্টা করছেন। ফেরানোর চেষ্টা করছেন হারানো আত্মবিশ্বাস। ওই হাসি তারই অঙ্গ। ডয়চে ভেলেকে বর্তিকা বলছিলেন, ''প্রথম প্রথম বাচ্চারা ভয় পেয়ে চুপ করে থাকত। ভয় পেত। অল্পে রেগে যেত। কেঁদে ফেলত। তারপর মনোবিজ্ঞানীদের দিয়ে তাঁদের দেখানো হয়েছে। শিক্ষিকাদের আনা হয়েছে। বাচ্চারা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। তারা এখান থেকে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। বাকিরা পড়ছে, খেলছে, হাসছে। এটাও কম সাফল্য নয়।''
পাশেই মহিলা আয়োগের সদস্যরা। তাঁরা মহিলাদের পরামর্শ দিচ্ছেন কী করতে হবে। কীভাবে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। তাদের পাশে অস্থায়ী মিনি হাসপাতাল। সেখানে চিকিৎসা যেমন চলছে, তেমনই দীর্ঘদিন ধরে মনের ভয় দূর করার কাজ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। সেন্ট জোসেফ হাসপাতালের অংশু অ্যান্টনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ''সবাই এক কাপড়ে চলে এসেছিলেন। সেটাই পরে থেকেছেন। তাই সংক্রমণ হয়েছিল অনেকের। টিয়ার গ্যাসের ফলে চোখে সংক্রমণ ছিল। সে সব এখন কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। এখন সাধারণ রোগের চিকিৎসা চলছে।'' পাশেই চিকিৎসকদের সংগঠন ওষুধ নিয়ে বসে আছে। সেখানেও ডাক্তার দেখানোর, ওষুধ পাওয়ার, রক্ত সহ বিভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসক ওয়াসিমের দাবি, ''লোকের মন থেকে ৩০ শতাংশ আতঙ্ক দূর করা সম্ভব হয়েছে।'' আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন আইনি সাহায্য দেওয়ার। এমন অভিযোগও উডঠছে যে, এফআইআর করতে গেলে উল্টে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর করে দেওয়া হচ্ছে।
একপাশে বসেছিলেন দুই মহিলা। তাঁরা জানালেন, ''অপেক্ষা করছি, দিল্লি সরকারের ক্ষতিপূরণের জন্য। পেলেই ঘর ভাড়া নিয়ে উঠে যাব। নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য।''
আরেকটা যুদ্ধ। তাতে পাশে আছেন কিছু মানুষ। কিছু সংগঠন। এই লড়াই, এই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া বুঝিয়ে দিচ্ছে, সব আশা শেষ হয়ে যায়নি। রক্তাক্ত অতীত থেকে তাই ভবিষ্যতের দিকেই যাত্রা শুরু করেছেন তাঁরা।