আয়ু বাড়ার কারণে ‘ঝুঁকির মুখে বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবা’
২ জানুয়ারি ২০১৫স্বাস্থ্যসহ সেবা খাতগুলোও এ মুহূর্তে এই চাপ টানতে সেভাবে প্রস্তুত নয়৷ ফলে বয়স্কদের বোঝা মনে হতে পারে৷ সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই বয়স্ক নাগরিকদের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে৷ বিশেষ করে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ দিতে সন্তানদের বাধ্য করা হচ্ছে৷ এর জন্য সরকারি বেতন স্কেলে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের খবর দিচ্ছে সরকার৷ আর কেউ এই দায়িত্ব পালন না করলে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আইনও হয়েছে৷
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৯ দশমিক ৪ বছর৷ ২০০৮ সালে যেখানে গড় আয়ু ছিল ৬৬ দশমিক ৮ বছর৷ ওদিকে ভারতের গড় আয়ু এখনো ৬৪ বছর৷ আর নেপালে ৬৯ বছর৷ যদিও চীনে গড় আয়ু ৭৩ বছর৷
২০১২ সালের এই হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে গত বছরের মাঝামাঝিতে৷ প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর এই হিসাব করা হয়৷ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, চার বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ২ দশমিক ৬ বছর৷ বিশেষজ্ঞরা এর পিছনে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন সুবিধাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়কে উল্লেখ করছেন৷ এছাড়া গর্ভাবস্থায় মৃত্যু, মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার কমাটাও গড় আয়ু বাড়ার একটা বড় কারণ৷
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর নূরুন্নবী বলেছেন, গড় আয়ু বাড়ার ক্ষেত্রে শিশু মৃত্যুর হার কমে যাওয়ার একটা সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে৷ শিশু মৃত্যুর হার কমাতে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করছে৷ তাই দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই মানুষের গড় আয়ু বাড়তে থাকায় বাংলাদেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা৷ এরও একটা প্রভাব ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে পড়তে পারে৷ তবে এখন থেকেই যে সরকার বয়স্কদের ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে – সেটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন এই জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ৷
পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ বছরের নীচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১ হাজারে ২০০৮ সালে ছিল ৫৪ শতাংশ৷ ২০১২ সালের শেষে গিয়ে তা এসে দাঁড়ায় ৪২ শতাংশে৷ অর্থাত্ শিশু মৃত্যু বন্ধে বেশ ভালো করছে সরকার৷ অধ্যাপক এম নূরুন্নবীর কথায়, ‘‘আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবীমা নেই৷ এছাড়া বয়স্কদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা দরকার হয়, সেই ব্যবস্থা এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি৷'' এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বয়স্করা বেশিরভাই উপার্জনক্ষম নয়৷ ফলে বয়স্কদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটা সংকট দেখা দিতে পারে৷
জরিপে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে প্রতি হাজারে মৃত্যুর হার ছিল ৬ শতাংশ৷ এই মৃত্যুর হার কমে এখন ৫.৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ মৃত্যুর হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি৷ গ্রামে মৃত্যুর হার ৫.৭ শতাংশ আর শহরে তা ৪.৬ শতাংশ৷ প্রতি হাজারে দেশে মাতৃমৃত্যুর হারও কমে এসেছে৷ ২০০৮ সালে যেখানে ছিল ৩.৪৮ শতাংশ, ২০১২ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২.০৩ শতাংশে৷ তবে জরিপ অনুসারে, নারীদের শিশু জন্ম দেবার হারও কমেছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা সহজতর হওয়া এবং শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়ায় শিশু জন্মের হার কমে এসেছে৷
আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন বা এনজিও ‘পপুলেশন কাউন্সিল' বাংলাদেশ শাখার পরিচালক উবায়দূর রব বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি ঘটলেও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘দেশে এখনো অকালে গর্ভপাতের ঝুঁকি রয়েছে৷ তাই জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য বন্ধ্যাত্বকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে৷ এছাড়া শহরের গরিবদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়৷ অধিকাংশ মানুষ এখনও শহরমুখি৷ তাই তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো প্রয়োজন৷ তাহলে হয়ত বয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে৷''
তাঁর মতে, গ্রামে পর্যাপ্ত চাকরির ব্যবস্থা করলে মানুষের শহরমুখি হওয়ার প্রবণতা কমবে৷ আর তাতে জনসংখ্য ভারসাম্যও প্রতিষ্ঠা হবে৷