ইইউ-র শরণার্থী নীতি
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ইউরোপীয় ভাবাদর্শের দোহাই দিয়ে এবং সবার প্রতি আবেগপ্রবণ আবেদন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার ২৮টি সদস্য দেশের সরকারকে শরণার্থী সংক্রান্ত নীতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা করলেন৷ বর্তমান পরিস্থিতির ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এভাবে আর চলতে পারে না৷ তাঁর মূল্যায়ন যে একেবারে ঠিক, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তাঁর প্রস্তাব বর্তমান নিয়মের কাঠামোর মধ্যে কার্যকর করা সম্ভব কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷ শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সব ইইউ সদস্য দেশগুলির মধ্যে ভাগ করে দিতে ইয়ুংকার এক স্থায়ী ও বাধ্যতামূলক কাঠামোর ডাক দিয়েছেন৷ একে বিপ্লব ছাড়া কিছুই বলা যায় না৷ কারণ এই মুহূর্তে মাত্র ৫টি দেশ ৯০ শতাংশ বহিরাগতদের আশ্রয় দিচ্ছে৷
শক্তের ভক্ত, নরমের যম
এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দূর করতে ইয়ুংকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির অস্ত্র প্রয়োগ করতে চান, যেমনটা প্রায়ই করা হয়ে থাকে৷ যে সব সদস্য দেশ একেবারেই কোনো শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ করছে না বা খুব কম সংখ্যক বহিরাগতদের আশ্রয় দিচ্ছে, তাদের মাথাপিছু ৬,০০০ ইউরো অর্থ জরিমানা গুনতে হবে৷ অন্যদিকে যে সব দেশ তাদের জন্য ধার্য কোটার তুলনায় বেশি মানুষ গ্রহণ করছে, তারা বাড়তি মানুষ প্রতি ৬,০০০ ইউরো পাবে৷ পূর্ব ইউরোপের ইইউ সদস্য দেশগুলি এমন এক ব্যবস্থার ফলে নতি স্বীকার করবে কিনা, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷
শরণার্থীদের প্রথম বার নথিভুক্ত করা এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করার দায়িত্ব এতকাল ইটালি, গ্রিস ও হাঙ্গেরির মতো দেশের কাঁধেই রয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই বহির্সীমানায় শরণার্থীদের ঢল নেমেছে৷ ইয়ুংকার সেই বোঝা ২৮টি সদস্য দেশের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান৷ এখনো পর্যন্ত সদস্য দেশগুলি এমন সংহতির মনোভাব প্রত্যাখ্যান করে এসেছে৷ ইয়ুংকারের প্রস্তাব কার্যকর হলে প্রচলিত ও কার্যত অকেজো হয়ে পড়া ডাবলিন-সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাবে৷ গ্রিস ও ইটালি বহু বছর ধরেই এই নিয়ম পরোয়া করছে না৷ শরণার্থীদের হাঙ্গেরি থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে জার্মানিতে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়ে এখন ম্যার্কেল সরকারও এই ব্যবস্থা কার্যত বাতিল করে দিয়েছে৷
সংশয় দূর করার প্রচেষ্টা
প্রস্তাবিত এই ব্যবস্থার আওতায় এমন প্রাথমিক শরণার্থী শিবির গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হলে এবং শুধু অর্থনৈতিক কারণে ইউরোপে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে যেখান থেকে শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যর্পণ করা হবে৷ তাছাড়া ইইউ-র বহির্সীমানায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে৷ তাছাড়া নিরাপদ দেশের এক কেন্দ্রীয় তালিকা সৃষ্টি করা হবে, যার মাধ্যমে শুধু বাছাই করা দেশের মানুষকে ইউরোপে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে৷
জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার ভালো করেই জানেন, যে তাঁর প্রস্তাবের মাধ্যমে ইইউ বর্তমানের তুলনায় বেশি মানুষ গ্রহণ করবে না৷ তবে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের গতিবিধি আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের প্রতি আরও মানবিক আচরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে৷ ইয়ুংকার স্বীকার করেছেন যে, ইউরোপের মানুষের মনে লাগামছাড়া অভিবাসন সম্পর্কে ভীতি রয়েছে৷ তাই ইউরোপের মানুষের মধ্যে বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আরও উদ্যোগ নিতে হবে৷
সব মিলিয়ে ইউরোপের কাঁধে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বোঝা নেই৷ সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলি যে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী গ্রহণ করছে, সে তুলনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবদান খুবই সামান্য৷ স্বয়ং ইয়ুংকার এ কথা স্বীকার করেছেন৷ আগামী সোমবার ২৮টি সদস্য দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে এই প্রস্তাবমালা নিয়ে আলোচনা হবে৷