‘ইউক্রেনে প্রতিরোধ আরো অনেকদিন চলবে’
৪ মার্চ ২০২২ইউক্রেনে রুশ হামলার পর দেশটি থেকে বহু বাংলাদেশি আশেপাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ মাহবুবুল আলম জানান, তাদের হিসাবে আনুমানিক দেড় হাজার বাংলাদেশি ইউক্রেনে বসবাস করতেন৷ ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' ইউটিউব টকশোতে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে ইউক্রেন যুদ্ধের পরে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়৷ আমরা প্রাথমিকভাবে যে খবর পেয়েছি তাতে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি আছেন৷ তাদের অধিকাংশ বা আনুমানিক পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি পোল্যান্ডে চলে গেছেন৷ তবে সঠিক সংখ্যাটা এই মুহূর্তে জানানো কঠিন৷ এর বাইরে হাঙ্গেরি, রোমানিয়াতেও অনেকে গেছেন৷’’
তারপরও দেশটির বিভিন্ন শহরে কিছু বাংলাদেশি এখনও রয়েছেন৷ এরমধ্যে রাজধানী কিয়েভে ২৫ থেকে ৩০ জন আছেন বলে জানান তিনি৷ ‘‘নিরাপদ মনে না করলেও তারা বিভিন্ন কারণে শহরটিতে থেকে গেছেন বা বাধ্য হয়েছেন,’’ বলেন মাহবুবুল৷
বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কিয়েভ চতুর্দিক থেকে ঘেরা হলেও এখনও আত্মসমর্পণের বিষয়ে সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই৷ আমার মনে হয় এই প্রতিরোধ আরো অনেকদিন চলবে৷ যদি না খারকিভের মতো বড় ধরনের বিমান হামলা হয়৷ খারকিভেও বড় বিমান হামলা হলেও পতন কিন্তু হয়নি৷’’
৩০ থেকে ৩৫ লাখ জনগোষ্ঠীর কিয়েভের বেশিরভাগ নারী ও শিশু বাসস্থান ছাড়লেও এখনও অনেকে বাসিন্দা শহরে রয়েছেন বলে জানান তিনি৷ সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘‘কিয়েভে স্বাভাবিক জীবন একেবারেই নেই৷ কারফিউ চলছে সবসময়৷ শুধু খাবার দাবার, গ্রোসারি শপ, ওষুধের দোকান ছাড়া আর সব বন্ধ৷ তবে লেভিভে পরিস্থিতি তার তুলনায় স্বাভাবিক৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘কিয়েভের উপকণ্ঠে তুমুল যুদ্ধ চললেও এখন পর্যন্ত শহরগুলো ইউক্রেনের সৈন্যদের দখলেই রয়েছে৷''
রাশিয়ার দাবি, তারা শুধু ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনার উপর হামলা চালাচ্ছে৷ তবে মাহবুবুল আলম মনে করেন চিত্রটি ভিন্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘খারকিভ সবচেয়ে বেশি এথনিক রুশদের শহর৷ সেই শহরে সিভিল সেক্টরে প্রচুর ক্লাস্টার বোম্বিং হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়ে গেছে৷ একই ঘটনা ঘটেছে অন্যান্য শহরেও৷’’
রুশ-ইউক্রেনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে যারা আছি তাদের এটা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয় যে, রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করতে পারে৷ এটা মিলিটারি অপারেশন নয় এটা একটা সার্বিক যুদ্ধ৷ ...দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক নিয়মে কোন কারণেই একটি দেশে এমন সার্বিক হামলা হতে পারে না৷’’
উদ্বেগে আছেন রাশিয়ার বাংলাদেশিরাও
অনুষ্ঠানে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে যোগ দেন বাংলাদেশি প্রবাসী বারেক কায়সার৷ তিনি রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করে বলেন, ‘‘যুদ্ধের শুরুতেই পশ্চিমা দেশগুলো যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়া শুরু করল তখনই এক ধরনের অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে রাশিয়াতে৷ ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করছিলেন এখানকার নাগরিকরা৷ বিশেষ করে যারা বিদেশি আছেন তারা ক্যাশ টাকা হাতে রাখার চেষ্টা করছিলেন৷ রাশিয়ানরা নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব বাজার আছে সেগুলো সাধারণভাবে তারা যত বাজার করেন তার চেয়ে কয়েকগুণ কিনে রাখার চেষ্টা করছেন৷’’
তিনি জানান, যুদ্ধের প্রভাবে দেশটির বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে৷ সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও৷ বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে রয়েছেন তাদের স্বজনরা এর আগে চিন্তিত ছিলেন না তাদের নিয়ে৷ কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের পরে বা রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকে তারা এক ধরনের চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন৷ যদিও এই হামলায় এখন পর্যন্ত সরাসরি রাশিয়া আক্রান্ত হয়নি৷ কিন্তু স্বজনরা আসলে উদ্বিগ্ন৷ যারা বাংলাদেশি সিনিয়র সিটিজেন রয়েছেন বা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তারা এই পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকটা অভ্যস্ত৷’’
অবশ্য সার্বিকভাবে মস্কোর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক আছে বলেই জানান বারেক কায়সার৷ এই গবেষকের মতে দেশটির বেশিরভাগ মানুষ প্রেসিডেন্ট পুটিনকে সমর্থন দিচ্ছেন৷ তবে বিরোধী মতও রয়েছে৷ অংশগ্রহণ কম হলেও ৫২টি শহরে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানান তিনি৷
এফএস/এআই