ইউটিউবার থেকে সফল লেখক?
২২ ডিসেম্বর ২০১৬পেটার স্মিটস তাঁর পয়সা রোজগার করেন ইউটিউব ভিডিও থেকে৷ চার বছর ধরে তিনি কম্পিউটার গেম খেলার সময় নিজের ভিডিও তুলছেন৷ ২৭ বছর বয়সি পেটার হলেন যাকে বলে কিনা লেট'স-প্লেয়ার৷ চারজন বন্ধুর সঙ্গে মিলে তিনি ‘কলেক্টিভ পিট স্মিট' সৃষ্টি করেছেন৷ প্রতিদিন তাঁরা ইউটিউবে চারটি থেকে পাঁচটি ক্লিপ পোস্ট করে থাকেন৷ তাঁদের ফলোয়ারের সংখ্যা ইতিমধ্যে ২০ লাখ ছাড়িয়েছে৷ অর্থাৎ তাঁরা ইউটিউবের জগতে জার্মানির সফলতম তারকাদের মধ্যে পড়েন৷ পাঁচজনে মিলে দু'টি ভিডিও চ্যানেলও চালান, এছাড়া নিজেদের ফ্যান আর্টিকেল বিক্রি করেন৷ এবার তাঁরা এক লেখককে সাথে নিয়ে তাঁদের প্রথম বই বার করছেন৷
পেটার জানালেন, ‘‘প্রথম যখন প্রস্তাব উঠল যে, একটা বই বার করা যাক, তখন আমার বেশ দ্বিধাই ছিল৷ বললাম, জানি না, আমরা তো নিজেরাই বই পড়ি না৷ তাহলে লাভ? তখন বলা হলো: তোমার সম্পর্কে এরকম একটা বই থাকলে কেমন লাগবে, সেটা একবার ভেবে দেখো? ‘কুল', তাই না?''
সুইডেনের পিউ-ডি-পাই হলেন বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত লেট'স প্লেয়ার৷ তিনি ২০১৫ সালে একটি বই বার করেন; এক সপ্তাহের মধ্যে শুধু জার্মানিতেই সে বই-এর দশ হাজার কপি বিক্রি হয়৷ এর চাইতেও বেশি সাফল্য পেয়েছেন ভিডিও ব্লগার সুই সাগ, যার প্রথম উপন্যাস এক সপ্তাহের মধ্যে ৮০ হাজার কপি বিক্রি হয়৷
জার্মান ইউটিউবাররাও বই বার করে সাফল্য পেয়েছেন: ইয়োনাস এমস এবং তিন কমেডিয়ান ওয়াই-টিটি-র বই জার্মান বেস্টসেলারের তালিকায় উঠেছে৷
‘মলাট আর পাতা থাকলেই বই হয় না'
সাহিত্য সমালোচক ইয়ান ড্রেস-এর মতে তারকা হলেই হলো, আর কোনো কথা নেই৷ তিনি এক জার্মান বেতারকেন্দ্রের হয়ে সাহিত্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁর মতামত দিয়ে থাকেন৷ ইউটিউবার লেখকদের সম্পর্কে তাঁর বিশেষ উচ্চ ধারণা নেই৷ ইয়ান বলেন, ‘‘মলাট আর পাতা থাকলেই যে আমাদের কাছে তা বই হয়ে যাবে, এমন নয়৷ তার মানে আবার এই নয় যে, কোনো ইউটিউব স্টার একটা ভালো বই লিখে ফেললে, আমরা তা গ্রাহ্য করব না৷ ইউটিউব স্টার হওয়ার মানেই এই নয় যে, সে লিখতে পারে না অথবা পারবে না৷''
কোন ইউটিউব স্টার কতটা লিখছেন, সেটা কিন্তু আরেক ব্যাপার৷ পিউডিপাই শুধু উদ্ধৃতি দিয়েই ক্ষান্ত৷ ইউটিউবারদের অনেক বই হাসি-ঠাট্টার মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যায় উপদেশ বা পরামর্শ দেবার চেষ্টা করে৷ অনেক ক্ষেত্রেই টেক্সট লিখে দেন কোনো গোস্টরাইটার বা অনামা লেখক৷ কিন্তু বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় ইউটিউব স্টারের নাম করে৷
পিটস্মিটের ‘জুয়োখেলায় সর্বস্বান্ত' বইটিতে লেট'স-প্লেয়ারের দুনিয়ার পরিবেশ সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ পেটার স্মিটস বলেন, ‘‘এই বই দিয়ে যে আমরা কোনো নতুন পাঠক জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতে পারব, এমনটা আমরা মনে করি না৷ যাঁরা কখনো-সখনো আমাদের কোনো ভিডিও দেখেছেন, তাঁরাই এই বই পড়ে মজা পাবেন, বলে আমাদের ধারণা৷ নয়ত লোকে একজন ইউটিউবারের বই-এর জন্য দশ ইউরো খরচ করবে কেন? শুধু যে ইউটিউবারকে তারা চেনে, তার জন্যই তারা সেই প্রচেষ্টা করবে৷''
ইন্টারনেট আর বই-এর মধ্যে কোনো বুনিয়াদি দ্বন্দ্ব নেই, আবার কোনো যৌক্তিক সম্পর্কেও নেই৷ ইন্টারনেট আবিষ্কার করার পর থেকে পেটার স্মিটস আর বিশেষ বই পড়েন না৷ আর পড়লেও, সেটা স্মার্টফোনে!
ইউলিয়া হিৎস/এসি