1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে আসার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হলো এক বাংলাদেশি যুবকের

১৮ অক্টোবর ২০১৭

নির্যাতন, তিনবার দাস হিসেবে বিক্রি হওয়া, এমনকি নিজ আত্মীয়কে মরতে দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন খালিদ হোসেন৷ অথচ স্বপ্ন দেখেছিলেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের৷ মনে করেছিলেন, সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইটালি পৌঁছানো সময়ের ব্যাপার মাত্র৷

https://p.dw.com/p/2m3RW
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth

বহু রোহিঙ্গা শরণার্থী যেমন সংঘাতপ্রবণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছেন নিরাপদ জীবনের আশায়, তেমনই আরো জীবনের আশায় অনেক বাংলাদেশিও পাড়ি দিয়েছেন ইউরোপে৷ ইউরোপে যাওয়াটা যদিও মোটেই সহজ নয়৷

এই যেমন খালেদ হোসেনের কথাই ধরুন৷ এই তরুণ দক্ষিণ এশিয়ার আরো অনেকের মতো লিবিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন৷ সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই তিনি একদিন হাজির হন লিবিয়ার সমুদ্র উপকূলে৷ সমুদ্র পাড় হলেই ইটালি৷ তাই আশায় বুক বাঁধেন তিনি, উঠে বসেন একটি নৌকায়৷ হোসেনের কথায়, ‘‘আমি উদ্দীপ্ত ছিলাম এটা ভেবে যে, কয়েক ঘণ্টা পরেই ইটালি পৌঁছাবো৷ ভেবেছিলাম, আমার পরিবারের সব আর্থিক সমস্যা তখন মিটে যাবে৷ পঙ্গু বাবার কাছে প্রমাণ করবো যে, আমি ফেলনা নয়৷''

কিন্তু খালেদের স্বপ্ন দুঃসপ্নে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি৷ ছোট্ট নৌকায় তাঁর সঙ্গে শতাধিক যাত্রী উঠেছিলেন৷ এঁদের মধ্যে আফ্রিকার অনেক মানুষ ছিলেন, ছিলেন হোসেনের নিজের এলাকা বিয়ানিবাজারের বেশ কয়েকজন৷ ৩০ ফুট লম্বা প্লাস্টিকের নৌকাটি ইটালির উদ্দেশ্যে মাত্র ঘণ্টা তিনেক চলার পর ভেঙে যায়, শুরু করে ডুবতে৷

হোসেন জানান, মুহূর্তের মধ্যে নৌকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ কেউ কেউ সাগরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন৷ কেউ কেউ আবার নৌকার পাটাতনে থাকা পেট্রোলের প্লাস্টিকের ক্যানগুলো খালি করতে শুরু করেন৷ আশা সেগুলোতে ভেসে জীবন বাঁচাবেন৷ এই হুড়াহুড়িতে তাঁর চোখের সামনেই মারা যান এক বাংলাদেশি৷

‘‘পেট্রোলের মধ্যে আমাদের পা ডুবে পুড়ে যাচ্ছিল৷ তখন আমার চাচাতো ভাই ফরিদ পানিতে ঝাঁপ দেয়৷ দূরে একটা জাহাজ দেখে সেদিকে সাঁতরানোর চেষ্টা করে সে৷ কিন্তু অল্পক্ষণেই মারা যায়৷''

চোখের সামনে নিজের আত্মীয়কে মরতে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ংকর৷ নিজে অবশ্য প্রাণে বেঁচে যান খালেদ৷ লিবিয়ার একটি গ্যাং সমুদ্র থেকে তাঁকে উদ্ধার করেছিল৷ জীবন বাঁচলেও ভোগান্তির শেষ হয় না৷ লিবিয়ার সেই গ্যাং তাঁকে একটি কনস্ট্রাকশন ক্যাম্পে দাস হিসেবে বিক্রি করে৷ অন্তত তিনবার বিক্রি হওয়ার পর ছেলের মুক্তির জন্য পঙ্গু বাবা ১২ হাজার মার্কিন ডলার জোগাড় করে লিবিয়া পাঠান৷ অবশেষে মুক্তি মেলে খালেদের৷ দেশে ফিরে যান তিনি৷

খালেদ হোসেনের মতো এমন অবস্থা আরো অনেকের হয়েছে৷ যদিও দালালরা সেসব ঘটনা চেপে গিয়ে বরং দুয়েকটি সাফল্যের গল্প শুনিয়ে বাংলাদেশি তরুণদের এমন কঠিন যাত্রায় উদ্বুদ্ধ করে৷ শুধুমাত্র খালেদের এলাকা বিয়ানিবাজার থেকেই গত এক বছরে হাজারখানেক তরুণ এভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ আর গোটা বাংলাদেশের হিসেব করলে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি৷ 

এআই/ডিজি (এএফপি)