ইউরোপে ঢোকার শীর্ষে বাংলাদেশি অভিবাসীরা!
৬ মে ২০১৭আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘‘লিবিয়া থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকারী শরণার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যাই বেশি৷ ২০১৬ সালের প্রথম তিন মাসে মাত্র একজন বাংলাদেশি ইতালিতে প্রবেশ করলেও ২০১৭ সালে একই সময়ে এই সংখ্যা ২ হাজার ৮০০ জনে পৌঁছেছে৷ এটি যে কোনও দেশ থেকে ইউরোপে প্রবেশকারীদের সংখ্যার হিসেবে সর্বোচ্চ৷''
পত্রিকাটি লিখেছে, ‘‘কিছুদিন আগ পর্যন্ত সাব-সাহারা অঞ্চলের শরণার্থীদের সংখ্যা ছিল বেশি৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে৷''
আইওএম-র ফ্লাভিও ডি জিয়াকোমো এই বিষয়ে বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো অভিবাসীদের জাতীয়তা এবং বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা৷ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ইতালিতে পৌঁছা বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২ হাজার ৮৩১ জন৷''
ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার হওয়া শরণার্থীরা উদ্ধারকর্মীদের জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে লিবিয়া বা তুরস্ক যেতে একজনকে দশ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দিতে হয়৷ একটি ‘এজেন্সি' তাদের লিবিয়া পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেয়৷ ওয়ার্কিং ভিসার জন্য এজেন্সিকে ৩ থেকে ৪ হাজার ডলার দিতে হয় বলেও জানিয়েছেন তারা৷
আইওএম-র এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে প্রথমে অভিবাসীদের দুবাই ও তুরস্কে নেয়া হয়৷ এরপর বিমানে করে তারা লিবিয়া পৌঁছান৷ বিমানবন্দরে কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং কাগজপত্র নিয়ে যান৷''
অনেক বাংলাদেশি দীর্ঘদিন লিবিয়াতে বাস করার পর ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন৷ আবার অনেকেই আছেন কিছুদিন আগে সেখানে পৌঁছেছেন৷ তারা সরাসরি ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছেন৷ আইওএম-র তথ্য অনুসারে, একজন বাংলাদেশি অভিবাসীকে লিবিয়া যেতে ১০ হাজার ডলার এবং ইউরোপে যেতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার জন্য নৌকা খরচ দিতে হয় ৭০০ ডলার৷
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে অপসারণে সামরিক অভিযানের পর লিবিয়ায় অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়৷ ইসলামিক স্টেট এবং একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ সেদেশে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানবপাচারকারীরা সক্রিয় হয়েছে এবং বিশাল অংকের অর্থ আয় করছে৷
বাংলাদেশিদের নৌপথে ইউরোপে যাওয়া প্রসঙ্গে রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট-এর প্রধান অধ্যাপক সি আর আবরার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বৈধপথে মাইগ্রেশনের সুবিধা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন মানুষ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমান৷ এর এই অবৈধ মাইগ্রেশনের সঙ্গে দুষ্ট চক্র জড়িয়ে পড়ে৷ তারা তাদের ব্যবসা বা অর্থ আদায়ের জন্য এই চক্র তৈরি করে৷ মানুষ নানাভাবে প্রতারিত হয়৷ সরকারিভাবে লিবিয়াতে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার থাকলেও তারপরও লোকজন যাচ্ছে৷ সেখান থেকে ইউরোপের গন্তব্য খুঁজছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই চক্রগুলো আগেও সক্রিয় ছিল৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ এর আগে আমরা দেখেছি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে দুবাই ও সুদান হয়ে লিবিয়া৷ আর লিবিয়া থেকে ইউরোপে ঢোকার প্রবণতা৷ এখন হয়তো সেখান থেকে একটি গ্রুপকে ইউরোপে পাঠান হচ্ছে৷''
উল্লেখ্য, লিবিয়া হয়ে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রবেশে শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য সহজ রুটে পরিণত হয়েছে৷ তবে এই বিপদসঙ্কুল পথে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতি বছর মৃত্যু হচ্ছে অনেক মানুষের৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷