ইউরো মুদ্রা
১ এপ্রিল ২০১২স্থায়ী তহবিলের প্রেক্ষাপট
আয়ারল্যান্ড, গ্রিস, পর্তুগাল সহ দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউরোজোন ভবিষ্যতে এমন সংকটের সম্ভাবনা আগাম প্রতিরোধ করতে চায়৷ এমনটা করতে হলে যে একটি জরুরি তহবিলের প্রয়োজন, সেবিষয়ে কখনোই কোনো সন্দেহ ছিল না৷ গ্রিসের মতো দেশের জন্য অস্থায়ী তহবিলের পর স্থায়ী এক তহবিল গঠন করতে রাজি হয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা৷ উদ্দেশ্য, আবার সংকট দেখা দিলে যাতে এই কাঠামোর মধ্যেই তা সামলানো যায়৷
কিন্তু কত পরিমাণ অর্থ জমা থাকলে সেই তহবিল যথেষ্ট মজবুত হবে, তা নিয়ে বেশ মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছিল৷ বিশেষ করে জার্মানি বেঁকে বসেছিল৷ কারণ বার্লিনের আশঙ্কা, বিপদের জন্য এমন প্রস্তুতি নিলে কোনো দেশ সেই বিপদ এড়ানোর তেমন চেষ্টা করবে না৷ তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নিজেদের ঘর সামলাবে না৷ অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, স্থায়ী জরুরি তহবিল যথেষ্ট মজবুত না হলে কোনো লাভ নেই৷ কারণ সংকট দেখা দিলে তা সামলাতে প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া যাবে না, পুঁজিবাজারেরও আস্থা থাকবে না৷ প্রথমে ইসএম'এর জন্য ৫০,০০০ কোটি ইউরো ধার্য করা হয়েছিল৷ চারিদিক থেকে চাপের মুখে শুক্রবার ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীরা কোপেনহেগেন'এ এই অঙ্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন৷ ফলে তহবিলে এবার ৮০,০০০ কোটি ইউরোরও বেশি অঙ্ক জমা পড়বে৷ তার মধ্যে অবশ্য কাগজে-কলমে গ্রিসের জন্য আলাদা সাহায্যের অর্থও রয়েছে৷ অর্থাৎ অস্থায়ী ইএফএসএফ তহবিলে যে ১৯,২০০ কোটি ইউরো রয়েছে, তাও এই স্থায়ী তহবিলে জমা পড়ছে৷
নতুন পরিস্থিতিতে জার্মানির অবস্থান
কোপেনহেগেন সম্মেলনের আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যে জার্মানি তার প্রতিরোধ অনেকটা তুলে নিচ্ছে৷ এবিষয়ে সংশয় কাটাতে বৃহস্পতিবার জার্মানির অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে বেশ কৌতুকের সঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা পরস্পরের সঙ্গে আলোচনার জন্য মিলিত হচ্ছি৷ এবিষয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে৷ একে দ্বন্দ্বও বলা যেতে পারে৷ সব সময়ই আমরা কিন্তু সাধারণ সমাধানসূত্র খুঁজে পাই৷ পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে এবং সার্বিক সমাধানসূত্র খোঁজার স্বার্থেই আমরা এটা করে থাকি৷''
এই সিদ্ধান্তের কথা জেনে শুক্রবার পুঁজিবাজার সত্যি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল৷ মনে রাখতে হবে, ইউরোপীয় নেতাদের ঐক্যের প্রশ্নে পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো নয়৷ তবে কোপেনহেগেনে ইউরোজোন অর্থমন্ত্রীরা মোটামুটি স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরতে পারায় এই আস্থা দেখা যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ডেনমার্কের অর্থমন্ত্রী মার্গারেটে ফেস্টহাগার বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না, পুঁজিবাজারকে কখনো পুরোপুরি সন্তুষ্ট করা সম্ভব৷ আমরা শুধু বলতে পারি, এটাই আমাদের উদ্দেশ্য৷ বলতে পারি, আমাদের ‘ফায়ারওয়াল' এত বড় ও শক্তিশালী৷ এর বেশি কিছু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷''
ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
তবে ৮০,০০০ কোটি ইউরো শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত শান্তি আনতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে৷ কারণ অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা ওইসিডি মঙ্গলবার বলেছে, ইসএম তহবিলে আপাতত এক ট্রিলিয়ন বা এক লক্ষ কোটি ইউরো থাকা উচিত৷ তবে এক ধাক্কায় নয়, আগামী দুই বছরের মধ্যে এই লক্ষ্য পূরণ করা যেতে পারে৷ তারপর আর্থিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, যে এত বড় মাপের তহবিলের আদৌ প্রয়োজন হবে কি না৷ ফ্রান্সও এই পথে চলার পক্ষে৷ সেদেশের অর্থমন্ত্রী ফ্রঁসোয়া বারোয়াঁ তহবিলের অঙ্ক আরও বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু তার ফল পান নি৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ'ও এমনটাই চেয়েছিল৷
তহবিলের অঙ্ক বাড়ানোর প্রশ্নে যে দরকষাকষি চলেছে, তার পেছনে কাজ করছে আরও বড় একটি প্রশ্ন৷ তা হলো, এই অর্থ আসবে কোথা থেকে? জার্মানিই ইউরো এলাকার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি৷ ৫০,০০০ কোটি ইউরোর তহবিলে জার্মানিকেই দিতে হতো প্রায় ২১,১০০ কোটি ইউরো৷ এবার সেই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়াবে ২৫,০০০ কোটিতে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ