বরিস জনসনের ‘আবদার’
২০ আগস্ট ২০১৯ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে বরিস জনসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিচ্ছেদ চুক্তির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন৷ মূলত আয়ারল্যান্ড সীমান্তে তথাকথিত ‘ব্যাকস্টপ' ব্যবস্থা নিয়েই তাঁর মূল আপত্তি৷ এতদিন তিনি সরাসরি ইইউ-র সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দরকষাকষির পথে না গিয়ে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের হুমকি দিয়ে আসছিলেন৷ ফলে তিনি আদৌ কোনো বোঝাপড়া চান কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল৷ এবার জনসন সরাসরি তাঁর দাবি জানিয়ে ইইউ-র উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখলেন৷
ইইউ দেশগুলির সরকার প্রধানদের পরিষদের সভাপতি ডোনাল্ড টুস্ক-কে লেখা চিঠিতে বরিস জনসন ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে ব্যাকস্টপ নিয়ে তাঁর সমস্যার উল্লেখ করেছেন৷ জনসন জানিয়েছেন, তাঁর পূর্বসূরী টেরেসা মে এই চুক্তি পুরোপুরি মেনে নিলেও তিনি ব্যাকস্টপ সংক্রান্ত বোঝাপড়া বাতিল করতে চান৷ এর বিকল্প হিসেবে তিনি পালটা প্রস্তাবও রেখেছেন৷ বিচ্ছেদ চুক্তির মধ্যে বিষয়টি বাতিল করে ইইউ-র সঙ্গে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক স্থির করতে নতুন চুক্তির আওতায় আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে চূড়ান্ত বোঝাপড়ার ডাক দিয়েছেন তিনি৷
নিজের এই কড়া অবস্থান তুলে ধরতে বরিস জনসন বুধবার বার্লিনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ তারপর বৃহস্পতিবার প্যারিসে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ-র সঙ্গে মিলিত হবেন৷ আগামী ৩১শে অক্টোবর ব্রেক্সিটের নির্ধারিত সময়সীমার আগে আলোচনার মাধ্যমে নতুন বিচ্ছেদ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ইইউ নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান তিনি৷ জনসন বলেছেন, চুক্তির মাধ্যমে ইইউ ত্যাগ করতে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ৷ তাঁর সরকার সেই লক্ষ্যে যাবতীয় উদ্যোগ নিচ্ছে বলে তিনি দাবি করেছেন৷
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই কূটনৈতিক উদ্যোগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় নি৷ তবে ইইউ এতকাল সাফ জানিয়ে এসেছে, যে ব্রিটেনের সঙ্গে বিচ্ছেদ চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো রদবদল সম্ভব নয়৷ তবে সে দেশের সঙ্গে ইইউ-র ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার অবকাশ আছে৷ তার আগে দুই পক্ষকেই বিচ্ছেদ চুক্তি অনুমোদন করতে হবে৷ ফলে আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশের স্থলসীমান্তে সংকট এড়াতে ও ইইউ-র অভ্যন্তরীণ বাজার অটুট রাখতে ‘ব্যাকস্টপ' ব্যবস্থা মেনে নেওয়া ছাড়া ব্রিটেনের কোনো উপায় নেই৷
জনসন-সহ কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরা এই ব্যবস্থার ঘোর বিরোধী৷ এই বোঝাপড়াকে তাঁরা ‘ফাঁদ' হিসেবে দেখছে৷ তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে ব্রিটেন অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউরোপীয় শুল্ক ইউনিয়নের মধ্যে থেকে যেতে বাধ্য হবে৷ সে ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে না৷ ইইউ অবশ্য এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে৷ বিচ্ছেদ চুক্তি অনুমোদনের মাধ্যমে ব্রেক্সিট কার্যকর হবার পর দুই পক্ষের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক স্থির করতে যে চুক্তি স্থির হবে, তার মধ্যে আইরিশ সীমান্ত নিয়ে স্থায়ী মীমাংসা করতে চায় ইইউ৷ ব্রিটেন চুক্তি ছাড়া ইইউ ত্যাগ করলে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আদৌ আলোচনা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)