ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে মাক্রোঁর প্রস্তাবে মিশ্র সাড়া
৬ মার্চ ২০১৯ব্রেক্সিট ও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে সরাসরি ইউরোপের নাগরিকদের কাছে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও তার সমাধানসূত্র তুলে ধরেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ ২৮টি সংবাদপত্রে তাঁর সেই খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নবায়ন নিশ্চিত করতে চান এবং সাধারণ মানুষের ভয়ভীতি ও সমস্যার সুরাহা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চান৷
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সেই আবেদনে সার্বিকভাবে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে সেই প্রতিক্রিয়ার মধ্যে মূলত সৌজন্যবোধ প্রকাশ পাচ্ছে৷ একই রকম আবেগের সঙ্গে ভবিষ্যতের রূপরেখা স্থির করার তাগিদ চোখে পড়ছে না৷ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপর চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচিত দেশ জার্মানির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাক্রোঁ-র অবস্থান কিছুটা দুর্বল করে দিচ্ছে৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বর্তমান কার্যকালের শেষে চ্যান্সেলর হিসেবে বিদায় নেবার ঘোষণা করায় জার্মানি আপাতত ইউরোপের নেতৃত্ব থেকে কিছুটা পিছিয়ে এসেছে৷ তাই মাক্রোঁর খোলা চিঠির প্রতিক্রিয়া হিসেবে শুধু জার্মানির এক সরকারি মুখপাত্র বয়ান দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ দিশা সম্পর্কে আন্তরিক আলোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছে জার্মান সরকার৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস-ও মাক্রোঁ-র প্রস্তাবমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন৷
তবে সরকার তেমন উৎসাহ না দেখালেও জার্মানির অনেক রাজনৈতিক নেতা মাক্রোঁ-র প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন৷
ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক মাক্রোঁ-র একটি সংস্কারের প্রস্তাব সম্পর্কে উৎসাহ দেখিয়েছেন৷ ইউরোপের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ ও সাইবার হামলা প্রতিহত করতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইউরোপীয় গণতন্ত্র সুরক্ষা এজেন্সি গড়ে তোলার যে প্রস্তাব রেখেছেন, টুস্ক তার প্রতি সমর্থন জানান৷ তাঁর মতে, বাইরের ইউরোপ-বিরোধী শক্তি ইউরোপের নির্বাচন ও ইউরোপের নেতৃত্বের প্রধান অগ্রাধিকারের উপর প্রভাব রাখবে, এমনটা মেনে নেওয়া হবে না৷
ইউরোপীয় কমিশন মনে করে, ইউরোপের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বৃহত্তর বিতর্কের ক্ষেত্রে মাক্রোঁ-র প্রস্তাবমালা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে৷ কমিশন অবশ্য দাবি করছে, যে বেশিরভাগ প্রস্তাবই হয় বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে বা হচ্ছে৷
ইউরোপপন্থি শক্তি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের উৎসাহ-উদ্দীপনার প্রতি সমর্থন দেখালেও বিশেষ করে ইউরোপের পূর্বাংশে ইউরোপ-বিরোধী শক্তি কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷ চেক প্রজাতন্ত্রের এক সংবাদ ওয়েবসাইটের সূত্র অনুযায়ী সে দেশের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বাবিস মাক্রোঁ-র প্রস্তাবগুলিকে বাস্তব পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হিসেবে সমালোচনা করেন৷
তবে ইউরোপ-বিরোধী শক্তির অন্যতম প্রধান নেতা হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান বিস্ময়করভাবে মাক্রোঁ-র অবস্থানের প্রতি নীতিগত সমর্থন জানিয়েছেন৷ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে লেখা এক ইমেল বার্তায় ওর্বান ইউরোপীয় স্তরে আন্তরিক বিতর্কের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে মাক্রোঁর খুঁটিনাটি প্রস্তাবগুলি সম্পর্কে মতপার্থক্যের উল্লেখ করেন তিনি৷
ইউরোপের অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞও নীতিগতভাবে মাক্রোঁ-র অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানালেও সেই সব প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথ সম্পর্কে অস্পষ্টতার সমালোচনা করেছেন৷ বাম ও দক্ষিণপন্থি ভাবধারা থেকে শুরু করে পরিবেশবাদী সবুজ দলগুলির কিছু অ্যাজেন্ডাও আত্মস্থ করে মাক্রোঁ যে রূপরেখা সৃষ্টি করেছেন, তার প্রতি সব দেশের সমর্থন আদায় করা কঠিন হবে বলে তাঁরা মনে করেন৷
এসবি/জেডএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)